যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি এবং হুমকি উপেক্ষা করে ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘের সংস্কৃতি ও বিজ্ঞান বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কোর পূর্ণ সদস্যপদ দেওয়ার পক্ষে ভোট দিয়েছে সদস্যরা।

১৯৩ টি দেশ ইউনেস্কোর সদস্য। তবে প্যারিসে ইউনেস্কোর সদর দপ্তরে আজ (সোমবার) উপস্থিত ছিল ১৭৩ টি দেশের প্রতিনিধিরা। ১০৭ টি দেশ ফিলিস্তিনিদের পক্ষে ভোট দিয়েছে। বিপক্ষে ১৪ টি দেশ। চল্লিশটির মত দেশ ভোট দেয়নি।

ইউনেস্কো সদস্যপদের ব্যাপারে তীব্র আপত্তি ছিল আমেরিকার। সরাসরি হুমকি দিচ্ছিল ফিলিস্তিনীদের সদস্যপদ অনুমোদন করলে তারা এই সংস্থায় চাঁদা বন্ধ করে দেবে। তবে ভেটো প্রয়োগের ক্ষমতা না থাকায় এই সদস্যপদ যুক্তরাষ্ট্র আটকাতে পারেনি।

মার্কিন চাঁদা বন্ধের ঘোষণা

জাতিসংঘের সংস্কৃতি ও বিজ্ঞান বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কোকে বাৎসরিক চাঁদা দেয়া বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের এক বিবৃতিতে, মুখপাত্র ভিক্টোরিয়া ন্যুল্যান্ড জানিয়েছেন, ফিলিস্তিনকে সদস্য করার ইউনেস্কোর সিদ্ধান্তের কারণে নভেম্বর মাসে ইউনেস্কোকে তাদের যে ৬ কোটি ডলার পরিশোধ করার কথা ছিল তারা সেটি আর দেবেন না। তিনি একই সাথে এও জানা যে তার দেশ ইউনেস্কোর একটি সক্রিয় সদস্য হিসেবেই থাকতে চায়। আমেরিকা একাই ইউনেস্কোর মোট তহবিলের ২০ শতাংশ জোগায়। প্রায় সাত কোটি মার্কিন ডলারের মত।

ইউনেস্কোর সদস্যপদ কেন?

ইউনেস্কো জাতিসংঘের এমন একটি সংস্থা যার রাজনৈতিক তেমন কোন গুরুত্ব নেই বললেই চলে। প্রধানত দরিদ্র দেশগুলোতে শিক্ষা, সংস্কৃতি খাতে কিছু সাহায্য, সহযোগিতা করে তারা। বিভিন্ন দেশে ঐতিহাসিক বা ঐতিহ্যগত গুরুত্ব রয়েছে এমন কোন স্থানকে সংরক্ষণে সাহয্য করে। কিন্তু আমেরিকার তীব্র আপত্তি সত্ত্বেও কেন ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ইউনেস্কোর সদস্যপদের জন্য উদগ্রীব হয়ে পড়লো ?

পর্যবেক্ষকদের ধারণা মূলত রাজনৈতিক কারণেই ফিলিস্তিনি প্রশাসন এর সদস্যপদ চাইছে। মাসখানেক আগে তারা জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্যপদের জন্য আবেদন করেছে। তার পক্ষে সমর্থন আদায়ে যে প্রচার-প্রচারণা, তাকে শক্তিশালী করতেই ইউনেস্কোর সদস্যপদ কাজে লাগবে বলে ফিলিস্তিনিরা ভাবছে। ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিয়াদ আল মালিকি পরিস্কার বলেছেন, ইউনেস্কোর সদস্যপদ তাদেরকে জাতিসংঘের সদস্যপদ পেতে সাহায্য করবে।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্যপদের জন্য সাধারণ পরিষদে তারা কতটা সমর্থন পেতে পারে তার একটা ধারণা ফিলিস্তিনিরা পেতে চেয়েছে। ফলাফল যা হয়েছে, তাতে তারা এটাকে একটা নৈতিক বিজয় হিসেবে দেখবে। ইসরায়েলের ওপর একটা বাড়তি চাপ হিসেবেও দেখা হবে এটাকে।

যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তির কারণ কি?

তীব্র আপত্তি করছে ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিনীদের বক্তব্য পুরোনো। তাদের কথা, জাতিসংঘের সদস্যপদ ইসরায়েলী-ফিলিস্তিনি আপোষ মীমাংসার পথে শুধু বাঁধা তৈরি করবে। কাজের কাজ কিছু হবেনা, বরঞ্চ মীমাংসার পরিবেশ নষ্ট হবে। ইসরায়েলের আপত্তির কারণটা খুব সহজ। তারা কোনভাবেই চায়না, কোন আন্তর্জাতিক সংস্থায়, বিশেষ করে জাতিসংঘে, ফিলিস্তিনিরা জায়গা পাক। কারণ ইসরায়েল মনে করে এ ধরণের সদস্যপদ কার্যত ফিলিস্তিনিদের সার্বভৌমত্বের দাবির একটা স্বীকৃতি, এবং ফিলিস্তিনিরা এধরনের ফোরামে জায়গা পেলে ইসরায়েল বিরোধী প্রচার প্রচারণায় তাদের সুবিধে হবে।