বার বার প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হওয়ার পরও সরকারি-বেসরকারি সংস্থার ত্রাণ পৌঁছায় না হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়নের ১৩ হাজার পরিবারের কাছে। দ্বীপবাসীদের অভিযোগ, বিগত বছরগুলোতে যে কয়টি প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস তাদের ওপর দিয়ে গেছে তার সবগুলোতে এখানকার লোকজন ব্যাপকভাবেক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু কোনো ধরনের সাহায্য পাননি তারা। সাম্প্রতিক আকস্মিক ঘূর্ণিঝড়ে ১৬ জনের প্রাণহানিসহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় নোয়াখালী জেলার দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে নিঝুম দ্বীপে। স্থানীয় প্রশাসনের হিসাব মতে, নিঝুম দ্বীপে ৩শ’ পরিবারের বসতবাড়ি লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেআরো কয়েকশ পরিবার। কয়েকশ গবাদিপশুসহ ফসলের ক্ষতি হয়েছে অপরিমেয়। ঘূর্ণিঝড়ের পরে নিঝুম দ্বীপে সরেজমিনে ঘুরে এলাকাবাসীর কাছ থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। তবে কোনোসাহায্য না পাওয়ার অভিযোগ কেউ কেউ প্রকাশ্যে বললেও অধিকাংশ মানুষই মুখ খুলতে চায়নি। নিঝুম দ্বীপের অধিকাংশ বাসিন্দা ভূমিহীনজেলে ও কৃষক। গত বুধবার দিবাগত রাতের আকস্মিক ঘূর্ণিঝড়ে নামারবাজার সমুদ্র উপকূলের বাসিন্দা আলেয়া বেগমের মাথা গোঁজার একমাত্র অবলম্বন সম্পূর্ণবিধ্বস্ত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের তিন দিন পরও তিনি কোনো সাহায্য পাননি। মাথা গোঁজার একমাত্র ঠাঁই ঘূর্ণিঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। ছেলেমেয়ে নিয়ে খোলা আকাশের নিচে বাস করছেন। ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সরকারেত্তন সাহাইয্য আইছেহুনছি। আমরা তো কিছু হাইলাম না। কেউ দেখতে পর্যন্ত আইলো না। ঘরবাড়ি পড়ে মানুষ মরলেও এহানে কেউআহে না- আক্ষেপ করে বলেন তিনি। নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য বাংলানিউজকে বলেন, “নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়নটি হাতিয়া উপজেলাধীন হলেও সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন। ফলে এখানকার হতদরিদ্র মানুষগুলো সব ধরনে সুবিধা থেকে বঞ্চিত।” এখানে অনেক এলাকাতেই যান না প্রতিনিধিরা। বুধবারেরঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডব বর্ণনাকরে তিনি বলেন, “ঘূর্ণিঝড়েএখানকার কয়েকশ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু সরকারি কর্মকর্তা তো দূরের কথা স্থানীয় চেয়ারম্যানও এলাকায় আসেননি।” স্থানীয়রা বাংলানিউজের কাছে ‍অভিযোগ করে বলেন, “প্রতিবারই ঘূর্ণিঝড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হন জেলেরা। ঝড়ে নৌকা হারালে তাদের দু‘বেলাখাবার জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হয়। তাছাড়া, দাদন নিয়ে জাল ফেলে কম দামে মাছবিক্রি করে সারা জীবন ঠকছেন তারা।” জেলেরা জানান, টাকার অভাবেনৌকা আর জাল কেনার সাধ্য তাদের নেই। তাই দাদন নিয়ে নৌকা-জাল কিনতে হয়। আর কম দামে মাছ বিক্রি করতে হয় দাদনদারদেরই কাছে। নামারচর আদর্শ গ্রামের বাসিন্দা গৃহিনী আয়শা বেগমের ঘরের চালা ঘূর্ণিঝড়ে উড়ে গেছে। এরপর থেকে কোনো রকমে দিনাতিপাত করছেন। দরিদ্র জেলে স্বামীর পক্ষে ভেঙে যাওয়া ঘর সংস্কার করা সম্ভব হবে না। এ ঘর কখন তুলতে পারবেনতা তিনি জানেন না। এলাকার শতশত ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের সহযোগিতা না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় চেয়ারম্যান মেহরাজ উদ্দিন বি এন এন টুয়েন্টিফোর ডট কম কে বলেন, “ঘূর্ণিঝড়ের আগে থেকেই এ অঞ্চলের বাইরে থাকায় ক্ষতিগ্রস্তদের দেখতে যেতে পারিনি। এলাকায় গিয়ে খোঁজ খবর নেবো।” তবে সরকার বা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগদ কোনো অর্থ বরাদ্দ পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি।