নন্দিত কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার ও চলচ্চিত্রকার হুমায়ূন আহমেদ নির্মিত শেষ ছবি ‘ঘেঁটুপুত্র কমলা’। ছবিটির প্রিমিয়ার শো অনুষ্ঠিত হবে ৫ সেপ্টেম্বর বুধবার বিকেল ৫টায় বলাকা সিনেওয়ার্ল্ডে। আগামী ৭ সেপ্টেম্বর ছবিটি মুক্তি পাবে রাজধানীর বলাকা সিনেওয়ার্ল্ড ও বসুন্ধরা স্টার সিনেপ্লেক্সে। পরবর্তীতে সারাদেশের বিভিন্ন সিনেমা হলে ছবিটি মুক্তি পাবে।

ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিমিটেড প্রযোজিত ‌‘ঘেঁটুপুত্র কমলা’-এর প্রিমিয়ার শো বুধবার অনুষ্ঠিত হবে শুধুমাত্র আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য।

হুমায়ূন আহমেদের শেষ ছবি ‌‘ঘেঁটুপুত্র কমলা’-এর শুভ মহরতে ‘ঘেঁটুপুত্র কমলা’ ছবিটির শুভ মহরতে নন্দিত কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার ও চলচ্চিত্রকার হুমায়ূন আহমেদ ঘোষণা দিয়েছিলেন, এটাই তার পরিচালিত শেষ ছবি। তাৎক্ষণিকভাবে অনেকেই এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার জন্য তাকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন। জবাবে হুমায়ূন আহমেদে মৃদু হেসেছিলেন। তিনি তার কথা রেখেছেন। সবাইকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেছেন না ফেরার দেশে।

হুমায়ূন আহমেদকে হারানোর গাঢ় বেদনার মধ্যেও স্বস্তি এটুকুই যে, ছবিটি তিনি দেখে যেতে পেরেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে ক্যানসার চিকিৎসাধীন থাকাকালে কিছুদিনের জন্য তিনি দেশে ফিরেছিলেন। কাছের কিছু মানুষ আর সংবাদকর্মীদের নিয়ে হুমায়ূন আহমেদ গত ২৯ মে উপভোগ করেন তার আন-রিলিজড ছবি ‘ঘেঁটুপুত্র কমলা’।

সেদিন অবশ্য অনেকেই আশা করেছিলেন যে, হুমায়ূন আহমেদ সুস্থ হয়ে আবার আমাদের মধ্যে ফিরে আসবেন। আবার তিনি বানাবেন চলচ্চিত্র। কিন্তু মানুষ ভাবে এক, আর হয় আরেক।

বাংলাদেশের ভাটি অঞ্চলের এক সময়ের সমাজ বাস্তবতার বাস্তব গল্প নিয়েই ‘ঘেঁটুপুত্র কমলা’। আধুনিকতা বা শিক্ষার আলো যখন বর্ষায় বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকা ভাটি অঞ্চলের মানুষদের মাঝে পৌঁছেনি। সে সময় সেখানকার সচ্ছল ও সামর্থ্যবান পুরুষরা বিনোদন হিসেবে ‘ঘেঁটুর গান’ নিয়ে মেতে থাকতো। কমবয়সী যেসব ছেলে বিভিন্ন জায়গায় মেয়ে সেজে গান পরিবেশন করতো, তাদের একধরনের বিকৃত যৌনাচারের শিকার হতে হতো। সৌখিন মানুষের স্ত্রীরা ঘেঁটুপুত্রদের দেখতেন সতীন হিসেবে। এক সময়কার সমাজের এই অন্ধকার দিক আলোতে নিয়ে আসার চেষ্টা করেছেন হুমায়ূন আহমেদ এ ছবির মাধ্যমে।

ছবিটির নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন মামুন। এছাড়াও অন্যসব চরিত্রে অভিনয় করেছেন তারিক আনাম খান, প্রাণ রায়, তমালিকা কর্মকার, মুনমুন আহমেদ, জয়ন্ত চট্রপাধ্যায়, জুয়েল রানা, পুতুল, কুদ্দুস বয়াতি, আগুন, আবদুল্লাহ রানা, মাসুদ আখন্দ, খুদে গানরাজ প্রতিযোগিতার শিল্পী প্রাপ্তি ও প্রান্তি এবং আরও অনেকে।

‘বাজে বংশী রাজহংসী নাচে দুলিয়া দুলিয়া নাচে পেখমও মেলিয়া’- এরকম বেশ কিছু লোকজ গান এ ছবিতে ব্যবহার করেছেন হুমায়ূন আহমেদ। পাশাপাশি হুমায়ূন আহমেদের নিজের লেখা গানও আছে ছবিতে।  গানগুলোর সুর ও সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন মকসুদ জামিল মিন্টু ও এসআই টুটুল। চিত্রগ্রহণ করেছেন মাহফুজুর রহমান। ছবিটির পৃষ্ঠপোষকতায় রয়েছে ‘‌প্রাণ ঝালমুড়ি’।

কঠিন বিষয়কে সহজভাবে তুলে ধরাই ছিল হুমায়ূন আহমেদের সবচেয়ে বড় গুণ। প্রতিনিয়ত ঘটে যাওয়া সমাজের কঠিন সত্যগুলোকে তিনি নিপুন দক্ষাতায় ফুটিয়ে তুলেছেন তার রূপালী ক্যানভাসে।

মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট নিয়ে তৈরি ‘আগুনের পরশমণি’ ছবি দিয়ে ১৯৯৫ সালে চলচ্চিত্র পরিচালনা শুরু করেন হুমায়ূন আহমেদ। এরপর একে একে নির্মাণ করেন ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, ‘দুই দুয়ারী’, ‘চন্দ্রকথা’, ‘শ্যামল ছায়া’, ‘নয় নম্বর বিপদ সংকেত’, ‘আমার আছে জল’এবং ‘ঘেঁটুপুত্র কমলা’।