পাকিস্তানের আদিবাসী এলাকায় পারিবারিক ও সামাজিক নানাবিধ দ্বন্দ্ব- সংঘাতের পরিণতি ভোগ করতে হয় নারীদের। বাবা, ভাই ও স্বামীসহ নিকট আত্মীয় পুরুষের অপরাধের শাস্তি হিসেবে নারীদের ওপর ঘটে পাশবিক নির্যাতন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক বিশেষ প্রতিবেদনে পাকিস্তানের দুর্গম এলাকার আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মধ্যে চলতে থাকা এ বর্বরতার চিত্র উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে গত ১৪ এপ্রিলের একটি ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে।

পাকিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলের কোহাউর জুনোবি গ্রামের অধিবাসী আসমা ফেরদৌস (২৮)। ১৪ এপ্রিল দুজন লোক আসমার বাসায় ঢুকে তার ছয়টি আঙ্গুল কেটে ফেলে। তার দুই হাত ও ঠোঁটে ছুরি দিয়ে আঘাত করে। কেটে নেয় নাকের একাংশ। নির্যাতন শেষে যাওয়ার সময় ঘরের মধ্যে তাকে আটকে রেখে যায়। আসমার অপরাধ ছিলো এক আত্মীয় নারীর সঙ্গে তার স্বামীর অবৈধ সম্পর্ক। স্বামীর অপকর্মের সাজা হিসেবে আসমার ওপর ঘটে ওই নির্মম নির্যাতন।

পাকিস্তানের কৃষিনির্ভর সামন্ততান্ত্রিক ওই অঞ্চলে নারীদের ওপর এ ধরনের সহিংস ঘটনা ঘটে প্রায়ই। সেখানে পারিবারিক বিরোধের শিকার হন নারীরা। ওই অঞ্চলে নারীদের ওপর এ ধরনের সহিংসতার ও পাশবিকতার মাত্রা ক্রমে বেড়েই চলেছে। মুলতান শহরের কাছে এক হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন আসমা। তার শয্যার পাশে চুপচাপ বসে ছিলেন তারা বাবা-মা। মেয়ের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে নিজেদের কষ্টের কথা বলেন তারা।

থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, আফগানিস্তান ও ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোর পর পাকিস্তানে নারীদের ওপর সবচেয়ে বেশি সহিংসতা হয়। পাকিস্তানের মানবাধিকার কমিশন তাদের ২০১০ সালের প্রতিবেদনে বলেছে, দেশটিতে এক বছরে প্রায় আটশ’ নারী পারিবারিক সংঘাতের কারণে নিহত হয়েছেন এবং দুই হাজার নয়শ’ নারী ধর্ষিত হয়েছেন। গড়ে প্রতিদিন আটজন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে।

আর পাকিস্তানের সবচেয়ে জনবহুল প্রদেশ পাঞ্জাবেই নারীরর ওপর সহিংস ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটেছে। এক বছরে কেবল ওই প্রদেশেই দুই হাজার ছয়শ’ নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে।