অলিম্পিক নিয়ে ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশাগুলো ক্রমেই ফিকে হয়ে আসছে। ক্রীড়া বিশ্বের সেরা এ আসরের ভরা মৌসুমে ভালো বিক্রি তো দূরে থাক, ছোট ব্যবসায়ীদের ওপর দেনার চাপ বাড়ায় নতুন সঙ্কটে পড়ছেন। এদিকে ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন লন্ডনের কারি ব্যবসায়ীরা। অলিম্পিককে সামনে রেখে দ্বিগুণ লাভের আশায় তারা প্রস্তুতি নিলেও এখন তাদের ব্যবসায় চলছে মন্দাভাব। সামনের দিনগুলোতে এ ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবেন কি না তা নিয়েও সন্দিহান ব্যবসায়ীরা। এক ট্যাক্সি ড্রাইভার রাখডাক না করেই বললেন’ ‘প্রতিদিনই যেন এখন রোববার। কিংক্রস স্টেশনে স্বাভাবিক কর্মদিবসের ব্যস্ততম সময়ে যে পরিমাণ যাত্রী পাওয়া যেত এখন পাওয়া যাচ্ছে তার এক-তৃতীয়াংশ।’

ব্যস্ততা কেমন যাচ্ছে? প্রশ্নটি করা হয়েছিল স্ট্র্যাটফোর্ডের ওয়েস্টফিল্ড শপিং সেন্টার থেকে কয়েকশ’ গজ দূরে অবস্থিত ‘ইন্ডিয়া গেট’ রেস্টুরেন্টের মালিক লুত্ফর রহমানকে। রাখডাক না করেই তিনি উত্তর দিলেন’ ‘লেপের আশায় কাঁথাও যাওয়ার উপক্রম।’ বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে অনুরোধ করলে তিনি বলেন, অলিম্পিকের উদ্বোধনী দিনে তিনি আশা করেছিলেন, অন্তত চার থেকে পাঁচ হাজার পাউন্ডের ব্যবসা করবেন তিনি। সেজন্য চিকেন, মিটসহ নানারকম খাবারের উপাদান প্রস্তুত করে রেখেছিলেন। কিন্তু সেদিন প্রত্যাশিত ব্যবসা তো দূরে থাক বরং স্বাভাবিক ব্যবসাও হয়নি। ফলে বিপুল পরিমাণ মিট, চিকেনসহ বিভিন্ন ধরনের খাবার তৈরির প্রস্তুতকৃত উপকরণ ফেলে দিতে হয়েছে। যে পরিমাণ ব্যবসা হয়েছে তার চেয়ে বেশি মূল্যের খাবার ফেলতে হয়েছে। আশা করা হয়েছিল, অলিম্পিকের সময়ের ব্যবসা থেকে চলমান অনেক আর্থিক প্রতিশ্রুতির সমাধান করবেন। হয়েছে এখন উল্টো। আর্থিক সঙ্কট কাটানোর প্রত্যাশায় অলিম্পিক উপলক্ষে গড়ে তুলেছিলেন বিভিন্ন পণ্যের বিপুল স্টক। এ স্টক এখন তার জন্য রীতিমতো দেনার দায়ে ফেলেছে। তিনি বলেন, অলিম্পিকের জন্য যে পরিমাণ স্টক গড়ে তুলেছিলেন বর্তমান ধারায় ব্যবসা চলতে থাকলে তা শেষ করতে কতদিন লাগবে তা অনিশ্চিত। অতীত এবং বর্তমানে ডেলিভারির অনুপাত কেমন জিজ্ঞাসা করা হলে উত্তরে যা বলেছেন তাতে রীতিমতো ব্যবসার নিকট ভবিষ্যতের নেতিবাচক ভাবনাগুলো ফুটে উঠে। লুত্ফর রহমান বলেন, নিরাপত্তাজনিত নানারকম হয়রানি এড়াতে কয়েকটি এলাকায় ডেলিভারি বন্ধ করে দিয়েছেন। কঠোর নিরাপত্তাকে তিনি বাড়াবাড়ি হিসেবেই দেখছেন। এমন মনে করার কারণ কী? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি একটি উদাহরণ দেন। একজন ক্রেতার দেওয়া ডেলিভারির অর্ডার সরবরাহের জন্য তার ড্রাইভার গিয়েছিলেন স্ট্র্যাটফোর্ড হাই স্ট্রিটে। সেখানে নিরাপত্তা তল্লাশি এমনভাবে করা হয়েছে যা রীতিমতো ড্রাইভারকে ভয় পাইয়ে দিয়েছে। তার ভাষায়, তল্লাশি করতে গিয়ে গাড়ির কার্পেটগুলো পর্যন্ত উল্টে-পাল্টে দেখা হয়েছে। ফলে খাবার সরবরাহ করতে দেরি হওয়ার কাস্টমার খুবই হতাশ হয়েছেন।

এদিকে স্কাই নিউজের অনলাইনে লন্ডনকে একটি ভুতুড়ে নগরী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তাদের রিপোর্টের সারসংক্ষেপ অনুসারে অলিম্পিক লন্ডনের পর্যটন ব্যবসার জন্য একটি কুঠারাঘাত। যার কারণে অলিম্পিকের ব্যবসা দিয়ে ব্রিটেনের অর্থমন্দা থেকে উত্তরণের যে পরিকল্পনা রয়েছে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে।

অন্যদিকে অলিম্পিক শুরু অনেক আগ থেকেই ব্রিকলিনকে কারি ক্যাপিটাল হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন টাওয়ার হেমলেটসের মেয়র লুত্ফর রহমান। কিন্তু ঘোষণা অনুযায়ী তেমন কোনো কাজ হয়নি কারি ক্যাপিটালকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার। আর সে কারণেই অলিম্পিক শুরু হয়ে যাওয়ার সাত-আট দিন পেরিয়ে গেলেও ব্রিকলিনের কারি শপগুলো একেবারেই দর্শনার্থী এবং ক্রেতাশূন্য। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে দ্বিগুণ বিনিয়োগ আর জনবল নিয়োগ করেও এখন ক্ষতি গুনতে হচ্ছে দোকান মালিকদের। সামনে আরও কিছুদিন অলিম্পিক আয়োজন থাকলেও আর ভরসা পাচ্ছেন না তারা। কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার বাড়াবাড়ি অলিম্পিক কার লেন আর পার্কিংয়ের কারণেও দর্শনার্থীরা আসছেন না কারি শপগুলোতে।