বরাক নদীর উপর টিপাইমুখ জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের নথি বাংলাদেশের হাতে তুলে দিয়েছে নয়া দিল্লি। আজ দু’দেশের মধ্যে যৌথ নদী কমিশনের অধীনে টিপাইমুখ সংক্রান্ত বৈঠকে এই প্রকল্প সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য ঢাকার হাতে তুলে দেয়া হয়। প্রকল্প নিয়ে বাংলাদেশের মনে যাতে কোনো সংশয় না থাকে, তা নিশ্চিত করতে এ পদক্ষেপ নেয় ভারত। এ ছাড়া নয়া দিল্লির পক্ষ থেকে ঢাকাকে জানিয়ে দেয়া হয়, চাইলে তারাও এই প্রকল্পে লগ্নি করতে পারে। সে ক্ষেত্রে যৌথ অংশীদারিত্বে প্রকল্পটি তৈরি করা হবে।
আজ মঙ্গলবার ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকার অনলাইনে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, টিপাইমুখ জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্ক চলছে। ঢাকার সন্দেহ, ভারতের এই প্রকল্পের ফলে বাংলাদেশের জলের সঙ্কট দেখা দিতে পারে। গত অক্টোবর মাসে বিষয়টি আরও উচ্চগ্রামে ওঠে যখন এই প্রকল্পের জন্য একটি যৌথ উদ্যোগ সংস্থা তৈরির উদ্দেশ্য নিয়ে মণিপুর সরকার, জাতীয় জলবিদ্যুৎ শক্তি সংস্থা বা এনএইচপিসি এবং শতদ্রু জলবিদ্যুৎ নিগম একটি ‘প্রোমোটারস এগ্রিমেন্ট’ সই করে। তখন এই বার্তাই ঢাকায় যায় যে, ঢাকার আপত্তি সত্ত্বেও হইহই করে টিপাইমুখ প্রকল্প এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে নয়া দিল্লি। এর ফলে বাংলাদেশে পানি সংকট দেখা দিবে। কিন্তু দিল্লি ধারাবাহিক ভাবে জানিয়ে যাচ্ছে, ঢাকার স্বার্থ বিপন্ন হয় এমন কোনও পদক্ষেপ নেয়া হবে না।
গত বছরই এই প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, টিপাইমুখ প্রকল্প নিয়ে ঢাকার সাথে সব রকম আলোচনা করতে কেন্দ্র প্রস্তুত। আজকের বেঠকেও বাংলাদেশকে বলা হয়েছে, মনমোহন সরকার এমন কিছু করতে চাইছে না যাতে হাসিনা সরকার বিপদে পড়বে। ভারত-বাংলাদেশের দ্বিপাকি সম্পর্কের যে অগ্রগতি হাসিনা আসার পর হয়েছে, তা কোনও কারণে বাধাপ্রাপ্ত হোক, এটা দিল্লি মোটেও চায় না।
টিপাইমুখ সম্পর্কে যে তথ্য বাংলাদেশকে দেয়া হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, প্রতি বছর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় ভারত এবং বাংলাদেশ উভয় পক্ষই। টিপাইমুখ প্রকল্পের জন্য প্রস্তাবিত বাঁধ নির্মাণ হলেসেই বন্যার জল আটকানো সম্ভব হবে। পাশাপাশি এই প্রকল্পের ফলেযে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে, তা যেমন ভারত নেবে তেমনই পাবে বাংলাদেশও। ঢাকার বিদ্যুৎ সমস্যার একটা সুরাহার পথ দেখাবে টিপাইমুখ। উত্তর পূর্বাঞ্চলের বিদ্যুৎ প্রকল্পে লগ্নি করতে এর আগেই উৎসাহ দেখিয়েছেন হাসিনা। ভারত আজ জানিয়েছে, টিপাইমুখ প্রকল্পে হাসিনা সরকারও যোগ দিতে পারে।
সরকারের এক কর্তার বক্তব্য, ২০০৯ সালে বাংলাদেশের একটি সংসদীয় প্রতিনিধি দলকে আমরা টিপাইমুখের প্রস্তাবিত প্রকল্প দেখানোর ব্যবস্থা করেছিলাম। প্রয়োজনে আবার হাসিনা সরকারের প্রতিনিধিদের সেখানে নিয়ে যাওয়া হবে। এই প্রকল্প নির্মাণের প্রতিটি ধাপেই যে বাংলাদেশের সাথে যোগাযোগরেখে এগোনো হচ্ছে, সে কথা জানিয়ে তিনি বলেন, মণিপুরের বাড়তি পানির প্রয়োজন নেই। ফলে বাঁধ দেয়ার একমাত্র উদ্দেশ্য জলবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়া, জলের গতিপথ ঘুরিয়ে নিজেদের কাজে লাগানো নয়। তা ছাড়া এই নদীর ভৌগোলিক অবস্থান এমনই যে, চাইলেও আমরা পানির গতিমুখ পরিবর্তন করতে পারব না।