‘দেখে নেব, সব সাংবাদিকদের দেখে নেব। কত বড় সাহস, নালিশ নিয়ে এসেছিস। কত বড় সাহস আবার কথা বলিস’- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নামধারী সন্ত্রাসী আসাদুজ্জামান জনির দম্ভোক্তি এটি। মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহসিন হলের খেলার মাঠে ক্রিকেট ব্যাট উঁচিয়ে এক সাংবাদিকে তেড়ে আসার সময় এসব কথা বলেন তিনি। এসময় তার নেতৃত্বে ৪ সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করেন ছাত্রলীগ কর্মীরা। ঘটনার সময় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি জয়দেব নন্দী ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এহতেশামুলহাসান রুমি উপস্থিত ছিলেন। তারা কর্মীদের নিবৃত করতে চাইলেও জনি ও তার সাঙ্গোপাঙ্গরা তাদের কোনো কথা শোনেননি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ছাত্রলীগ নেতারা মহসিন হলের মাঠে ক্রিকেট খেলছিলেন। এ সময় একটি দৈনিকের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক মাঠ দিয়ে আসছিলেন। মাঠের ভেতর দিয়ে আসার কারণে জনির নেতৃত্বে কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা তাকে ধাক্কিয়ে মাঠ থেকে বের করে দেন। পরে বিষয়টি জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও তিন সাংবাদিক খেলার মাঠে ছুটেযান। এ সময় ঘটনা সম্পর্কে জয়দেব নন্দী ও এহতেশামুলহাসান রুমির কাছে জানতে চান সাংবাদিকরা। ঘটনা জানতে আসায় বিনা উস্কানিতে জনিসহ কয়েকজন সাংবাদিকদের দিকে তেড়ে আসেন। এ সময় তারা চিৎকার করে বলতে থাকেন, ‘‘কত বড় সাহস আবার ঘটনা জানতে আসে।’’ তখন একজন সাংবাদিক তাদের বলেন, ‘‘আপনাদের সিনিয়রদের সাথে কথা হচ্ছে। আপনারা কথা বলছেন কেন?’’ এ সময় জনিসহ কয়েকজন ক্রিকেট ব্যাট ও স্ট্যাম্প নিয়ে সাংবাদিকদের মারতে উদ্যত হন। ছাত্রলীগের সিনিয়র নেতারা তাদের অনুসারীদের না থামিয়ে সাংবাদিকদেরকেঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে নিয়ে আসেন। উল্লেখ্য, মহসিন হলের মাঠেসব সময় একই সঙ্গে কয়েকটিম্যাচ চলে। এ সময় হলের শিক্ষার্থীরা মাঠের মধ্য দিয়েই আসা-যাওয়া করেন বলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন। এদিকে রাত সাড়ে ৮টার দিকে ছাত্রলীগের নেতাদের সামনেলাঞ্ছিত ৪ সাংবাদিকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। তিনি আন্তরিকভাবেদুঃখ প্রকাশ করে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আর ঘটাবেন নাবলেও জানান। উপস্থিত ছাত্রলীগের নেতারাও সকল সাংবাদিকের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন। কে এই জনি সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িত এই জনি। এক সময় ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি। এএফ রহমান হলে ছাত্রদলের কোনো কর্মীর সঙ্গে ঝামেলা হলে এখনো তাকে টেলিফোন করেন হল ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আমিন। ছাত্রদলের সাবেক কর্মী হওয়ায় গত ১০ সেপ্টেম্বর ছাত্রদলের ওপর হামলার সময় তিনি অগ্রভাগে থাকলেও তাকে মামলার আসামি করা হয়নি। ঢাবিতে চাঞ্চল্যকর আবু বকর হত্যা মামলার অন্যতম আসামি তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের এ এফ রহমান হলের মূর্তমান ত্রাস। ছাত্রলীগের একাধিক সূত্রেজানা গেছে, হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাইদুজ্জামান ফারুকের ক্যাডার হিসেবে বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত ছিলেন জনি। নেতাদের টেন্ডারবাজিতে পেশিশক্তি হিসেবে ব্যবহারহতেন জনি। এছাড়া ৩৩তম বিসিএস লিখিত প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গেও জনি জড়িত ছিলেন, এমন সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। কলগার্ল সাপ্লায়ার হিসেবেও ক্যাম্পাসে তার পরিচিতি রয়েছে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আমজাদআলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি লিখিত অভিযোগ দিতে বলেন। ঘটনা সম্পর্কে জয়দেব নন্দী বলেন, ‘‘সাংবাদিকদের সঙ্গে ছাত্রলীগের কিছু কর্মীর চেচামেচি হয়েছে মাত্র। আমরা সাংবাদিকদের সরিয়ে রিকশায় তুলে দিই।’’ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম বলেন, ‘‘ঘটনা শুনেছি। বিষয়টি দেখছি।’’