এই মূহুর্তে যদি প্রশ্ন করা হয় পৃথিবীর সর্বোচ্চ ভবন কোনটি এবং কোথায়? ‘বুর্জ খলিফা’ দুবাই-এ অবস্থিত; সম্ভবত শিশুরাও এই উত্তরটি দিতে বিলম্ব করবেনা। শুধু কি তাই পৃথিবীর অন্যতম দীর্ঘ শপিং মল ‘দুবাই মল’, পৃথিবীর অন্যতম সৌন্দর্যমন্ডিত ‘ওয়াটার ডান্স’ দুবাই, পৃথিবীর অন্যতম আকর্ষণীয় একূ্যয়েরিয়াম ও পানির নীচে চিড়িয়াখানা দুবাইয়ে, পৃথিবীর অন্যতম আকর্ষণীয় মরুভূমি দুবাই, পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ বিমানবন্দর দুবাই, পৃথিবীর অন্যতম সৌন্দর্যমন্ডিত এবং আলোচিত একমাত্র সাত তারকা হোটেল দুবাই ‘বুর্জ আল আরব’। এগুলোই শেষ নয়, এরকম অসংখ্য জমকালো ও চমকানো বিষয়াদিতে সমৃদ্ধ দেশ দুবাই। দেশটি ১৯৭২ সালের ২ ডিসেম্বর সংযুক্ত আরব আমিরাতের অন্তর্ভুক্ত হয়। এই আরবের মরুভূমিতে এ যেনো আন্তর্জাতিক মহাবানিজ্যকেন্দ্র। সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবি হলেও বানিজ্যিক রাজধানী দুবাই। মূলত একটি মুসলিম দেশই শুধু নয় এটি একটি ইসলামী আইনে পরিচালিত আরব দেশ হলেও দুবাই ঘুরে মিঙ্ড কালচারই (বহুজাতিক সংস্কৃতি) চোখে পড়বে। বিশাল আরব সাগর পার হয়ে আমরা যখন বিমানবন্দরে নামলাম, প্রথমেই মুগ্ধ হলাম এতো বিশাল বিমানবন্দর দেখে। এরপরেই ব্যতিক্রমি নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থার মুখোমুখি হলাম _ বিভিন্ন দেশে ফিঙ্গার প্রিন্ট রাখা হয় কিন্তু একানে দেখা মিললো ‘আই স্ক্যান’। খুবই স্বল্প সময়ের মধ্যে এই পর্বটি সম্পন্ন করলো দুবাইয়ের ইমিগ্রেশন বিভাগ। এরপর যথারীতি ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করে হোটেলের পাঠানো বাসে চেপে বসলাম। দুই ধারে অসাধারণ জমকালো ঐশ্বর্যমন্ডিত ইমারত আর কৃত্রিম ঝর্ণা দুবাইয়ের আভিজাত্যের সুস্পস্ট নিদর্শনগুলো চোখে পড়ছে। আমরা যেদিন দুবাইয়ে প্রবেশ করলাম পরেরদিনটি ছিলো ৩৯তম জাতীয় দিবস।

বুর্জ খলিফা:
পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু ইমারত বুর্জ খলিফা। ৮০০ মিটারের বেশী (১৬০+ তলা) উচ্চতার এই সুবৃহৎ ইমারত শুধু উচ্চতায়ই নয়, এর বাহ্যিক সৌন্দর্যও পৃথিবীর অন্যতম সৌন্দর্যমন্ডিত ভবনের সাক্ষ্য দেবে। এর নির্মানশৈলী যেকোনো সৌন্দর্যপ্রিয় মানুষকে মোহিত করবে। যেকোনো দর্শনাথর্ী মাত্র ১০০ দেরহামের বিনিময়ে এই ভবনের ১২৪তলা পর্যন্ত উঠে পরিদর্শন করতে পারেন। যেখান থেকে শুধু দুবাই নয় আরবের একটি বৃহৎ অংশ পর্যবেক্ষণ করা যায়। বুর্জ খলিফা সংলগ্ন দুবাই মলের নীচতলা থেকে এই টিকেট সংগ্রহ করতে হয়। এর সাথেই রয়েছে ওয়াটার ডান্স এবং পৃথিবীর বৃহৎ শপিং সেন্টার দুবাই মল। কথিত আছে যে, দুবাইয়ের খলিফা জীবনে (বোঝার বয়স থেকে) একবার কেঁদেছেন যেদিন এই ভবনটি উদ্বোধন করা হয়।

ওয়াটার ডান্স:
বুর্জ খলিফার পাশেই রয়েছে আরেক সৌন্দর্যমন্ডিত ওয়াটার ডান্স। বিশাল কৃত্রিম এই ওয়াটার ডান্স (পানি নৃত্য) প্রায় সাড়ে ছয়হাজার সঙ্গীতের বাদ্যের সাথে সাথে ৩ থেকে ৬ মিনিটব্যাপী ওয়াটার ডান্স অনুষ্ঠিত হয়। প্রত্যেক ১৫-২০ মিনিট পরপর এই ওয়াটার ডান্স অনুষ্ঠিত হয়, সান্ধ্যকালীন সময়ে এই পানি নৃত্য সকল বয়সীদের আনন্দ দেবে, বিশেষ করে শিশুদের জন্য অধিক আনন্দদায়ক। শিশুদের জন্য এখানে গ্যাস বলসহ দুয়েকটি খেলার ব্যবস্থা রয়েছে। এটিতে প্রবেশ সম্পূর্ণ বিনামূল্যে।

বুর্জ আল আরব:
দুবাইয়ের বেশীরভাগ অংশই মূলত সমূদ্র ভরাট করে তৈরী একটি দেশ। এর মধ্যে সবচেয়ে আশ্চর্যজনক সমূদ্রের ভেতর পৃথিবীর একমাত্র ৭ তারকা হোটেল বর্তমানে পৃথিবীর অন্যতম আলোচিত বুর্জ আল আরব। বুর্জ আল আরবের অর্থ ‘আরবের ভবন’। প্রাচীন জাহাজের পালের সদৃশ ৩২১ মিটার উচ্চতা, ১২,০০,০০০ বর্গফুট ফ্লোর ৬০তলা ও ৩৬০ ডিগ্রী নাইটক্লাব বিশিষ্ট দুবাইয়ের প্রতীক হিসেবে পরিচিত ‘বুর্জ আল আরব’ জুমেইরা সমূদ্রসৈকতের একটি কৃত্রিম দ্বীপের মাঝে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই হোটেলটিকে পৃথিবীর অন্যতম সেরা ফটোজেনিক ভবন হিসেবে বলা হয়ে থাকে।

জুমেইরা সমুদ্র সৈকত:
দুবাই শহরের জুমেইরা বীচ অত্যন্ত বিশাল হলেও এর বিভিন্ন স্থানে ভিন্ন ভিন্ন সৌন্দর্য ধারণ করে আছে। এক জায়গা থেকে একসাথে এর বিশালতা অনুভব করা যায়না। অসাধারণ সৌন্দর্যমন্ডিত এই বীচ থেকে দুবাইয়ের প্রায় সবগুলো বিশাল ও চমৎকার বহুতল ইমারতগুলোর এক অসাধারণ সৌন্দর্য চোখে পড়বে, যা যেকোনো সৌন্দর্যপ্রিয় মানুষকে মোহিত করবে। আরেকটি বিশেষ দিক এখানে উল্লেখ করতেই হয়। দুবাইয়ের সৌন্দর্য প্রায় সকল স্থান থেকে দেখলেই কতোটা পরিকল্পিত তা বোঝা যাবে। যেকোনো স্থান থেকে তাকলেই কী আলোকপরিকল্পনা কি ইমারতের ডিজাইন বা নকশা সবকিছুই এতোটাই পরিকল্পিত যা বিস্ময়ের সৃষ্টি করে। বিমান থেকে শুরু করে যেকোনো স্থান থেকে একটি গোছানো জমকালো আভিজাত্য দেখে বিস্মিত না হয়ে উপায় কি?

ডেজার্ট সাফারি:
আরবে যাবেন কিন্তু মরুভূমিতে যাবেন না, তা কি হয়? মরুভূমিতে যাওয়ার জন্য এবং সেখানে আরবী সংস্কৃতির কিছু বিষয় উপভোগ করানোর জন্য বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যাদের সাথে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে যাওয়া যেতে পারে অথবা হোটেল কর্তৃপক্ষের সহায়তা নেয়া যেতে পারে। হোটেল কর্তৃপক্ষের সহায়তা নিলে খরচ বেশী হবে, বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই হোটেল কর্মচারীরা কমিশন নেয়। কমিশনের কারনে খরচ বেড়ে যায়। ‘ডেজার্ট সাফারি’তে যেতে হলে টূ্যর কোম্পানীকে অর্থ দেয়ার পর বেলা ৩টার দিকে আপনার বাসস্থান বা হোটেল থেকে ওদের গাড়ীতে নিয়ে যাবে দুবাই থেকে খানিকটা দূরে। যেখানে নজরে পড়বে শহরে ঘোরাফেরার জন্য ট্যাঙ্েিত চলার সময়ে বেশীরভাগ চালকের দেখা পাবেন ভারতীয়, পাকিস্তানী এবং বাংলাদেশীরা রয়েছে কিছু। সেখানে আরবীয়দের দেখা মিলবে নেহায়েত কম। কিন্তু মরুভূমিতে বেশীরভাগ গাড়ীচালকই আরবীয়। সেখানে ভারতীয় বা পাকিস্তানীদের সংখ্যা খুবই কম, বাংলাদেশীতো নেই বললেই চলে। পথে প্রত্যেকটি গাড়ীই একাধিক ছোট মার্কেটে থামবে। এই বিরতির পেছনে দুটি বিষয় রয়েছে একটি হচ্ছে ওইসব মার্কেটের দোকান থেকে গাড়ীচালকরা বকশিশ পায় এবং এই জায়গাগুলোতে কখনো চাকা পরিবর্তন এবং কখনো হাওয়া কমানো হয় মরুভূমিতে চলার সুবিধার্থে। ওসব দোকান থেকে কিছু কেনাকাটাও করতে পারবেন। মরুভূমির বুকে গাড়ী চালকদের গাড়ী চালনায় ভড়কে যাওয়াটা স্বাভাবিক হলেও সন্ধ্যার কিছুটা পরই পৌঁছে যাবেন মরুভূমির মাঝে আরবীয় নৃত্য বা ব্যালে ও আরবীয় খাবার যেখানে। বালুর মাঝে খড়ের ঘরে চারিদিকে ঘেরা এখানে দুম্বার মাংসসহ বিভিন্ন ধরণের খাবার ও পানীয় রয়েছে আপ্যায়নে। রাতে চমৎকার মোহনীয় আরবীয় বা ব্যালে নৃত্য উপভোগ করবেন। এখানে ইচ্ছে করলে সারারাত থাকা যায় আবার চলেও আসা যায়, আসার পথ ততোটা দূরত্বের নয়, যাওয়ার সময় অনেকটা ইচ্ছে করেই ওরা বেশ ঘুরিয়ে নিয়ে যায়। সারারাত মরুভূমিতে রাতকাটানো আরেক মজার অভিজ্ঞতা হবে বিশেষ করে মরুভূমিতে ভোরের সূর্যোদয়। নি:সন্দেহে এক মজার অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরবেন মরুভূমির বুক থেকে।

নৌবিহার:
কথাটি প্রচলিত হলেও এটি অনেকটাই সত্য, যতো রাত বাড়ে দুবাই ততো জেগে ওঠে। রাতের অসংখ্য এন্টারটেইনমেন্টর মধ্যে রাতের নৌবিহার উল্লেখযোগ্য। যদিও দিনের আলোতেও নৌবিহার হয়, কিন্তু বেশী আনন্দদায়ক রাতেরবেলা। সমূদ্রের একাংশের শান্ত জলে একধারে দুবাইয়ের আধুনিক ইমারত সমৃদ্ধ মনোরম আলোকসম্পাতে সমৃদ্ধ বিশাল শহর অপর দিকে পুরাণ দুবাই মাঝে অসংখ্য সুসজ্জি্বত আলোকসজ্জি্বত ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ভেসে বেড়ানো। হিন্দী, আরবী কিংবা ইংরেজী গানের ডামাডোলে কন্টিনেন্টাল খাবার ও পানীয় থাকছে বাড়তি আনন্দের খোরাক হিসেবে। যদি বেশ কিছু লোক একসাথে অংশ নিতে পারেন তবেই ভালো, অন্যথা খরচ একটু বেশী হতে পারে অথবা কোনো দলের সাথে গেলে আনন্দের মাত্রাটাও কম নয়। বিভিন্ন আকারের, বিভিন্ন সুবিসমৃদ্ধ বিভিন্ন মানের নৌকা, খাবার ইত্যাদি রয়েছে। অর্থও খরচ হবে গুণগত ও চাহিদা বা সুবিধা কতোটা তার ওপর ভিত্তি করে। জনপ্রতি ৪০ দেরহাম থেকে ১৫০ দেরহাম পর্যন্ত হতে পারে। তবে একটু সচেতনভাবে দরদাম করে নেয়াই উত্তম। নৌকায় রাতের দুবাইয়ের সৌন্দর্য উপভোগ এবং দুবাইয়ের একাংশ ঘুরিয়ে দেখানো হয়। এখানে সবচেয়ে বেশী নৌকা রয়েছে টূ্যর দুবাই কোম্পানীর। বেশীরভাগ নৌকাগুলোই পরিচালনায় ভারতীয়রা।

দুবাই মল:
পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ শপিং মল দুবাই মল। কিমি দীর্ঘ এই শপিং মলে পৃথিবীর প্রায় সব বিখ্যাত ব্র্যান্ডগুলোর দোকান রয়েছে। অত্যন্ত জমকালো-আধুনিক-সুপরিশর এই মল দিবারাত্রি ২৪ ঘন্টা খোলা থাকে। বুর্জ আল খলিফা সংলগ্ন এই শপিং সেন্টারের ভেতরেই সুদৃশ্য ও সুবৃহৎ দুবাই একু্যরিয়ামও আন্ডারওয়াটার জু্য (পানির নীচে চিড়িয়খানা)। পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ এই এ্যাকু্যরিয়ামে ৩৩০০০ এর বেশী বিভিন্ন আকারের এ্যাকু্যয়েটিক এনিমলস রয়েছে যার মধ্যে স্যান্ড টাইগার শার্ক ও স্টিংগ্রেস অন্যতম।
‘দুবাইয়ের সোনা’ মানেই নাকি স্বর্ণপ্রেমীদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় অলংকার। দুবাই মলে রয়েছে দুই শতাধিক দোকানসমৃদ্ধ বিশাল গোল্ড ছক। তবে এখানে উল্লেখ্য যে, দুবাইয়ের অন্যত্র একটি বিশেষ এলাকাজুড়ে গোল্ডছক রয়েছে। যেখান থেকে প্রয়োজনীয় স্বর্ণ বা স্বর্ণালঙ্কার একটু কম দামে পেতে পারেন।

ড্রাগন মার্ট:
দুবাই মূলত অধিক ধনিক শ্রেণীর জন্য উত্তম একটি দেশ বলেই মনে হয়। এখানে বেশীরভাগ জিনিসপত্র এবং লিভিং খরচ অনেক বেশী। বিশেষ করে দুবাই মলে অনেক বেশী দাম। এছাড়া সিটি সেন্টারসহ বেশ কিছু বিশাল শপিং মল রয়েছে যেগুলোর বেশীরভাগেই অধিক দাম। তবে যারা কিছুটা কম খরচে কেনাকাটা করতে চান তারা শহর থেকে কিছুটা দূরে চায়না মার্কেট হিসেবে পরিচিত ড্রাগন মার্কেটে যেতে পারেন। এটি ব্রান্ডিংয়ের দিক থেকে তেমন কোনো ব্র্যান্ড পাওয়া যাবেনা তবে তুলনামূলকভাবে কম খরচে কেনাকাটা করা যাবে।

আবুধাবি ও শেখ জায়ের মসজিদ
দুবাই থেকে একদিন অন্তত আবুধাবি ঘুরে আসা যায়। বাসে মাত্র ২০ দেরহাম দিলেই আবুধাবি পৌঁছা যায়, এছাড়া দলে ভারী হলে ১৪/২৮ সিটের বাসে যেতে পারেন সারাদিনের চুক্তিতে। আবুধাবিতে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মসজিদ শেখ জায়ের মসজিদসহ অসংখ্য দর্শনীয় স্থান রয়েছে। ধমর্ীয় বিষয়ে যারা দুবাইয়ে কিছুটা হতাশ হতে পারেন তারা কিছুটা হলেও আবুধাবিতে স্বস্তি পেতে পারেন। তবে সেখানে মসজিদে সকল ধর্মের বর্ণের বা পোষাকের পুরুষ মহিলার প্রবেশ করতে পারেন বা দর্শন করতে পারেন। আবুধাবি ছাড়াও শারজাহ বেশ কাছাকাছি, ঘুরে আসতে কয়েকঘন্টাই যথেষ্ট।

