একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় একটি ঈদের পরদিন সকালে মুক্তিযুদ্ধবিরোধীরা নিহত বেশ কয়েক জন বাঙালিকে গণকবর দেয় বলে ট্রাইব্যুনালে এক সাক্ষী বলেছেন।
বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযমের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের দ্বাদশ সাক্ষী হিসেবে এ কথা বলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সোনা মিয়া।
আশির কোটায় পা রাখা এই কৃষক বলেন, “রাজাকার ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধীরা ঈদের পরদিন সকালে গণকবর দেয়।”
১৯৭১ সালে জামায়াতে ইসলামীর আমিরের দায়িত্বে থাকা গোলাম আযম কুখ্যাত শান্তি কমিটি এবং মুক্তিযোদ্ধা হত্যায় সশস্ত্র রাজাকার, আল-বদর ও আল-শামসের মতো বাহিনী গড়ে তুলতে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন বলেন অভিযোগ রয়েছে।
একাত্তরে হত্যায় প্ররোচনা, উস্কানি ও ষড়যন্ত্রসহ মানবতাবিরোধী কয়েকটি অপরাধে গত ১৩ মে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে ট্রাইব্যুনাল।
মূলত জামায়াতে ইসলামী ও তার ছাত্র শাখা ইসলামী ছাত্রসংঘের সদস্য নিয়ে আল বদর, আল শামসের মতো সংগঠনগুলো গড়ে তোলা হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার বাসিন্দা সোনা মিয়া ট্রাইব্যুনালে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় ওই ঈদের রাতে তিনি গুলির শব্দ শোনেন।
পরদিন সকালে যেদিক থেকে গুলির শব্দ আসে সেদিকে গিয়ে তিনি দেখতে পান রাজাকাররা মৃতদেহ দাফন করছে।
‘পড়ে থাকা ওই সব ব্যক্তির মধ্যে একজনের হাত নড়ছিল’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওই ব্যক্তিকে কবর না দেয়ার জন্য তিনি তাদের অনুরোধ করেন। আহত ওই ব্যক্তিকে তিনি একটি সড়কের পাশে নিয়ে যান এবং পরে সেখান থেকে সে চলে যায়।
এর আগে প্রসিকিউশনের এক সাক্ষী বলেন, একাত্তরে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলে বন্দি ছিলেন। এক ঈদের দিন সন্ধ্যায় ৪০ জনকে পাকিস্তানি সেনাদের কাছে নেয়া হয়। তাদের মধ্যে তিনিও ছিলেন।
শফিউদ্দিন নামের ওই সাক্ষী বলেন, পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার সাদুল্লা তাকে জেলে ফেরত পাঠাতে সেনাদের নির্র্দেশ দেন এবং তাকে আবার কারাগারে পাঠানো হয়।
তিনি আদালতে বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্বাধীন হওয়ার বেশ কয়েক মাস পর ওই ৪০ জনের তালিকায় থাকা চিনু মিয়া নামের একজনের সঙ্গে ঢাকায় তার দেখা হয়।
তিনি বলেন, ওই ৪০ জনের মধ্যে চিনু মিয়াই ছিলেন একমাত্র ব্যক্তি যিনি সেদিনের গণহত্যার মধ্যে বেঁচে যান।
হলমার্ক কেলেঙ্কারির নাটের গুরু বহাল তবিয়তে স্বপদে
সাইদ আরমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
ঢাকা: ব্যাংকিং খাতের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারির মূলহোতা তিনি। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট সবার অভিযোগের আঙুলও তার দিকেই। তবুও তিনি আছেন বহাল তবিয়তে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত তিন বছরে সোনালী ব্যাংকে যত বড় ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি ঘটেছে এই ব্যক্তির ইন্ধনে ও মদতে হয়েছে। আর এসব করে তিনি হাতিয়ে নিয়েছেন অবৈধ টাকার পাহাড়। তিনি আর কেউ নন, হলমার্ক ঋণ কেলেঙ্কারির নায়ক অভিযুক্ত পর্ষদের চেয়ারম্যান কাজী বাহারুল ইসলাম।
কোন অদৃশ্য শক্তির বলে সরকার এখনো তাকে বহাল রেখেছে তা কারো কাছেই স্পষ্ট নয়। তবে এ কারণে সরকারের ভাবমূর্তি যে ক্ষুন্ন হচ্ছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
সূত্রমতে, অভিযোগ ওঠার পর অন্য পরিচালক যাদের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, তাদের কাউকে সরকার আর সোনালী ব্যাংকের পর্ষদে নিয়োগ দেয়নি। কিন্তু মূল হোতা কাজী বাহারুলকে সরকার পুনরায় নিয়োগ দিয়েছে।
জানা গেছে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা এর পেছনে রয়েছেন। ওই কর্মকর্তা সরকারকে ভুল বুঝিয়ে কাজী বাহারুলের পক্ষে কাজ করে যাচ্ছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানান, হলমার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনার পর বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থমন্ত্রীকে যে চিঠি দিয়েছে তাতে পর্ষদের ব্যর্থতার কথা বলা হয়েছে। আর সেই পর্ষদের চেয়ারম্যানকে আবার সরকার পুনরায় চেয়ারম্যান নিয়োগ দিলো। এতে করে সরকারের যে কি পরিমাণ ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে তা বলবার নয়। তবে এ বিভাগের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা এটি করছেন। আর সরকার বুঝতে পারছে না এতে তাদের ক্ষতি হচ্ছে।
সোনালী ব্যাংকের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানান, সব ঘটনার নাটের গুরু হচ্ছেন এই চেয়ারম্যান। যত অনিয়ম হয়েছে সব তিনি নিজে করেছেন। অন্যদের দিয়ে করিয়েছেন। এতে তিনি আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে। কিন্তু কাগজপত্রে কোনো প্রমাণ রাখেন নি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সোনালী ব্যাংকের অনিয়ম খুব কৌশলে করতেন কাজী বাহারুল ইসলাম। দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতা রয়েছেন তার ব্যাংকিং করার। তাই কিভাবে নিজে না জড়িয়ে কাজ করা যায় সে কৌশল তার ভালো জানা। তিনি এর আগে ৫টি রাষ্ট্রীয় খাতের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে প্রধান নির্বাহী বা ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ফলে সোনালী ব্যাংকের গত তিন বছরের কোনো অনিয়মই তার অজানা নয়। তিনি হয় প্রত্যক্ষভাবে করিয়েছেন, অথবা আর্থিক সুবিধা নিয়ে তা ছেড়ে দিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সোনালী ব্যাংকের সাবেক একজন পরিচালক বাংলানিউজকে জানান, কাজী বাহারুল ইসলাম প্রকাশ্যে বোর্ড সভায় বলতেন, আমি বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশ মতো কেন চলব। ড. আতিউর কি আমার চেয়ে ভালো ব্যাংকিং বোঝে? আমি আমার মতো ব্যাংক চালাব।
তাই ব্যাংক পরিচালনায় তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশও মানতেন না।
তিনি আরো বলেন, হলমার্ককে দফায় দফায় ঋণ সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরে এলে গভর্নর ড. আতিউর রহমান কাজী বাহারুল ইসলামকে একাধিকবার হলমার্কের ব্যাপারে খোঁজ নিতে বলেন। কিন্তু তিনি তা শোনেন নি। তিনি মিথ্যা তথ্য দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে জানিয়ে দিয়েছেন, নিয়ম মেনেই সবকিছু করা হচ্ছে।
একই পর্ষদে দায়িত্ব পালন করা ওই পরিচালক আরো বলেন, হলমার্কসহ অখ্যাত ৫টি প্রতিষ্ঠানকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার দায় পর্ষদের চেয়ারম্যানকে নিতে হবে। তিনি এখান থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের জিজ্ঞাসাবাদে তা বেরিয়ে আসবে। শুধু তাই নয়, ঋণের আবেদন করার পরও তিনি প্রতিষ্ঠিত অনেক স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেননি। আমরা অনেক সময় বললেও তিনি তাতে সই করতেন না। আমাদের কথায় গুরুত্ব দিতেন না। গোপনে ঘুষ দাবি করেছেন এমন অভিযোগও রয়েছে। আর তার পক্ষে বা স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোনো ঋণ প্রস্তাব এলে অধিকাংশ সদস্যের বিরোধিতার পরও পাস করাতে বাধ্য করতেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, “কাজী বাহারুলের স্বেচ্ছাচারিতার কারণেই স্মরণকালের ভয়াবহ জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পর্ষদের এমন অনিয়মের ফলে ব্যাংকের খেলাপী ঋণের পরিমাণ সম্প্রতি বেড়ে যায় বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কাজী বাহারুল ইসলাম সোনালী ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হওয়ার পর থেকেই তার বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, স্বজনপ্রীতি, ঋণ বিতরণে অনিময়, ঘুষ বাণিজ্য এবং নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠতে থাকে। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠিও দেয় কয়েকবার। কিন্তু সেসবে কোনো তোয়াক্কা করেন নি তিনি।
তথ্যমতে, এতো বড় কেলেংকারির পরও সোনালী ব্যাংক এখনো চলছে তার নির্দেশনাতেই। তিনি পেছন থেকে সব কিছু করে যাচ্ছেন। তবে দফায় দফায় বৈঠক করছেন সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিদের সঙ্গে।
এ বিষয়ে কাজী বাহারুল ইসলামের বক্তব্য নিতে দু’দিন সোনালী ব্যাংকে গিয়েও তার সঙ্গে দেখা করা সম্ভব হয় নি।