ক্ষুধার্ত চাঁদের সময় থেকেই বরফগুলো ধীরে ধীরে নরম হতে হতে জলের ধারায় গড়িয়ে বেড়ায়। চারদিকে ফুল-ফল, কীটপতঙ্গের উৎসব। জলাধারগুলো পূর্ণ হতে হতে ব্যাঙেদের আনাগোনা…
কিচ্ছুই বোঝা গেল না?  এগুলো হচ্ছে আমেরিকা মহাদেশে বসবাসকারী আদিবাসী, এই যেমন আনাসাজি, ইনকা, আজটেক, টুকানা—তাদের কথা। তাদের সময় গণনা চলত চাঁদের হিসাবে। নতুন চাঁদ বা পূর্ণ চাঁদ এগুলোর হিসাবেই চলত সময় গণনা। ফেব্রুয়ারিতে বরফ গলছে আর একে একে দীর্ঘ শীতনিদ্রা ছেড়ে বেরিয়ে আসছে ক্ষুধায় কাতর সব ভালুকশাবক। সে সময়ের পূর্ণ চাঁদের নাম হচ্ছে ‘ক্ষুধার্ত চাঁদ’। মার্চে প্রকৃতি ফুল ফল পোকামাকড়ে ভরে উঠছে। আর তাই মার্চের পূর্ণ চাঁদ হচ্ছে ‘পোকার চাঁদ’। এভাবে আছে নেকড়ে ব্যাঙ স্ট্রবেরি ইত্যাদি ইত্যাদি। এসব গণনা চলত তাদের কৃষিকাজ শুরু বা শেষের সময়ের হিসাবের জন্য।

প্রতি সাড়ে ২৯ দিন পর পর আমরা পূর্ণিমা দেখি। মানে পূর্ণিমার প্রায় ৩০ দিন পর আবার পূর্ণিমা। এই আগস্ট মাসের ২ তারিখ সকালে পূর্ণিমা হয়েছিল। এরপর আবার এই আজই ৩১ আগস্ট রাতেই হচ্ছে পরবর্তী পূর্ণিমা। এই যে একই মাসের মধ্যে দুটি পূর্ণিমা দেখা যাচ্ছে। বর্তমান মাসের দ্বিতীয় পূর্ণিমার চাঁদকে নীল চাঁদ বলে ডাকা হয়। না, আজ রাতের এই চাঁদটি দেখতে কিন্তু নীল নয়। তা হলে নীল চাঁদ বলে ডাকা কেন? আর কি, আহ্লাদ আর ভালোবাসায় ভাসিয়ে এই নামকরণ ‘নীল চাঁদ’।

১৯৪৬ সালের কথা। জ্যোতির্বিজ্ঞানবিষয়ক পত্রিকা স্কাই অ্যান্ড টেলিস্কোপ-এ একটি লেখায় জ্যোতির্বিজ্ঞানী জেমস হুগ ১৯৩৭ সালের পঞ্জিকা অনুসরণে ‘নীল চাঁদ’ শব্দটি ব্যবহার করেন, যা পরবর্তী সময়ে ১৯৭০ সালে ছোটদের জন্য জ্যোতির্বিজ্ঞানবিষয়ক বইয়ের মাধ্যমে এলিস এবং সিগল এই ‘নীল চাঁদ’ শব্দটিকে জনপ্রিয় করে তোলেন।


এই নীল চাঁদ কিন্তু প্রতি মাসেই দেখা যায় না। প্রতি দুই-তিন বছর পর পর এই নীল চাঁদ দেখা যায়। এই যেমন শেষবারের মতো নীল চাঁদ দেখা গেছে ২০১০ সালের ৩০ মার্চ। আবার পরবর্তী নীল চাঁদ দেখা যাবে ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই। আরে! দারুণ একটা কথা তো বলাই হয়নি। ২০২৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর তারিখের পূর্ণিমাটি নীল চাঁদ। আর সে রাতেই থাকবে পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ।