‘পরিবেশ-পরিচিতি সমাজ’-এর ৪০ পৃষ্ঠার পর শুরু হয়েছে গণিতের ৭ম অধ্যায়। স্কুলের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী মাহিমার ‘পরিবেশ-পরিচিতি সমাজ’ বইয়ের একাংশে সমাজ ও বাকি অংশে রয়েছে ‘ইসলাম-শিক্ষা’।

চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী স্বজনের ‘আমার বাংলা বই’-এর প্রথম দিকের কয়েক পাতা উল্টানো, আবার কয়েক পৃষ্ঠা ২ দফায় ছাপানোর কারণে তা থেকে পাঠোদ্ধার সম্ভব নয়। এ ধরনের অসংখ্য মুদ্রণ ভুলে ভরা বই পেয়েছে খুলনা এবং কক্সবাজারের রামু উপজেলার শিক্ষার্থীরা। এতে একদিকে শিক্ষার্থীদের নতুন বই পাওয়ার আনন্দ ফ্যাকাসে হয়েছে, অন্যদিকে বিপাকে পড়েছেন শিক্ষকেরা। খুলনায় বই বিতরণের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তারা জানান, চলতি বছর মুদ্রণ ও বাঁধাইয়ের এ রকম অসংখ্য অসংগতির কারণে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বই ফেরত আসছে। অতিরিক্ত কিছু মজুদ থাকায় তা বদল করে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ফেরত আসা বইয়ের সংখ্যা বেশি হলে বিপদে পড়তে হবে। খুলনা নগরের বঙ্গবন্ধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দৌলতপুর মুহসিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আব্দুল গনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তকে অসংগতি বেশি। খুলনার আসমা সারোয়ার প্রিন্টিং প্রেস থেকে মুদ্রিত পঞ্চম শ্রেণীর সমাজের কিছু বইয়ের ৭২ থেকে ৮০ পৃষ্ঠা পর্যন্ত উল্টানো, বিজ্ঞানের কিছু বইয়ের ১৬ পৃষ্ঠার পর থেকে ৪০ পৃষ্ঠা পর্যন্ত নেই, ধর্মশিক্ষার বইয়ে ৯১ পৃষ্ঠার পর শুরু হয়েছে বাংলা। খুলনার গ্লোরি প্রিন্টিং প্রেস থেকে মুদ্রিত পঞ্চম শ্রেণীর গণিত বইয়ের শুরুই হয়েছে ২৭ পৃষ্ঠা থেকে। মাঝে কয়েক পৃষ্ঠা পুরোপুরি সাদা (ছাপা নেই)। সবচেয়ে বাজে অবস্থা তৃতীয় শ্রেণীর সমাজ বইয়ে। এখানে অধিকাংশ বইয়ে রয়েছে সমাজ ও ধর্ম বইয়ের মিশেল। তৃতীয় শ্রেণীর প্রতিটি বই সেলাইয়ের পরিবর্তে পিন দিয়ে আটকানো হয়েছে। ফলে এসব বই টেকসই হবে না বলে আশঙ্কা করছেন শিক্ষকেরা। এ ব্যাপারে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ কে এম সাফায়েত আলম সাংবাদিকদের জানান, ‘বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা কর্মকর্তাদের সঙ্গে সভা করা হয়েছে। অসংগতিপূর্ণ বইগুলো সব ফেরত পাওয়ার পর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।’ কক্সবাজারের রামু উপজেলায় বই বিতরণ শেষ না হলেও অভিভাবকেরা ভুলে ভরা বই বিদ্যালয়ে ফেরত দিতে শুরু করেছেন। এতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিপাকে পড়ছেন শিক্ষকেরাও। বই পড়ে দেখা গেছে, চতুর্থ শ্রেণীর বাংলা বইয়ের সূচিপত্রে ‘পালকির গান’, ‘অবাক যন্ত্র কম্পিউটার’ ও ‘এক বছরের রাজা’-এ ৩টি অধ্যায়ের উল্লেখ থাকলেও ভেতরে সেগুলো ছাপা হয়নি। চতুর্থ শ্রেণীর সমাজ বইয়ে অনুশীলনী এবং ১১ ও ১২তম অধ্যায় ছাপা হয়নি। অথচ ১৩ অধ্যায় ২ বার ছাপা হয়েছে। পঞ্চম শ্রেণীর কিছু কিছু বাংলা বইয়ে ৩৩ থেকে ৪০ পৃষ্ঠা পর্যন্ত সাদা। পঞ্চম শ্রেণীর গণিত বইয়ে একাধিক পৃষ্ঠা সাদা। আবার কিছু বইয়ে অনেক অধ্যায়ের উত্তরমালা ছাপা হয়নি। পঞ্চম শ্রেণীর ইংরেজির অধিকাংশ বইয়ে কোনো কোনো অধ্যায় ছাপাই হয়নি এবং কোনো কোনো অধ্যায় ২ বার ছাপা হয়েছে। একই শ্রেণীর সমাজ বইয়ে মাঝেমধ্যে অনেক পৃষ্ঠা সাদা। রামু উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘পাঠ্যবইয়ে ভুলের কারণে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষকেরাও বেকায়দায় পড়ছেন। এ সমস্যার সমাধান কীভাবে হবে, কিছু বলতে পারছি না।’ উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মাহমুদুল হক জানান, মুদ্রণ কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি তাঁরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবেন।