প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার উদ্দেশে বলেন. তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করছেন। আবারও তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাইছেন। এ তত্ত্বাবধায়ক সরকার এলে আবারও যে ক্ষমতায় বসাবে, তার গ্যারান্টি কোথায়? আবারও যে জেলে যেতে হবে না, তার নিশ্চয়তা কী?
রোববার গাজীপুরের শ্রীপুরে মাওনা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে স্থানীয় উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। ফখরুদ্দীন আহমদের সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতা শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে দুর্নতির মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়।
বিরোধী দলের সিলেট অভিমুখে রোডমার্চের কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোডমার্চ নয়, এটি ছিল ‘রোড শো’। দুই হাজার দামি গাড়ির এই প্রদর্শনীর অর্থের উৎস কোথায়? ওই কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া প্রতিটি গাড়ির মালিকের অর্থের উৎস খুঁজে বের করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিরোধীদলীয় নেতা দুর্নীতি ও লুটপাট করবেন, এতিমদের টাকা মেরে খাবেন, অথচ মামলা ও বিচার হবে না_ এটা কোন ধরনের আবদার? এ আবদার দেশের মানুষ মেনে নেবে না। এ দেশে দুর্নীতি, লুটপাট, সন্ত্রাস, হত্যা ও জঙ্গিবাদ সৃষ্টিকারীদের বিচার অবশ্যই হবে। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্ত্রী খালেদা জিয়া এখনো ‘বিধবা ভাতা’ নিচ্ছেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর ছেঁড়া গেঞ্জি আর ভাঙা স্যুটকেস দেখিয়ে তিনি বিধবা ভাতা নিয়েছেন। দুই পুত্রের পড়াশোনার জন্য সরকারি ভাতা নিয়েছেন। বিরোধীদলীয় নেতা এখনো বিধবা ভাতা নিচ্ছেন, আমরা ক্ষমতায় এসেও তা বন্ধ করিনি।
বিরোধী দলের রোডমার্চ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিরোধীদলীয় নেতার রোডমার্চের অর্থ তো ‘পায়ে হাঁটা’। কথায় আছে ঘোড়ায় চড়িয়া মর্দ হাঁটিয়া চলিলো। উনি গাড়িতে চড়িয়া পায়ে হাঁটিলেন। তিনি বলেন, এই যে এত দামি গাড়ি ব্যবহার করলেন এর অর্থ কোথায় পেলেন তিনি? এটা জনগণের টাকা। তারা কেবল জনগণের টাকাই নয়, বিদেশ থেকে এতিমদের নামে টাকা এনে তাও লুটপাট করে খেয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি ইয়াজউদ্দিন-ফখরুদ্দীন-মইনউদ্দিনদের দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বানালেও এখন ফখরুদ্দীন-মঈনউদ্দিনের বিরুদ্ধে বলেন। তবে তার ‘ইয়েস উদ্দিন’ (ইয়াজউদ্দিনের) বিরুদ্ধে কিছু বলেন না। এখন তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাইছেন, ফখরুদ্দীন-মইনউদ্দিন তো তাকে ক্ষমতায় বসাননি। বরং জেলে পাঠিয়েছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার এলে ক্ষমতার বদলে আবারও জেলে তো পাঠাতে পারে। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের পাঁচটি আসনেই আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের ভোট দিয়ে বিজয়ী করায় সমাবেশে স্থানীয় জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন দলটির সভানেত্রী।
মহাজোট সরকারের প্রায় তিন বছরে শ্রীপুরে প্রথমবারের মতো আয়োজিত প্রধানমন্ত্রীর এ জনসভাকে ঘিরে গোটা এলাকায় গতকাল উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী বিকেলে জনসভাস্থলে পেঁৗছানোর আগেই জনতার ভিড় মাওনা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ ছাড়িয়ে আশপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। এর আগে, প্রধানমন্ত্রী দুপুরে মাওনায় দেশের সবচেয়ে বড় ইংরেজি মাধ্যমের আবাসিক স্কুল এবং ক্রিড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্লেজ হারবার স্কুল অ্যান্ড স্পোর্টস একাডেমী উদ্বোধন করেন। প্রধানমন্ত্রী এ সময় বলেন, খেলাধূলায় জড়িত থাকলে শিশুরা সুন্দরভাবে গড়ে উঠবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে খেলাধুলা ও চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন প্রধানমন্ত্রী। বিশ্বজুড়ে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়তে থাকলেও সরকার দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে কম দামে খাদ্য সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের পাশের দেশেই ৭০/৮০ টাকা কেজিতে চাল বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু, আমরা বেশি দামে চাল কিনে, কম দামে তা সাধারণ মানুষের মধ্যে বিক্রি করছি।
মহাজোট সরকারের অন্যদের মধ্যে স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, গাজীপুর-৩ আসনের সাংসদ রহমত আলী, গাজীপুর-৫ আসনের সাংসদ মেহের আফরোজ চুমকী, গাজীপুর-২ আসনের সাংসদ জাহিদ আহসান রাসেল, গাজীপুর-১ আসনের সাংসদ আ ক ম মোজাম্মেল হক, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাংসদ জাহানারা বেগম, আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আখতারুজ্জামান, শ্রীপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন সবুজ, ভাইস চেয়ারম্যান লুৎফুর নাহার, গাজীপুরের মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজমতউল্লাহ খান সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন।