সারাদেশে ব্যাপক বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশে করে শোডাউন করেছে জামায়াতে ইসলামী। সংঘর্ষ, সহিংসতায় গতকাল রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে ঢাকা ও ঢাকার বাইরের বিভিন্ন শহর। সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশ রাবার বুলেট, টিয়ার শেল নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করেছে।
সন্ধ্যায় মগবাজারস্থ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম, প্রচার সম্পাদক প্রফেসর তাসনীম আলমসহ সারাদেশে গ্রেপ্তার হয়েছে অন্তত ১৫০ নেতাকর্মী। আহত হয়েছে দু’ শতাধিক।সারাদেশে ১৫টি গাড়িতে আগুন ও ৩০টি গাড়ি ভাঙচুর করেছে জামায়াত কর্মীরা।
দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের দাবি বিক্ষোভ চলাকালে সারাদেশে ৪০০ নেতাকর্মী আহত হয়েছে, আর গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৬০০-৭০০ নেতাকর্মীকে। মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মামলার বিচার কার্যক্রম শুরুর প্রতিবাদে গত বৃহস্পতিবার দু’দিনের বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করে জামায়াত।
পুলিশের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের সংঘর্ষে কাকরাইল, বিজয়নগর, শান্তিনগর ও পল্টনসহ সংশ্লিষ্ট এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এতে পুলিশসহ শতাধিক আহত হয়েছে। গ্রেপ্তার হয়েছে জামায়াত-শিবিরের ৬৭ জন। জামায়াত-শিবিরকর্মীরা পাঁচটি পুলিশের গাড়িসহ ১৫টি গাড়ি এবং বেশ ক’টি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দিয়েছে। কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে পল্টন থানার ওসিসহ মোট ৪৬ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। আহত ওসির নাম শহিদুল হক। আহত পুলিশ সদস্যদের রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের দেখতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন সন্ধ্যায় সেখানে যান।
সন্ধ্যায় দলীয় কার্যালয়ে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম বিক্ষোভ চলাকালে সংঘটিত ঘটনাকে সরকারের বিরুদ্ধে গণবিস্ফোরণের নমুনা বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, এর ফলে দেশে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের বিজয় এক ধাপ এগিয়েছে। সরকার যদি মনে করে, গণবিস্ফোরণ ঠেকাতে পারবে তাহলে তারা বোকার স্বর্গে বসবাস করছে। ঘটনার পর সন্ধ্যায় জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। আজহার বলেন, পুলিশের পোশাক ছাড়াও কিছু বাইরের লোক জামায়াতের কর্মীদের ওপর চড়াও হয়েছে। সরকারকে তিনি এরশাদ পতনের শেষ মুহূর্তের সময়কে স্মরণ করিয়ে দেন। তিনি বলেন, সারাদেশে এ পর্যন্ত জামায়াতের ৬০০-৭০০ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আহত হয়েছে চার শতাধিক। কুষ্টিয়া জেলা সেক্রেটারিসহ ২৮জন এবং চট্টগ্রাম, ঝিনাইদহ সহ অনেক জেলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গাড়ি পোড়ানোর ব্যাপারে এক প্রশ্নের জবাবে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, গাড়ি পোড়ানোর সঙ্গে জামায়াতের কোন সম্পর্ক নেই। উল্টো পুলিশের পোশাক ছাড়াও কিছু লোক জামায়াতের কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। জামায়াত সেক্রেটারি জেনারেল আরও বলেন, দেশের বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের মুক্তি ও প্রহসনের বিচারের ট্রাইব্যুনাল বন্ধের দাবিতে দু’দিনের কর্মসূচি দেয়া হয়। প্রথম দিনেই জামায়াতের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি শুরুর আগেই কাকরাইল মোড়ে পুলিশ জামায়াত কর্মীদের ওপর ব্যাপক লাঠিচার্জ, টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। পাঁচ-ছয় জন পুলিশ নিরীহ এক জামায়াত কর্মীকে যেভাবে লাঠিপেটা করেছে যা আমাদের ২০০৬ সালের ২৮শে অক্টোবরকে স্মরণ করিয়ে দেয়। তিনি বলেন, এরা পুলিশ হতে পারে না, এরা পুলিশ নামধারী কোন দলের এজেন্ট। বিনা উস্কানিতে পুলিশের এমন মারধর দেশের রাজনীতিতে লজ্জাজনক। এ সময় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, ডা. শফিকুর রহমান, এটিএম মাসুম, অধ্যাপক তাসনীম আলম প্রমুখ উপস্থিত
ডিএমপি কমিশনার বেনজির আহমদ বলেন, যারা আজ এ ধরনের নৈরাজ্যকর ঘটনা ঘটিয়েছে ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। পুলিশের কাছে সব ভিডিও ফুটেজ সংরক্ষিত আছে বলেও তিনি জানান। গতকাল বিকাল ৬টা ২০ মিনিটে রাজারবাগ পুলিশ লাইন হাসপাতালে আহত পুলিশ সদস্যদের দেখতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, সভ্য দেশে এ ধরনের নৈরাজ্যকর ঘটনা গণতন্ত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এগুলো ঠেকাতে রাজনীতিকদের চিন্তা করার সময় এসেছে।তিনি বলেন, নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীরা পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে। তারা পুলিশ সদস্যদের ধরে নিয়ে নির্দয়ভাবে পিটিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি জানান, এখন ৩১ পুলিশ সদস্য হাসপাতালে ভর্তি আছে। এদের মধ্যে ৬ জনের অবস্থা গুরুতর। আহতদের সংখ্যা বাড়ছে। এখনও বিভিন্ন জায়গা থেকে আহত পুলিশ সদস্যদের হাসপাতালে আনা হচ্ছে। তিনি বলেন, হামলাকারীরা সাধারণ জনগণ ও সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করেছে। এ হামলায় শতাধিক আটক করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
সারাদেশে ব্যাপক বিক্ষোভ,গ্রেপ্তার: বগুড়ায় জামায়াতের মিছিলে পুলিশের হামলাকে কেন্দ্র করে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে পুলিশসহ জামায়াতের ৭ কর্মী আহত হয়েছেন। চট্টগ্রামের মুরাদপুর এলাকায় জামায়াতে ইসলামীর কর্মীরা কমপক্ষে ১০টি গাড়ি ভাঙচুর করে। জামায়াতের মিছিলে পুলিশ বাধা দিলে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। কুষ্টিয়া জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি শাহজাহান আলী মোল্লাসহ ২৬ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। কুমিল্লায় জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডব, ২০ পুলিশসহ আহত অর্ধশতাধিক, গ্রেপ্তার ১৭।ঝিনাইদহে বিক্ষোভ মিছিল বের করলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে মিছিলকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। মিছিল থেকে পুলিশ ৯ জামায়াত-শিবিরকর্মীকে আটক করে। কুড়িগ্রাম পুলিশ জামায়াতের ৩ কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে।