জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার প্রধান বলেছেন, সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধের আশঙ্কা রয়েছে। সিরিয়ার জনগণকে রক্ষার জন্য তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানিয়েছেন। এদিকে সিরিয়ার রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত ব্যাংক কমার্শিয়াল ব্যাংক অফ সিরিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। গত বৃহস্পতিবার ব্রাসেলসে ইইউ নেতারা সিরিয়ার জাতীয় ব্যাংকে তাদের নিষেধাজ্ঞা তালিকাভুক্ত করতে সম্মত হন।
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদবিরোধী বিক্ষোভের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সহিংসতায় নিহতের সংখ্যা ৩ হাজারে পেঁৗছেছে বলে উল্লেখ করে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার প্রধান সিরিয়ার জনগণকে রক্ষার জন্য শীঘ্রই পদক্ষেপ নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার সদর দফতরে সংস্থার হাইকমিশনার নাভি পিল্লাই নির্মম হত্যাকা- নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, মার্চে শুরু হওয়া সহিংসতায় এ পর্যন্ত অন্তত ১৮৭ শিশুসহ নিহতের সংখ্যা ৩ হাজার ছাড়িয়েছে। গত ১০ দিনেই ১০০ জনের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানান তিনি। এছাড়াও হাজার হাজার মানুষকে আটক করা হয়েছে। অনেককে বাধ্যতামূলকভাবে নিখোঁজ করা হয়েছে এবং অত্যাচার চালানো হয়েছে অনেকের ওপর।
নাভি পিল্লাই বলেন, সিরিয়ার সরকার তার জনগণকে রক্ষা করতে সুস্পষ্টভাবে ব্যর্থ হয়েছে। এছাড়াও আন্তর্জাতিক তদন্তের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সহায়তা করার আহ্বানও উপেক্ষা করেছে। পিল্লাই বলেন, সিরিয়ার সহিংসতা পুরোপুরি গৃহযুদ্ধে রূপান্তরিত হওয়ার আগেই আন্তর্জাতিক সম্পদ্রায়ের অবশ্যই যৌথভাবে ও সুস্পষ্ট পদ্ধতিতে প্রতিরক্ষামূলক পদক্ষেপ নিতে হবে।
এদিকে ইইউ’র পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান ক্যাথেরিন অ্যাস্টন বলেন, সিরিয়ার নিজস্ব জনগণের ওপর তার মর্মান্তিক ও পাশবিক নির্যাতনের প্রত্যক্ষ পরিণতি হিসেবে আজকের (বৃহস্পতিবার) সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গত আগস্ট মাসে যুক্তরাষ্ট্র কমার্শিয়াল ব্যাংক অফ সিরিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ইইউ এক বিবৃতিতে জানায়, ২৭ দেশের জোটটি নিশ্চিত করতে চায়, বৈধ বাণিজ্য একটু হলেও প্রভাবিত হবে। অ্যাস্টন বলেন, আমাদের নিষেধাজ্ঞা সিরিয়ার জনগণের ওপর নয়, আর্থিক রাজস্ব এবং দমন-পীড়ন চালানোর জন্য সহায়তা বাধাগ্রস্ত করার জন্যই এই নিষেধাজ্ঞা।
কমার্শিয়াল ব্যাংক অফ সিরিয়ার ব্যাংকাররা জানান, এ বছরের শুরুতে ১৭০০ কোটি ডলার বিদেশি রিজার্ভ ছিল ব্যাংকের।
আভাজ গ্লোবাল রাইটস গ্রুপের পরিচালক এলিস জে ইইউর পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ইউরোপে আসাদের ব্যবসাকে কার্যকরভাবে বাধাগ্রস্ত করবে এবং সন্ত্রাসী শাসনামলের দমন-পীড়নের ব্যয়কে কমিয়ে দিবে। সিরিয়ায় নতুন করে সংঘর্ষে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যসহ ২০ জন নিহত হয়েছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস গত বৃহস্পতিবার জানায়, উত্তরাঞ্চলের ইদলিব প্রদেশের বানাশে ১০ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। বানাশে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ অনুগত সৈন্যরা শহরে হামলা চালালে এবং বন্দুকধারী ও সেনাবাহিনীর পক্ষ ত্যাগকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ চলাকালে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। মানবাধিকার এ সংস্থাটি আরও জানায়, ইদলিব প্রদেশের পূর্বাঞ্চলের তাউম শহরেও সেনাবাহিনী হামলা চালিয়েছে। সংস্থাটি জানায়, অসংখ্য বাড়ি আংশিকভাবে ধসে পড়েছে এবং জনগণ আহত হয়েছে। শহরের বিভিন্ন অংশে ভারী মেশিনগান এবং বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাওয়া গেছে ও রাস্তা দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স দ্রুতগতিতে চলতে দেখা গেছে। সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানায়, দক্ষিণাঞ্চলীয় দেরা প্রদেশে ৬ সৈন্য নিহত হয়েছে এবং হারা শহরে এক সংঘর্ষে একজন বেসামরিক নাগরিক ও পক্ষত্যাগী দুই সেনাসদস্য নিহত হয়েছে। দেরায় ৬ মাস পূর্বে প্রথম আসাদবিরোধী আন্দোলনের সূত্রপাত হয়।