নীরবে স্ত্রী বেগম রওশন রহমানসহ আমেরিকা গেলেন আলোচিত প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান। ২৩শে সেপ্টেম্বর থেকে ১লা অক্টোবর পর্যন্ত সরকারি সফরে থাকবেন ১০ দিন। এরপর ২রা অক্টোবর থেকে পরবর্তী এক মাস থাকবেন ব্যক্তিগত ছুটিতে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রশাসনিক প্রয়োজনে যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি সফরে গেছেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টা। প্রশাসনিক প্রয়োজনটি কি তা সরকারের কোন সূত্র থেকেই নিশ্চিত হওয়া যায়নি। উপদেষ্টা মসিউর প্রশাসনিক প্রয়োজনে সরকারি সফরে থাকলেও যুক্তরাষ্ট্র সফরে তার সঙ্গী স্ত্রী বেগম রওশন রহমান। তার স্ত্রী’র ভ্রমণ ব্যয় উপদেষ্টা ব্যক্তিগতভাবে বহন করবেন। এরপর ২রা অক্টোবর থেকে পরবর্তী একমাস ব্যক্তিগত ছুটিতে থাকবেন সরকারের এই উপদেষ্টা। ওই সময় মসিউর রহমানের যুক্তরাষ্ট্রে কাটানোর সম্ভাবনাই সবচেয়ে বেশি বলে তার পারিবারিক সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। ওদিকে মসিউরের এই যুক্তরাষ্ট্র সফর নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কর্তাব্যক্তিরা নানা কথা বলছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্বব্যাংকের দেয়া শর্ত অনুযায়ী তিনি অনেক আগেই ছুটিতে গেছেন বলে মিডিয়াসহ একাধিক সূত্রে জানা যায়। তবে এখন নতুন করে প্রশাসনিক প্রয়োজনে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ায় তার ব্যক্তিগত ছুটিতে যাওয়া নিয়ে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১০ দিন সরকারি সফরে যুক্তরাষ্ট্র সফরে কাটালেও এরপর থেকেই তিনি ব্যক্তিগত ছুটিতে থাকবেন। গত ২১ শে সেপ্টেম্বর তার যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে সরকারি সফর সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনটি জারি করা হয়েছে। ওই দিন জারি করা প্রজ্ঞাপনের বিষয়বস্তুতে বলা হয়, নিউ ইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র সফরের সরকারি মঞ্জুরি। ওই প্রজ্ঞাপনে তার সফরের উদ্দেশ্য প্রশাসনিক প্রয়োজন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এর আগে প্রধানমন্ত্রীর যুক্তরাষ্ট্র সফর উপলক্ষে জারি করা সরকারি আদেশে এ উপদেষ্টার নাম ছিল না। মসিউরের বিদেশ ভ্রমণ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, আদিষ্ট হয়ে জানানো যাচ্ছে যে, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান প্রশাসনিক প্রয়োজনে আগামী ২৩শে সেপ্টেম্বর থেকে ১লা অক্টোবর পর্যন্ত নিউ ইয়র্কে সফর করবেন। উপদেষ্টার স্ত্রী বেগম রওশন রহমান তার সফরসঙ্গী হবেন। ওই সফরের মঞ্জুরি চার শর্তে দেয়া হয়েছে। শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানের ভ্রমণ ব্যয় বিধি মোতাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বহন করা হবে। এছাড়া, তার স্ত্রী বেগম রওশন রহমানের ভ্রমণ ব্যয় উপদেষ্টা ব্যক্তিগতভাবে বহন করবেন এবং ভ্রমণকালীন সময় উপদেষ্টা বাংলাদেশী মুদ্রায় বেতন-ভাতাদি পাবেন। ওদিকে নিউ ইয়র্ক বিমানবন্দরে নেমে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টা সাংবাদিকদের কাছে ব্যক্তিগত ছুটিতে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, আমার ছুটিতে আমি থাকবো। এটা নিয়ে মতানৈক্যের কিছু নেই। আবারও দেখা হবে। মসিউর রহমান বলেন, বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে কিছু বিষয়ে আমাদের মতানৈক্য ছিল। তা মিটে গেছে। তারা সহসাই বাংলাদেশে যাবে এবং কিভাবে সেতুটির বাস্তবায়ন কাজ দ্রুত শুরু করা যায় ওই বিষয়টি দেখবেন। আমি পদ্মা সেতুর জন্য শুভ কামনা করছি। তবে গত পাঁচ দিন আগে দেশী- বিদেশী সাংবাদিকদের কাছে তিনি জানিয়েছিলেন আমি চাইলেই যে ছুটি মঞ্জুর হবে এমন কোন ঘটনা ঘটেনি। এর আগে গত শুক্রবার পদ্মা সেতুর অর্থায়নে ফিরে আসা প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংক একটি বিবৃতি দেয়। যাতে তারা উল্লেখ করেন, যেসব সরকারি কর্মকর্তা ও ব্যক্তির (আমলা ও রাজনৈতিকভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত) বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। এর আগে বিশ্বব্যাংকের শর্ত পূরণের শেষ ব্যক্তি ছিলেন মসিউর রহমান। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বিষয়টি খোলাসা করে বলেছেন, আর্থিক কোন দায়িত্বে উপদেষ্টা মসিউর রহমান থাকবেন না। এছাড়া, গত বুধবার সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি এবং অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সদস্য পদ থেকে মসিউর রহমানকে সরিয়ে দেয়া হয়। যার ভিত্তিতে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর অর্থায়নে ফিরে এসেছে বলে মনে করা হচ্ছে।