সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে নিজের রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটাতে যাচ্ছেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। তার এই রাজনৈতিক দলের নাম হবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট (বিএনএফ)। আগামী শুক্রবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর ইমপেরিয়াল হোটেলে এক ইফতার মাহফিলের মধ্য দিয়ে এই ফ্রন্টের আত্মপ্রকাশ ঘটতে যাচ্ছে। নাজমুল হুদা নিজেই দলটির আহ্বায়ক। আর কো-অর্ডিনেটর আবুল কালাম আজাদ।

গতকাল তোপখানা রোডের তার নিজের আইনি কার্যালয়ে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে এসব তথ্য জানান নাজমুল হুদা। তিনি বলেন, এতদিন অন্যদের হিরো বানানোর জন্য কাজ করেছি। এবার নিজের জন্য কাজ করব। দেশ-বিদেশে এখন আমার একটি অবস্থান তৈরি হয়েছে। এই অবস্থানকে দেশের মানুষের জন্য কাজে লাগাতে চাই। আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়ার টার্গেট আছে ফ্রন্টের। এ লক্ষ্যে প্রাথমিক কাজও শুরু করে দেওয়া হয়েছে বলে জানান নাজমুল হুদা। ২০০১-২০০৬ বিএনপি শাসনামলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে কথা বলায় তাকে মন্ত্রিত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

এরপর দলের শৃঙ্খলাবিরোধী কথা বলায় ২০১০ সালের ২১ নভেম্বর বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়। পরে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের আগে তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। গত ২৩ মে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তার দলের নেত্রী খালেদা জিয়ার উদ্দেশে বলেন, আগামী ৫ জুনের মধ্যে তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আলোচনার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আহ্বান না জানালে ৬ জুন তিনি বিএনপি থেকে পদত্যাগ করবেন। কিন্তু আলটিমেটামের মধ্যে তার নেত্রী প্রধানমন্ত্রীকে আলোচনার জন্য আহ্বান না জানানোর কারণে তিনি বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেন। সংবাদ সম্মেলন করে পদত্যাগ করলেও আনুষ্ঠানিক এবং লিখিতভাবে কোনো আবেদন না জানানোর কারণে দলে তার অবস্থান আগের মতোই রয়েছে বলে জানা গেছে। আর এরই মধ্যে তিনি নয়া দলের ঘোষণা দিতে যাচ্ছেন।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ফ্রন্টের কো-অর্ডিনেটর সম্পর্কে নাজমুল হুদা বলেন, আবুল কালাম আজাদ সর্বশেষ মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ ইব্রাহীমের কল্যাণ পার্টির মহাসচিব ছিলেন। ইব্রাহীম বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটে যোগ দেওয়ার পর আবুল কালাম আজাদ কল্যাণ পার্টি ত্যাগ করেন। এরপর নিজেই একটি পার্টি করেছিলেন। এখন সেই পার্টি ভেঙে দিয়ে নাজমুল হুদার সঙ্গে জাতীয়তাবাদী ফ্রন্টে যোগ দিয়েছেন।

নতুন ফ্রন্ট করার কারণ ব্যাখ্যা করে হুদা বলেন, বিএনপি থেকে পদত্যাগের ঘোষণা করার পর কিছু দিন চুপ ছিলাম। এরপর থেকে দেখি বিএনপির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমাকে ডাকা হয় না। এমনটি জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কোনো অনুষ্ঠানেও আমাকে দাওয়াত দেওয়া হচ্ছে না। তখন সিদ্ধান্ত নিলাম নিজেই পার্টি করব। নাজমুল হুদা অতীতের মতো আর কাউকে হিরো বানানোর রাজনীতি করতে চান না। এবার নিজেই হীরো হতে চান।

নতুন ফ্রন্টের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, এতদিন অন্যদের হিরো বানানোর জন্য রাজনীতি করেছি। আর কাউকে হিরো বানানোর জন্য রাজনীতি করব না। এখন নিজেই দেশবাসীর জন্য কিছু করতে চাই। বর্তমানে দেশে যে রাজনীতি চলছে তা জনগণ পছন্দ করে না। জনগণের পছন্দের রাজনীতি করব আমরা। সে রাজনীতি হবে প্রচলিত ধ্যাণ-ধারণার বাইরে অগ্রগতির রাজনীতি। শান্তিপূর্ণ রাজনীতি। একটি সুন্দর জাতি গঠনের লক্ষ্যে যা যা প্রয়োজনে তাই করা হবে। আমাদের রাজনীতি হবে সংসদ কেন্দ্রিক। ফ্রন্টের কর্মসূচি হবে গঠনমূলক। কোনো ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি আমরা নেব না। 

ফ্রন্টের কমিটির ধরন সম্পর্কে তিনি বলেন, ফ্রন্টের একটি জাতীয় নির্বাহী কমিটি থাকবে। এ ছাড়া জেলা ভিত্তিক কমিটি আমরা করব না। কমিটি হবে আসন ভিত্তিক। একটি নির্বাচনী আসনে যে কয়টি ভোটকেন্দ্র থাকবে ততটি কমিটি করা হবে।

ভোটকেন্দ্রের কমিটি আসন ভিত্তিক কমিটি নির্বাচিত করবে। প্রতিটি নির্বাচনী এলাকা থেকে যোগ্য প্রার্থীকে খুঁজে বের করে আনা হবে। তাকে কেন্দ্র করেই আসন ভিত্তিক কমিটি হবে। প্রার্থী করার জন্য তার মানবাধিকার সংগঠনের জেলা সদস্যদের প্রতি অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এ কমিটিতে আওয়ামী লীগ-বিএনপির নেতারা সংশ্লিষ্ট রয়েছেন। এর বাইরে জেলা পর্যায়ে সম্মানিত ব্যক্তিরাও কমিটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রয়েছেন। তাদের ভেতর থেকেও আগামী নির্বাচনের জন্য প্রার্থী খোঁজা হবে।

ফ্রন্টের আহ্বায়ক কমিটিতে আর কারা থাকছেন তা প্রকাশ করেননি নাজমুল হুদা। তবে এ ব্যাপারে চমক থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে।