লিবিয়ার শাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফি নিহত হয়েছেন। গাদ্দাফির জন্মশহর সিরতে বিদ্রোহীরা দখলে নেওয়ার সময় যুদ্ধে আহতাবস্থায় আটক হওয়ার পর তিনি মারা যান।

লিবিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গাদ্দাফি মারা গেছেন এবং তার লাশ নিরাপত্তাজনিত কারণে গোপন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ সময় গাদ্দাফির মুখপাত্র মুসা ইব্রাহিমকে আটক করা হয়েছে এবং তার সামরিক প্রধান নিহত হয়েছেন।

এনটিসির এক কর্মকর্তা জানান, গাদ্দাফির মৃতদেহ গোপন স্থানে নেয়া হচ্ছে। নিরাপত্তার কারণে জায়গার নাম গোপন রাখা হয়েছে। মিসরাতা শহরে এনটিসি কর্মকর্তা মোহাম্মেদ আবদুল কাফি বলেন, গাদ্দাফির লাশ আমাদের ইউনিটের একটি গাড়িতে রয়েছে এবং নিরাপত্তার কারণে আমরা তা গোপন একটি স্থানে নিয়ে যাচ্ছি। তবে নির্ভরযোগ্য কোন সূত্র তাৎক্ষণিকভাবে এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেনি। বিভিন্ন বার্তা সংস্থা এনটিসির উদ্ধৃতি দিয়ে গাদ্দাফি ধৃত এবং মৃত এ খবর প্রকাশ করলেও ন্যাটো বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে সরকারিভাবে এ খবর এখনো সমর্থিত হয়নি।

এনটিসির একজন যোদ্ধা বিবিসিকে বলেন, সিরতে শহরের একটি গর্তের মধ্যে গাদ্দাফিকে আটক করা হয়। লিবিয়ার সাবেক নেতা তাকে গুলি না করার জন্য মিনতি করেন বলে তিনি জানান। ওই যোদ্ধা একটি সোনালি রঙের পিস্তল দেখিয়ে জানান, এটি তিনি কর্নেল গাদ্দাফির কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছেন।

এনটিসি কর্মকর্তা আবদেল মজিদ সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে জানান, পালানোর চেষ্টাকালে গাদ্দাফি মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। তবে গাদ্দাফির আটকে অংশ নেওয়া একজন সেনা সদস্য জানান, গাদ্দাফি চিৎকার করে বলতে থাকেন_ গুলি করো না। গাদ্দাফিকে ধরে ফেলা হয় ভোরের দিকে। তিনি পালানোর চেষ্টা করলে ন্যাটোর জঙ্গিবিমান হামলা চালায়। এতে তার ২ পায়ে ও মাথায় গুলি লাগে। একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পরে তিনি মারা যান বলে ওই কর্মকর্তার দাবি। একই সঙ্গে গাদ্দাফিকে বন্দী করার সময় তার সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান আবু বকর ইউনূস জাবের নিহত হয়েছেন বলেও তিনি জানান। এছাড়া ওই সময় গাদ্দাফি বাহিনী ও বিদ্রোহী বাহিনী ২ পক্ষের লড়াইয়ে অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে এনটিসির প্রধান মোস্তাফা আব্দুল জলিল কিছুক্ষণের মধ্যে দেশটির জাতীয় টিভিতে ভাষণ দেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। লিবিয়ার তথ্যমন্ত্রী মাহমুদ সাম্মাম বলেন, যোদ্ধারা তাকে জানিয়েছে গাদ্দাফি মারা গেছেন।

এনটিসির কর্মকর্তার মোহামেদ লেইথ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমকে এর আগে বলেছেন, গাদ্দাফিকে সিরতে থেকে আটক করা হয়েছে। তিনি গুরুতর আহত। তবে এখনো শ্বাস-প্রশ্বাস চলছে।

গত ৪২ বছর ধরে গাদ্দাফি লিবিয়া শাসন করেছেন। গত আগস্টে ব্যাপক গণঅভ্যুত্থানের মুখে তার সরকারের পতন হয়। তারপরও গাদ্দাফি তার অনুগত সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করে ক্ষমতা অাঁকড়ে থাকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। গত এক সপ্তাহ ধরে গাদ্দাফির জন্মশহর দখলে নেওয়ার জন্য তার অনুগত বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহীরা জোর লড়াই চালিয়ে আসছে।

১৯৬৯ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে কর্নেল গাদ্দাফি লিবিয়ার ক্ষমতায় আসেন। কিন্তু চলতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে এক গণঅভ্যুত্থানের জের ধরে তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত বিচারের জন্য কর্নেল গাদ্দাফির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। লিবিয়াতে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরুর পর গত আগস্টে গাদ্দাফির ৪২ বছরের শাসনের সমাপ্তি ঘটে।