বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সংসদ সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার ব্যাপারে আনীত অভিযোগের পক্ষে প্রাথমিকভাবে প্রমাণ পেয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
ওই অভিযোগপত্র আজ সোমবার ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন টিমের প্রধান চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপুর কাছে হস্তান্তর করা হবে। নিয়ম অনুযায়ী প্রসিকিউশন তা ট্রাইব্যুনালে দাখিল করবেন। সাকার বিরুদ্ধে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, গণহত্যা ও ষড়যন্ত্রের প্রাথমিক অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। এর মধ্যে দিয়ে দ্বিতীয় দফায় অভিযোগপত্র দাখিল করতে যাচ্ছে তদন্ত সংস্থা।
তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. নূরুল ইসলাম বলেন, সালাহউদ্দিন কাদেরের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন ১৯৭৩-এর অধীনে মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা এবং এই অপরাধে সহযোগিতা করার অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে যেসব এলাকায় অপরাধ সংগঠিত হয়, তদন্তের জন্য সেসব এলাকায় সরজমিন পরিদর্শন করা হয়। এজন্য মানচিত্র অঙ্কন, ক্যামেরায় ছবি ও ভিডিও চিত্র ধারণ করা হয়। এছাড়া সাক্ষীদের জবানবন্দিও নিয়েছি। নূরুল ইসলাম বলেন, ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত সময়ের ধারাবাহিক ইতিহাস পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় অংশ গ্রহণ করা হয়েছে। ১৯৭১ সালে পত্রপত্রিকায় সালাহউদ্দিন কাদেরের অপরাধ সংশ্লিষ্টতার ব্যাপারে যেসব সংবাদ পরিবেশিত হয়েছে তা-ও আমরা লিপিবদ্ধ করেছি। প্রত্যক্ষদর্শী, ভিকটিম এবং ভিকটিমের পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে তথ্যপ্রমাণ ও বক্তব্য নিয়ে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। নূরুল ইসলাম বলেন, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনের ৩(২) এ, সি ও জি ধারায় ৩২টি অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে তিনি বলেন, এই প্রতিবেদনকেই শেষ বলা যাবে না, বিচার কার্যক্রম চলাকালে ন্যায়বিচারের স্বার্থে তদন্তের প্রয়োজন হলে ট্রাইব্যুনালের অনুমতিক্রমে আরও তদন্ত করা যাবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আদেশ অনুযায়ী ৪ঠা অক্টোবর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা ছিল তদন্ত সংস্থার।
গতকাল রোববার রাজধানীর বেইলি রোডে অবস্থিত মিনিস্টার্স অ্যাপার্টমেন্টে তদন্ত সংস্থার নিজস্ব কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ কথা জানানো হয়। সেখানে তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক মো. আব্দুল হান্নান খান ও সাকার অভিযোগের তদন্ত কর্মকর্তা সহকারী পুলিশ সুপার মো. নুরুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন।
গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে সাকা চৌধুরীকে গ্রেফতারের আবেদন জানানো হয়। পরদিন বিএনপির এই নেতাকে গাড়ি পোড়ানোর একটি মামলায় গ্রেফতার করা হয়। ১৯ ডিসেম্বর তাদের গ্রেফতারের আদেশ দেয় ট্রাব্যুনাল। এ আদেশের ভিত্তিতে তাকে মানবতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার দেখানো হয়। এরই মধ্যে তাকে সেফহোমে নিয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। সর্বশেষ গত ১ আগস্ট সাকার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র দাখিল করতে তদন্ত সংস্থাকে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া ট্রাইব্যুনাল। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে আটক রয়েছেন।