প্রতারকচক্রের হাত ধরে মিসর থেকে লিবিয়ায় ঢোকার সময় ৩২ বাংলাদেশিকে আটক করা হয়েছে। বর্তমানে তারা মিসরে ডিটেনশন সেন্টারে আটক আছেন।

প্রতারকচক্রের সাথে ঢাকার কানেকশন আছে কিনা দূতাবাসের পক্ষ থেকে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে প্রতারিত ব্যক্তিদের স্বজনদের বেশ কজন অভিযোগ করেছেন, বাংলাদেশি চক্রও এর সাথে জড়িত। আটককৃতদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে মিসর। মিসরের বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মিজানুর রহমান গত বৃহস্পতিবার রাতে টেলিফোনে ৩২ বাংলাদেশি আটক হওয়ার সত্যতা স্বীকার করেছেন।

কূটনৈতিক সূত্র জানায়, ৩২ বাংলাদেশির সবাই সম্প্রতি মিসর থেকে লিবিয়ায় প্রবেশ করতে গিয়ে মিসরি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক হন। আটককৃত বাংলাদেশিরা হলেন- মাদারীপুরের মো. শাজাহান, মো. সোহাগ সরদার, মো. লালন ও কালাম, নারায়ণগঞ্জের মো. সোহাইল আহমেদ ও শাহ আলম, কুষ্টিয়ার জীবন ও মো. শাফিন, কুমিল্লার মিজানুর রহমান ও কবির, ময়মনসিংহের লুৎফর রহমান ও মো. সোহেল, সিরাজগঞ্জের মুকুল শেখ ও আল আমিন প্রামাণিক, ফেনীর আবুল কালাম ও সাইফুল সরকার, ঝিনাইদহের আশরাফ ও জালাল উদ্দিন, ঢাকার মো. সবুজ মিয়া ও আক্তার হোসেন, জামালপুরের মো. আজিজুল ইসলামও মো. এমদাদুল হক, নরসিংদীর মো. হাবিবুর রহমান, টাঙ্গাইলের মো. হেলাল উদ্দিন, বগুড়ার মো. আল আমিন, ফরিদপুরের সহিদ শেখ, গোপালগঞ্জের মো. রাকিব হোসেন, সাতক্ষীরার শহীদুল, পিরোজপুরের তাইজুল ইসলাম, রংপুরের মো. ইউসুফ আলী, লক্ষ্মীপুরের মো. সাদ্দাম হোসেন ও দিনাজপুরের আসাদুর জামান আসাদ। সূত্র আরও জানায়, তারা মিসরে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। কিন্তু তারা জানতে পারেন লিবিয়া প্রবেশ করলে যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ওখান থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমানো যাবে। সংঘাতময় লিবিয়া ছেড়ে যখন হাজার হাজার মানুষ অন্যত্র আশ্রয় নিচ্ছে ঠিক তখনই সরল বিশ্বাসে বাংলাদেশিরা প্রতারকচক্রের খপ্পরে পড়েন। প্রতারকচক্র তাদের আরো বুঝিয়েছে যে এখন লিবিয়ায় ঢুকতে পারলে সহজেই ইউরোপের যে কোনো দেশে গিয়ে ভালো বেতনের চাকরি পাওয়া যাবে।
প্রতারিত বাংলাদেশি কর্মীরা অভিযোগ করেন, ইউরোপে পাঠানোর নাম করে মধ্যস্থতাকারীরা তাদের কাছ থেকে নগদ টাকাও নিয়েছেন। ইউরোপে ভালো চাকরি পাওয়ার আশায় তারা তাদের সঞ্চয় প্রতারকদের হাতে তুলে দেন। কিন্তু সীমান্ত পাড়ি দেয়ার প্রস্তুতির সময় মিসরীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা তাদের আটক করে। এদিকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের টেলিফোনে ৩২ বাংলাদেশি আটক হওয়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, সম্প্রতি তাদের আটক করার পর যথাযথ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি দূতাবাসকে অবহিত করেছে। দূতাবাসের কনস্যুলার টিম তাদের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। বাংলাদেশিদের আটক হওয়ার বিষয়টি ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে বলেও জানান রাষ্ট্রদূত। তিনি আরও বলেন, আটক বাংলাদেশিদের দ্রুত দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে দূতাবাস কাজ করছে। মিসরীয় প্রতারকচক্রের সাথে বাংলাদেশি এজেন্টদের যোগসাজশ আছে কিনা সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান মিজানুর রহমান।