মেডিকেল কলেজগুলোর অধ্যক্ষরা কোচিং-বাণিজ্য বন্ধে মাধ্যমিক (SSC) ও উচ্চমাধ্যমিক (HSC) পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে এমবিবিএস ও বিডিএস কোর্সে শিক্ষার্থীদের ভর্তির প্রস্তাব দিয়েছেন । স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এই প্রস্তাব গ্রহণ করেছে এবং এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে সুপারিশ করবে। বিষয়টি নিয়ে ১২ আগস্ট মন্ত্রণালয়ে আলোচনা হওয়ার কথা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে গতকাল রোববার দেশের ২২টি সরকারি ও ২টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষদের নিয়ে সভা হয়। বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ২টি হলো: বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ ও কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরের জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ। এই সভায় অধ্যক্ষরা এ প্রস্তাব দেন। সভাসূত্র জানায়, সভায় উপস্থিত বেশির ভাগ অধ্যক্ষ বলেন, প্রতিবছর ভর্তির জন্য ৫০-৬০ হাজার ছাত্রছাত্রীর পরীক্ষা নেওয়ার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসা দরকার। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) যেখানে একটি আসনের বিপরীতে সর্বোচ্চ তিন-চারজনের পরীক্ষা নিচ্ছে, সেখানে গত বছর এমবিবিএস/বিডিএস কোর্সে ৩ হাজার আসনের বিপরীতে ৫০ হাজার ছাত্রছাত্রীর পরীক্ষা নিতে হয়েছে।

সভায় বলা হয়, ভর্তির ক্ষেত্রে পরীক্ষার ফলাফলকে গুরুত্ব দিলে রাজধানীর হাতেগোনা কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রী ভর্তির সুযোগ পাবে। তবে এ সমস্যা সমাধানে জেলা কোটা ও অনগ্রসর অঞ্চলগুলোর জন্য নির্দিষ্ট কোটা কঠোরভাবে মানতে হবে।

জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চিকিৎসা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক শাহ আবদুল লতিফ বলেন, সভায় অধ্যক্ষদের বেশির ভাগই ভর্তি পরীক্ষা না নেওয়ার পক্ষে মত দেন। তাঁরা বলেছেন, এখন সুষ্ঠুভাবে এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষা হচ্ছে। বোর্ডের মূল্যায়নকে গুরুত্ব দিয়ে ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা যেতে পারে।

ফলাফলের ভিত্তিতে এমবিবিএস/বিডিএস কোর্সে ভর্তির ক্ষেত্রে কী নিয়ম অনুসরণ করা হবে জানতে চাইলে শাহ আবদুল লতিফ বলেন, একজন শিক্ষার্থী জীববিজ্ঞানসহ নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে কত নম্বর পেয়েছে, তা দেখা হবে। চতুর্থ বিষয় ছাড়া কত পেয়েছে এবং চতুর্থ বিষয়সহ কত পেয়েছে তাও দেখা হবে। যে শিক্ষার্থী চতুর্থ বিষয় ছাড়াই ভালো ফল করেছে, সে অন্যদের থেকে এগিয়ে থাকবে।

সভায় উপস্থিত একজন অধ্যক্ষ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গত বছর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ছাপাখানা থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের চেষ্টা, পরীক্ষার আগে ভুয়া প্রশ্নপত্র বেচাকেনাসহ নানা ধরনের সমস্যা হওয়ায় এবার পরীক্ষা না নেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন বেশির ভাগ অধ্যক্ষ। তাঁরা বলেছেন, ভর্তি পরীক্ষা না হলে কোচিং সেন্টারগুলোর দৌরাত্ম্য বন্ধ হবে। সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির প্রতিশ্রুতি দিয়ে যেসব কোচিং সেন্টার নানাভাবে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের প্রতারণা করছে, তাও বন্ধ হবে।

সভাসূত্র জানায়, সভায় কোনো কোনো অধ্যক্ষ ভর্তি পরীক্ষা না নেওয়ার বিপক্ষেও যুক্তি দেন। তাঁদের কেউ কেউ দুই ধাপে পরীক্ষা নেওয়ার প্রস্তাব দেন। এ ক্ষেত্রে তাঁরা প্রথম দফায় বিসিএস পরীক্ষার আদলে নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষা এবং দ্বিতীয় দফায় লিখিত পরীক্ষা নেওয়ার প্রস্তাব করেন।

আবেদনের জন্য জিপিএ-৮ বহাল থাকছে: মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য গত বছরের মতো এবারও এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা মিলিয়ে জিপিএ-৮ পেলেই ছাত্রছাত্রীরা আবেদন করতে পারবেন। যদি ভর্তি পরীক্ষা হয়, সে ক্ষেত্রে সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর।