নতুন রাজনৈতিক দলের ঘোষণা দিলেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন স্থায়ী কমিটির সদস্য, সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। দলের নাম ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট’ (বিএনএফ)। আর এর আহ্বায়ক হলেন হুদা নিজেই। দলের কো-অর্ডিনেটর আবুল কালাম আজাদ। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট’-এর ব্যানারে ১৯৭৮ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করেন। সেই ফ্রন্টের নামেই হুদা দল গঠনের ঘোষণা দিলেন। হুদা বললেন, বিএনপি জিয়ার ১৯ দফা বাস্তবায়ন করেনি। আমরা তা বাস্তবায়ন করব। শিগগিরই হুদা নির্বাচন কমিশনে তার দলের রেজিস্ট্রেশন করবেন। দলের নতুন কমিটির ঘোষণা আসবে শিগগিরই। ফ্রন্টের রাজনীতি হবে গঠনমূলক। তারা জ্বালাও-পোড়াওয়ের রাজনীতি করবেন না। গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে হোটেল ইমপেরিয়ালে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ ঘোষণা দেন ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। সংবাদ সম্মেলনের ব্যানারে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ছবি শোভা পাচ্ছিল।
সংবাদ সম্মেলনে নাজমুল হুদা, আবুল কালাম আজাদ ছাড়াও শুধু হুদার নির্বাচনী এলাকা দোহারের স্থানীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। নানা গুঞ্জন থাকলেও অন্য কাউকে সেখানে দেখা যায়নি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে নাজমুল হুদা ফ্রন্টের ২১ দফা লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পড়ে শোনান। ফ্রন্টের ১ নম্বর উদ্দেশ্যে বলা হয়, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এই ফ্রন্টের ব্যানারে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করেছিলেন। এরপর বিএনপি গঠন করা হলে ফ্রন্ট বিলুপ্ত করা হয়। এত বছর পর জিয়াউর রহমানের ফ্রন্ট নতুনভাবে যাত্রা শুরু করল। লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য দিক হল, রাজপথে জ্বালাও-পোড়াও রাজনীতি পরিহার করা। বিএনপি, আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা সৃষ্টিতে এবং দেশ পরিচালনায় ব্যর্থ হয়েছে। তাই তিনি (হুদা) নতুন দল ঘোষণার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছেন। হুদা বলেন, জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও দলীয় সরকার বিতর্ক সম্পূর্ণ অবান্তর। ভোটার তালিকা প্রণয়ন এবং হালনাগাদ, নির্বাচনে ভোট প্রদান বা গ্রহণ পদ্ধতি, ভোট গণনা পদ্ধতি ও নির্বাচনের ফল ঘোষণা প্রক্রিয়ায় যদি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আনা যায় তাহলে সর্বদলীয়ভাবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন করা দরকার। দেশকে হানাহানি, পাল্টাপাল্টি, সংঘাত ও প্রতিহিংসার রাজনীতি থেকে মুক্ত করতে চায় এই ফ্রন্ট। শিক্ষক রাজনীতি উত্পাটন এবং ছাত্ররাজনীতি শিক্ষাঙ্গনেই সীমাবদ্ধ রাখা দলের লক্ষ্য। এছাড়া প্রশাসনকে দলীয়মুক্ত রাখা, দুর্নীতি বন্ধ করা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূল করা, পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন করা, প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সুনিশ্চিত করা, দেশের তেল, গ্যাস, কয়লাসহ সব প্রাকৃতিক সম্পদ দেশ ও জনগণের স্বার্থে কাজে লাগানো দলের লক্ষ্য ও আদর্শ।
এক প্রশ্নের জবাবে হুদা বলেন, শিগগিরই তিনি নির্বাচন কমিশনে যোগাযোগ করবেন তার দলের রেজিস্ট্রেশনের জন্য। ‘ইতোপূর্বে দল থেকে বেরিয়ে নতুন দল করে কেউ সফল হননি’-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, অতীতে মন্ত্রী হিসেবে আমি কখনও ব্যর্থ হইনি। আমি সফলভাবে মন্ত্রণালয় পরিচালনা করেছি। তিনি বলেন, আগামীতেও আমি সফল হবো। ফ্রন্টে কারা যোগ দিচ্ছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে হুদা বলেন, আমি উদ্যোক্তা-যারা আগ্রহী হয়ে যোগাযোগ করবেন তাদেরকে এর পতাকাতলে জড়ো করা হবে। তার ফ্রন্ট তৃণমূল থেকে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি করবে। এটি কিংস পার্টি হবে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কোনো বিশেষ মহলের সঙ্গে আমার যোগাযোগ নেই। আমি নিজেই নিজের যোগ্যতার মাধ্যমে ফ্রন্ট গড়ে তুলব।
দলত গঠন হল, এখন বিএনপির সঙ্গেই জোটবদ্ধ হবেন কি? এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির সাবেক এই নেতা বলেন, বিএনপি একটি স্বাবলম্বী দল। বিএনপির কারও সঙ্গে কোয়ালিশন করার প্রয়োজন নেই। আমরা চলব আমাদের মতো।
বিএনপিতে নাজমুল হুদা প্রথমবার বিতর্কিত হন ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা দিয়ে। সেবার মন্ত্রিত্ব থেকে সরে যেতে হয় তাকে। দ্বিতীয়বার ২০০১-০৬ মেয়াদে মন্ত্রিত্বে থাকলেও ২০১০ সালের ২৩ জুন তাকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়। ‘ভুল স্বীকার’ করে খালেদা জিয়ার কাছে আবেদন করার পর ২০১১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর আবার দলের সদস্যপদ ফিরে পান তিনি। পরে গত ৬ জুন সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি ত্যাগের ঘোষণা দেন সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী নাজমুল হুদা।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ফ্রন্টে ২১ সদস্যের একটি স্টিয়ারিং কমিটি থাকবে এবং ১০১ সদস্যের একটি জাতীয় কমিটি থাকবে, যা ৫১ সদস্যের ৩শ আসনের ভিত্তিতে নির্বাচিত হবে। মাঠ পর্যায়ে দলের কমিটি হবে ভোটকেন্দ্রভিত্তিক।
ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা বলেন, আওয়ামী লীগ আইনের শাসনের নামে দলীয় শাসন কায়েম করেছে। বিরোধী দল হিসেবে বিএনপিও দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা ইনশাল্লাহ কোনো ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হবো না।