সাবেক বসনীয়-সার্ব রাজনীতিক রাদোভান কারাদজিচ দ্য হেগের আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থন করে তার বক্তব্য দিতে শুরুকরেছেন। যুদ্ধাপরাধ ও মানবতা বিরোধী অপরাধের যেসব অভিযোগ তার বিরুদ্ধে আনা হয়েছে, তার জবাবে তিনি বলেন, যুদ্ধ পরিহার করার জন্য তিনি তার সাধ্যমত চেষ্টা করেছিলেন। তিনি বলেন সার্বদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, তার অনেকগুলোইসাজানো। রাদোভান কারাদজিচ বসনিয়ার গৃহযুদ্ধে সার্বদের নেতৃত্ব দেন। ইউরোপে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় নৃশংসতা ঘটে এই যুদ্ধেরসময় এবং এজন্যে রাদোভান কারাদজিচের অধীন সার্ব বাহিনীকে মূলত দায়ী করা হয়। গাঢ় নীল রঙের স্যুট আর ডোরাকাটা টাই পরিহিত ৬৭ বছর বয়েসী বসনীয় সার্ব নেতা রাদোভান কারাদজিচ খুব শান্ত গলায় আত্মপক্ষ সমর্থনে বক্তব্য দিতে শুরু করেন। আমাদের গৃহযুদ্ধের সময় যা হয়েছে তার জন্যে আমাকে অভিযুক্ত না করে সেসময় আমি যেসব ভালো কাজ করেছি সেজন্যে আমাকে পুরস্কৃত করা উচিত ” রাদোভান কারাদজিচ দীর্ঘ বিবৃতিতে ট্রাইব্যুনালের সামনে নিজেকে তিনি পরিচয় করিয়ে দেন একজন চিকিৎসক, মনোবিজ্ঞানী, মনোচিকিৎসক, বিশ্লেষক এবং একজন সাহিত্যিক হিসেবে। দশটি অভিযোগই অস্বীকার নব্বইয়ের দশকে বসনীয় যুদ্ধের সময় তার বিরুদ্ধে গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধসহ যে দশটি অভিযোগ আনা হয়েছে মি.কারাদজিচ তার বিবৃতিতে সেসব অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন যুদ্ধের সময় বরং মানুষের দুঃখ দুর্দশা যাতে কম হয় সেজন্যে তিনি চেষ্টা করেছেন। তিনি দাবি করেন যে বিজয়ের আগ মুহূর্তে তিনি বহুবার বসনীয় সার্ব সেনাবাহিনীকেথামিয়ে দিয়েছেন। ‘আমি শান্তিচুক্তি করতে চেয়েছি। আন্তর্জাতিক আইনকে সম্মান করেছি। আমাদের গৃহযুদ্ধের সময় যা হয়েছে তার জন্যে আমাকে অভিযুক্ত না করে সেসময় আমিযেসব ভালো কাজ করেছি সেজন্যে আমাকে পুরস্কৃত করা উচিত। যুদ্ধ পরিহারের জন্যে একজন মানুষের পক্ষে যা কিছু করা সম্ভব আমি তারসবকিছুই করেছি।” মি কারদজিচ দাবি করেন যুদ্ধে নিহতদের সংখ্যা তিন থেকে চারগুণ বাড়িয়ে বলা হচ্ছে। দ্য হেগে বিচার চলছে

রাতকোম্লাদিচেরও (ফাইল ফটো) বসনীয় যুদ্ধের সময় স্রেব্রেনিৎসায় যে সাত হাজারের মত মুসলিম পুরুষ ওবালককে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল, তার জন্যও মি কারদজিচকে দায়ী করা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই ঘটনাকে ধরা হয় ইউরোপে সবচে বর্বর হত্যাকাণ্ড হিসেবে। যুদ্ধ শেষে ১৩ বছর পলাতক থাকার পর ২০০৮ সালে তাকে বেলগ্রেড থেকে গ্রেফতার করা হয়। তার বিচার শুরু হয়২০০৯ সালের অক্টোবর মাসে। আদালতের সামনে মি. কারাদজিচ নিজেকে একজন সহনশীল ব্যক্তি হিসেবে উল্লেখ করে যুক্তি দেখান যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই। তার মতে, বসনীয় সার্বরা মনে করেছে তারা আক্রমণের মুখে পড়েছে এবং প্রত্যেক গোষ্ঠীর অধিকার আছে নিজেকের রক্ষা করার। যুদ্ধে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের কেউ কেউ অথবানিহতদের আত্মীয় স্বজন বসনিয়া থেকে এসেছেন দ্যা হেগের এই বিচার দেখতে। আমাদের সাথে ছিলেন ৩৭ জন মহিলা, যাদের পাঁচজন বাঁচতে পারেননি। তাদের সবাইকে ধর্ষণ করা হয়েছে ” সাতকো মুয়াজিচ, বসনীয় মুসলিম আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগের নিন্দা মি. কারদজিচকে তার কৃতকর্মের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরতে দেওয়ায় তাদের অনেকেই আদালতের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন। সাতকো মুয়াজিচ বসনীয় যুদ্ধ চলাকালে ১৯৯২ সালে দুটি বন্দীশিবিরে আটক ছিলেন। তার মধ্যে একটি ওমারসকা যা, তার ভাষায় ছিলনিকৃষ্টতম একটি শিবির। “মাত্র তিন মাসে তারা এক হাজারের মতো লোককে হত্যা করেছে। এই শিবির বন্ধ করে দেওয়ার আগ পর্যন্ত সেখানে আরও কয়েক হাজার মানুষকে বন্দি করে রাখা হয়, তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়। আমাদের অধিকাংশকেই, সম্ভবত সবাইকে নির্যাতন করা হয়েছে। আমাদের সাথে ছিলেন ৩৭ জন মহিলা, যাদের পাঁচজন বাঁচতে পারেননি। তাদের সবাইকে ধর্ষণ করা হয়েছে।” সংবাদদাতারা বলছেন, রাদোভান কারাদজিচের এই আত্মপক্ষ সমর্থনের প্রক্রিয়া দু’বছর ধরে চলতেপারে। এই আদালতে বসনীয় সার্ব সেনাবাহিনীর কমান্ডার রাতকো ম্লাদিচেরও বিচার চলছে।