পৃথিবীর অস্টম আশ্চর্য মুসান্দাম দ্বীপ:
অবসর সময়টা যদি একটু বাড়তি থাকে তাহলে দুবাই থেকে প্রবেশ ভিসা নিয়ে ঘুরে আসা যায় পাশর্্ববর্তী দেশ ওমান, বাহরাইন ও মিশর। যেগুলোতে বেশীদিন সফরের সময় না থাকলেও স্বল্প কয়েকদিনেও ঘুরে আসা যায়। যদি না-ই যাওয়া হয় তাহলে পৃথিবীর অস্টম আশ্চর্য মুসান্দাম দ্বীপ ঘুরে আসতে যেনো ভূল না হয়। লেগুনে সাঁতারকাটা, ঐতিহ্যবাহী আরব জাহাজের চলা, নৌভ্রমণ, মাছের খেলা নি:সন্দেহে পূণরায় দুবাই ভ্রমণের জন্য নিমন্ত্রণ জানাবে।

প্রায় প্রত্যেকটি হোটেলেই ছোট বড় আন্তর্জাতিকমানের নাইটক্লাব রয়েছে যা বাড়তি আনন্দের খোড়াক জোগাবে। যদি বেশী সময় থাকে এবং ঘুরে বেড়ানোর ইচ্ছা থাকে তাহলে দুবাইয়ের জৌলুসের আরো কিছু উপভোগ করত পারবেন দুবাইয়ের দুইটি বিমানবন্দরই অত্যন্ত সৃদৃশ্য একটি আল মাকতুম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, এ্যাম্যুজমেন্ট পার্কস, ন্যাশনাল পার্কস, ্এ্যাক্যূইভেনচার ওয়াটার পার্ক, দুবাই উট রেস কোর্স, বাসটাকিয়া কোয়ার্টার, বোটানিক্যাল গার্ডেন, দুবাই চিড়িয়াখানা, দুবাই ইন্টারনেট সিটি, পাম জেবেল আলী আইল্যান্ড, দি ওয়ার্ল্ড আইল্যান্ড, দুবাই মিউজিয়াম, কোর্টইয়ার্ড আর্ট গ্যালারী, ক্রিক পার্ক, মুশরিফ পার্ক, আলী বীন আবি তালিব মসজিদ, গ্রান্ড মসজিদ, দুবাই ফেস্টিভ্যাল সিটি, দুবাই কমিউনিটি থিয়েটার এন্ড আর্টস, মরোক্কান বাথ (শুধুমাত্র মহিলাদের জন্য), ম্যানগ্রোভ দ্বীপের কাছে কাকড়া শিকার প্রভৃতি।

এসব আনন্দের মাঝে বিভিন্ন স্থানে দেখা মিলবে অসংখ্য অসহায় বাংলাদেশীদের। যাদের বয়স ২০ থেকে ৩০ এর মধ্যে। এদের কেউ কেউ পার্কে বা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে মৃদুস্বরে ‘ব্যালেন্স ব্যালেন্স’ বা ‘ডু্য’ ‘সালাত’ বলে আওয়াজ দিচ্ছে। কখনো কখনো পুলিশ এদের ধাওয়া করে। ওদের সাথে কথা বললেই জানতে পারবেন তাদের কারো বাড়ী কুমিল্লা, কারো নরসিংদী কারো সিরাজগন্জ _ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে। অসহায় এসব যুবক ২ থেকে ৩লাখ টাকা খরচ করে (কেউ কেউ গ্রামের ভিটামাটিসহ জমি বিক্রি করে) দুবাই এসেছে ভাগ্যান্বেষনে , পরিবারকে এবং নিজে আরো একটু সচ্ছল হওয়া আশা নিয়ে। এখানে আসার কয়েকদিন বা কয়েকমাসের মাথায় সে আশার গুড়ে বালি। বরং সর্বহারা এসব যুবকরা দেশে ফেরার জন্য ছট্ফট্ করছে, ডুকরে কাঁদছে, যে কান্না যেকোনো হৃদয়বান মানুষকে কাঁদাবে। কিন্তু ওরা দেশে আসার পথও পায়না। এরা জেলে যেতে চায় কিন্তু পুলিশ তাদের জেলে নিতেও আগ্রহী নয়। বাঙালিরা কোনোমতে একবেলা খেয়ে অথবা না খেয়ে দিনাতিপাত করছে এদের সংখ্যা হাজার হাজার।
এসবের পরেও জীবন ও জীবিকার তাগিদে যাওয়া বাংলাদেশীদের কষ্ট নিজের বুকে চেপে যদি সবগুলো দর্শণীয় স্থান ঘুরে আসা যায় তারপরও দুবাইয়ের আকাশ বাতাস হাতছানি দেবে আবারো দুবাইয়ে যেতে, হৃদয়ের মাঝে সে আহ্বান ধ্বণিত হবে বারংবার।