একজন পূর্ণবয়স্ক মুক্ত মানুষ কত দিন পর পর রক্ত দিতে পারবেন, এটা তার শারীরিক অবস্থার পাশাপাশি দেশের আইনের ওপরও নির্ভর করে। যেমন-আমেরিকায় অন্তত ৮ সপ্তাহ (৫৬ দিন) পর রক্তদান করা যায়। আবার বাংলাদেশে প্রতি তিন মাস পরপর রক্তদান করাকে নিরাপদ ধরা হয়ে থাকে।
শরীরে সাধারণত ৫-৬ লিটার রক্ত থাকে। রক্ত দানের সময় সাধারণত ৪০০ থেকে ৪৫০ মিলিলিটার রক্ত দান করা হয়। অর্থাৎ শরীরে থাকা রক্তের মাত্রা ১০ ভাগের ১ ভাগ। এ কারণেই অধিকাংশ রক্তদাতা রক্তদানের পর তেমন কিছুই অনুভব করেন না। যে পরিমাণ রক্তের তরল অংশ নেয়া হয় সেই তরল অংশ মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আবার আগের মতো হয়ে যায়।

দেশে রক্তদানের ব্যাপারে ব্যাপক প্রচারণায় আজ ৯০ শতাংশ রক্তই আসে স্বেচ্ছা রক্তদাতার মাধ্যমে। স্বেচ্ছা রক্তদান ও পরিসঞ্চালনের আগে বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষায় রক্ত পরিসঞ্চালন এখন নিরাপদ ও বিপদমুক্ত।

রক্তদান করলে শারীরিক কোনো ক্ষতি হয় না। ধর্মীয় দৃষ্টিতে কোনো বাধা নেই। শুধু ভীতিই রক্তদানের মতো মহৎ কাজ থেকে বিরত রাখে। সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক (১৮ থেকে ৬০ বছর) ও ৪৫ কেজি বা তার বেশি ওজনের যে কেউ প্রতি চার মাস অন্তর রক্ত দিতে পারেন। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত রক্তদানের ফলে দেহ ক্ষতিকর ফ্রি-রেডিক্যালমুক্ত হয়। ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমে যায়। ফলে হূদরোগ, স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে যায়। বার্ধক্য প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। পরিসঞ্চালনের আগে রক্তদাতার শরীরে পাঁচটি মারাত্মক রোগ (হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’, এইডস, সিফিলিস ও ম্যালেরিয়া) আছে কি না তা পরীক্ষা করা হয়। এ পরীক্ষার খরচ কিন্তু অনেক। রক্তদান করলে বিনা খরচে আপনি এ রোগগুলোতে আক্রান্ত কি না তা জানতে পারবেন। চিকিৎসকের কাছে খরচ করে চেকআপ করতে যাওয়ার দরকার নেই। চার মাস পর পর রক্তদান চেকআপের কাজ করবে।

পেশাদার রক্তবিক্রেতা, বাণিজ্যিক যৌনকর্মী, শিরায় মাদকাসক্ত ব্যক্তি, ট্রাকচালক, নাবিক, প্রবাসী, অবাধ যৌনাচারী বা বহুগামী, এইডস অধ্যুষিত দেশ ভ্রমণকারী বা বসবাসকারী।
ছয় মাসের মধ্যে টাট্টু, আকুপাংচার, চর্মরোগ ও রক্ত দেয়া হয়েছে, তিন বছরের মধ্যে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন, সমপ্রতি টিকা দিয়েছেন, দুই সপ্তাহের মধ্যে দাঁত উঠানো বা মুখে সার্জারি হয়েছে, ক্যান্সার আক্রান্ত ব্যক্তি রক্তদান করতে পারবেন না। এ ছাড়া থ্যালাসেমিয়া, লিউকেমিয়া, অ্যাপ্লাস্টিক এনিমিয়া, হেমোফিলিয়া, হূদরোগ, স্নায়বিক রোগ, থাইরোটকসিকোসিস, এমফাইসেমা, টাইপ-১ ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিরা কখনোই রক্তদান করবেন না।

রক্তদান কেন্দ্রের মাধ্যমে রক্ত দিলে পাঁচটি পরীক্ষা সম্পূর্ণ বিনা খরচে করে দেয়া হয় যা বাইরে করলে খরচ লাগবে প্রায় তিন হাজার টাকার মতো। সেগুলো হলো-এইচআইভি/এইডস, হেপাটাইটিস-বি, হেপাটাইটিস-সি, ম্যালেরিয়া ও সিফিলিস। তাছাড়া রক্তের গ্রুপও নির্ণয় করা হয়।