বাংলাদেশে চিকিৎসকদের সংগঠন বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন বা বিএমএ’র নেতারা অভিযোগ করেছেন, কিডনি কেনাবেচার অভিযোগ নিয়ে তদন্ত শুরু হওয়ার পর এই চিকিৎসা-ব্যবস্থায় একটি অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে।
বিএমএ’র মহাসচিব শারফুদ্দিন আহমেদ দাবি করেন, বিদেশি হাসাপাতালের স্বার্থে এটি করা হচ্ছে এবং প্রচারণার ফলে দেশে এ ধরণের চিকিৎসা-কর্মকাণ্ড বন্ধ হয়ে গেছে।
তবে ঢাকার অন্যতম বড় একটি হাসাপাতালে আগের চেয়েও কঠোর শর্তে কিডনি সংযোজন চলছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। মিঃ আহমেদ বলেন, ১৯৯৯ সালে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন প্রণয়নের পর থেকে বাংলাদেশে কিডনি সংযোজনের চিকিৎসা বিকশিত হয়েছে।
তাঁর দেয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সেই সময় থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রায় ১,০০০ রোগি কিডনি প্রতিস্থাপন করেছেন, যার মধ্যে ৬০০ অপারেশন হয়েছে বাংলাদেশেই। এর আগে এ ধরনের সব রোগিই বিদেশে যেতো, ফলে এ ক্ষেত্রে বিদেশি হাসপাতালের একটি স্বার্থ রয়েছে বলে বিএমএ মহাসচিব মনে করেন। তিনি কিডনি সংযোজন সম্পর্কে চিকিৎসক ও কিছু দেশীয় হাসপাতালকে জড়িত করার বিষয়টিকে ষড়যন্ত্র বলেও দাবি করেন, এবং এ ক্ষেত্রে উদাহরণ দেন যে বাংলাদেশে বিদেশি হাসপাতালের এজেন্সি রয়েছে।
তিনি বলেন, রোগিরা বিদেশমুখী না হলে তাদের হাসপাতালগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। অন্যদিকে, বাংলাদেশে এই চিকিৎসা সুবিধা গড়ে ওঠার কারণে আর্থিক সাশ্রয় হচ্ছে।
বিএমএ মহাসচিব প্রশ্ন করেন, আত্মীয় নির্ধারণের কাজটি যদি ম্যাজিস্ট্রেট, চেয়ারম্যান কিংবা নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে করা হয়, তাহলে এর বাইরে ডাক্তারদের কী করার আছে। “শুধুমাত্র দোষারোপ করে এটি বন্ধ করে দিলে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে আমাদের উন্নয়ন ব্যহত হবে।“
উত্তরাঞ্চলীয় জেলা জয়পুরহাটের পুলিশ সম্প্রতি অর্থের বিনিময়ে কিডনি বেচা-কেনার একটি চক্রকে সনাক্ত করেছে এবং ঐ চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে কয়েকজনকে এরই মধ্যে গ্রেফতারও করা হয়েছে। পুলিশের দাবি, গ্রেফতারকৃতরা কিডনি বেচাকেনার সঙ্গে জড়িত কয়েকটি হাসপাতালের নাম প্রকাশ করেছে।
বিএমএ মহাসচিব শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, এই অভিযান শুরুর পর থেকে আতঙ্কে ভুগছেন বিশেষজ্ঞরা এবং দেশে কিডনি সংযোজনের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। সবচেয়ে বেশী কিডনি সংযোজনের কাজ হয় বাংলাদেশে কিডনি ফাউনন্ডেশনে, বছরে ৫০টির মতো। কিডনি ফাউন্ডেশনের সভাপতি হারুন-আর-রশিদ বলেন, গত তিন সপ্তাহ ধরে তাঁরা কিডনি সংযোজনের কাজ বন্ধ রেখেছেন। তিনি বলেন, “আমাদের কী করণীয়, তা আমরা নিজেরাও বুঝতে পারছি না। “ তবে তিনি জানান যে বাবা, মা কিংবা ভাই-বোনের মধ্যে কিডনি প্রতিস্থাপনের যেসব আবেদন তাদের কাছে রয়েছে, সেগুলো তাঁরা ডিএনএ টেস্টের জন্যে পাঠিয়েছেন আত্মীয়ের সম্পর্ক যাচাই করার জন্যে।
অন্যদিকে, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কিডনি প্রতিস্থাপনের আবেদন বিবেচনার জন্যে তাদের বিয়ের কাবিন চাওয়া হয়েছে। তবে চাচা-মামা-ফুপু-খালার বিষয়টি কীভাবে সমাধান করা হবে, তা তাঁরা ভেবে এখনো বের করতে পারেননি বলে ডাঃ রশিদ জানান। তিনি বলেন, কিডনি ট্রান্সপ্লান্টের কাজ তাঁরা আবারো শুরু করবেন, কেননা এর একটা মানবিক দিক রয়েছে। “এটি মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার, যা আমরা অস্বীকার করতে পারবো না।“
তবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে কিডনি সংযোজনের কাজ বন্ধ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন উপাচার্য প্রাণ গোপাল দত্ত। ঐ হাসপাতালে সপ্তাহে একটি করে এ ধরনের অপারেশন করা হচ্ছে, তবে এ ক্ষেত্রে শর্তাবলী আরো কঠোর করা হয়েছে বলে অধ্যাপক দত্ত জানান। তিনি বলেন, আইনে আছে ঘনিষ্ঠ আত্মীয়রা কিডনি দিতে পারবেন। তাই সব ধরনের পরীক্ষা ও ম্যাচিং হয়ে যাওয়ার পর আত্মীয়তার সম্পর্ক খতিয়ে দেখতে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। তিনি জানান, এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন উপদেষ্টার নেতৃত্বে গঠিত একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ঐ কমিটি সম্পর্কের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে দাতা-গ্রহীতার ঠিকানায় গিয়ে সব কিছু যাচাই করে দেখবে। তবে এর ফলে কিডনি সংযোজনের খরচ আরো ১০,০০০ টাকা বাড়বে বলেও অধ্যাপক দত্ত জানান।
বিএমএ বলছে, কোন চিকিৎসক কিডনির অবৈধ বেচাকেনার সঙ্গে জড়িত থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। তবে একই সঙ্গে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইনের সংশোধন এবং কিডনি দাতা-গ্রহীতার আত্মীয়তার সম্পর্ক খতিয়ে দেখতে একটি অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ড গঠনের জন্যেও সংগঠনটির পক্ষ থেকে সুপারিশ করা হয়েছে।