দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংকের পর এবার জাইকা ও এডিবি বিশ্বব্যাংকের মতো ঋণ সহায়তা স্থগিত করেছে। সবমিলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৯টি জেলার প্রায় ৩ কোটি মানুষের রাজধানী ঢাকা ও পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন থমকে গেল।

যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত এ প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের মতো জাইকা এবং এডিবি সাহায্য বন্ধ রাখবে বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে। পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য ২৯০ কোটি ডলারের বাজেটের মধ্যে ২৩১ কোটি ডলার স্থগিত হয়ে গেল। এ অবস্থায় পদ্মা সেতু নির্মাণের বিষয়টি আরও অনিশ্চিত ।

গতকাল শনিবার চ্যানেল আইয়ের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাতে টোকিওতে জাইকার সদর দফতরে জাইকা বাংলাদেশ ডেস্কের পরিচালক ইচিগুচি তোমোহিদ বলেছেন, দুর্নীতির অভিযোগ সুরাহা না হওয়া এবং বিশ্বব্যাংক পুরো প্রকল্পের সমন্বয়ক_ তার সিদ্ধান্তের ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করে। তিনি বলেন, আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে শক্ত। যেহেতু পদ্মা প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগ করেছে, কানাডীয় পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে। আমরা একটু ‘ধীরে চলো নীতি’ অনুসরণ করছি; সেহেতু জাইকা ৬১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ সহায়তা আর প্রত্যাহার করার কথা বলছে না। তবে বাংলাদেশ সরকার এ অর্থ ব্যবহার করতে পারার যে ক্ষমতা তা আমরা আর কিছুদিন সম্প্রসারণ করছি।
বিভিন্ন বিষয়ে দুর্নীতির অভিযোগ পাঠানো হয়েছে টোকিওতে জাইকার অধিদফতরে। তবে এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে চান না জাইকার কর্মকর্তারা।
অন্যদিকে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর অ্যালেন গোল্ডস্টেইনও বেসরকারি টিভি চ্যানেলের সাক্ষাতে বলেছেন, দুর্নীতি দূর হলে এবং স্বচ্ছতা ফিরে এলে তারা সহায়তা দিতে বিবেচনা করবে। পদ্মা সেতু বাস্তবায়নে দুর্নীতিমুক্ত ও স্বচ্ছতা দেখতে চায় বিশ্বব্যাংক।

৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৯০ কোটি ডলার। বিশ্বব্যাংক ১২০ কোটি ডলার ছাড়াও এডিবি ৬১ কোটি, জাইকা ৪০ কোটি এবং ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক ১৪ কোটি ডলার ঋণ সহায়তার চুক্তি হয়। সেতু নির্মাণে এডিবি সহজ শর্তে বাংলাদেশকে ৬১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেয়।

মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের ১৯ জুন দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতুর নকশা প্রণয়নের প্রস্তাব মন্ত্রিসভা অনুমোদন করেন। ২০০৯ সালের ২৯ জুন পরামর্শকের সঙ্গে চুক্তি হয়। ২০০৯ সালের ২৯ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেন ২০১০ সালে পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হয়ে ২০১৩ সালের মধ্যে শেষ করা হবে।

এদিকে দুদকের চেয়ারম্যান গোলাম রহমান সাংবাদিকদের জানান, আমরা বিশ্বব্যাংকের নালিশের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি। তদন্তের প্রয়োজনে বিশ্বব্যাংক ও কানাডীয় কর্তৃপক্ষের কাছে তথ্যাদি চেয়েছি। এছাড়া সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের কাছ থেকেও নথিপত্র চাওয়া হয়েছে।

 মহাজোট সরকার গঠনের ১৩ দিনের মাথায় ২০০৯ সালের ১৯শে জানুয়ারি সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় পদ্মা সেতু প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। ২৯শে জানুয়ারি পরামর্শক কমিটির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। পরামর্শক কমিটি ২০০৯ সালের ২রা ফেব্রুয়ারি থেকে বিস্তারিত ডিজাইন প্রণয়নের কাজ শুরু করে।

এরই মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ, এলাকার ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং র‌্যাপ-১ এর আওতায় চারটি পুনর্বাসন এলাকার মাটি ভরাট কাজও শেষ করা হয়েছে। এছাড়া প্রধান সেতু, অ্যাপ্রোচ রোড এবং রিভার টার্নিং ওয়ার্কের বিস্তারিত ডিজাইনও চূড়ান্ত করা হয়েছে। এখন দুর্নীতির কারণে সবকিছু আটকে গেল।