তুরস্কে ভয়াবহ ভূমিকম্পে বহু মানুষ হতাহতের আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ ভূমিকম্পে ব্যাপক ধংসযজ্ঞের কথা জানাচ্ছে বার্তা সংস্থাগুলো৷ ভূমিকম্পের ছোঁয়া লেগেছে ইরানেও৷ ইতিমধ্যে তুরস্কের ত্রাণ সংস্থাগুলো দুর্গত এলাকায় কাজ শুরু করেছে৷

বার্তা সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী রোববার স্থানীয় সময় দুপুরে এই ভূমিকম্প সংঘটিত হয়৷ দেশটির দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের ভান শহরের কাছে এই ভূমিকম্প প্রথম অনুভূত হয়৷ তবে ভূমিকম্পের মাত্রা কত ছিলো তা নিয়ে দুই ধরণের কথা শোনা গেছে৷ তুরস্কের কর্তৃপক্ষ প্রথমে ভূমিকম্পের মাত্রা রিখটার স্কেলে ৬.৬ বলে জানায়৷ কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের জিওলজিক্যাল সার্ভে, যাদের তথ্য মূলত গোটা বিশ্বে বেশি গ্রহণযোগ্য তারা জানায় যে ভূমিকম্পটি ছিল আরও অনেক বেশি শক্তিশালী৷ তারা জানায়, ভূমিকম্পের শক্তি ছিল রিখটার স্কেলে ৭.৩ মাত্রার৷ এরপর অবশ্য তুর্কি পর্যবেক্ষকরা তাদের তথ্য সংশোধন করে৷ এমনকি আফটার শকের মাত্রাও রিখটার স্কেলে ৫ এর ওপর ছিল বলে জানায় মার্কিন জিওলজিক্যাল সার্ভে৷ জানা গেছে, ভান শহরের ১৯ কিলোমিটার উত্তর পূর্বে এবং মাটির নীচের সাত কিলোমিটার গভীরে এই ভূমিকম্পের উৎস৷ জায়গাটি ইরানের সঙ্গে সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত৷ ফলে এই ভূমিকম্পের ঢেউ ইরানেও বেশ ভালোভাবে অনুভূত হয়েছে৷

ভূমিকম্পের সময় গোটা ভান এবং তার আশেপাশের এলাকা ভীষণভাবে নড়ে ওঠে৷ ইন্টারনেটে প্রকাশিত হয়েছে বেশ কিছু ভিডিও৷ এসব ভিডিওতে দেখা যায় ভূমিকম্পের ফলে বাড়িঘর নড়ে উঠেছে, ঘরে থাকা আসবাবপত্র উল্টে পড়ছে, আতঙ্কিত মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে, অনেকে ভয়ে ছোটাছুটি করছে৷

স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলোর তথ্যানুযায়ী, ভুমিকম্পের সময় বেশ কিছু দালানকোঠা ভেঙ্গে পড়ে৷ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের ভিডিও এবং ছবিতে দেখা গেছে বড় বড় বেশ কিছু ভবন ধসে পড়েছে৷ তুর্কি উপ প্রধানমন্ত্রী বেসির আতালায় জানিয়েছেন, ভান শহরে অন্তত দশটি ভবন ধসে গেছে৷ এছাড়া ভান শহরের আশেপাশের আরও ২৫ থেকে ৩০টি ভবন ধসে গেছে বলে জানান তিনি৷

তবে তুর্কি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের মতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি৷ সেখানকার প্রধান মুস্তাফা এর্দিক বলেন, তাদের ধারণা এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে অন্তত এক হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে৷ এছাড়া পাঁচশ থেকে এক হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে বলেও তিনি আশঙ্কা করেন৷ ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্থ এর্কিস শহরের মেয়র জুলফুকার আরাপোগ্লু বলেন, আমরা জরুরি সাহায্যের জন্য অপেক্ষা করছি৷ তুরস্কের শিয়ান বার্তা সংস্থা জানায়, এর্কিস শহরে ৩০ জন প্রাণ হারিয়েছে এই ভূমিকম্পে৷

এদিকে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা রোববার পরিদর্শন করেন তুর্কি প্রধানমন্ত্রী রেচেপ তাইয়েপ এরদোয়ান৷ সোমবার তিনি এক জরুরি বৈঠক করতে যাচ্ছেন তাঁর সরকারের মন্ত্রীদের সঙ্গে৷ এতে সার্বিক পরিস্থিতি এবং উদ্ধার তৎপরতা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে৷ তবে রোববার থেকেই দুর্গত এলাকাতে উদ্ধার তৎপরতা শুরু হয়েছে বলে বার্তা সংস্থাগুলো জানিয়েছে৷ এদিকে তুরস্কের এই অবস্থায় এগিয়ে এসেছে ইসরায়েল৷ সেখানকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইগাল পালমোর জানিয়েছেন, তারা যে কোন ধরণের সহায়তা দিতে প্রস্তুত৷ এখন তারা আংকারার কাছ থেকে জবাব পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন৷

উল্লেখ্য, তুর্কির এই অঞ্চলটি ভূমিকম্প-প্রবণ এলাকার মধ্যে পড়েছে৷ ভূপৃষ্ঠের টেকটোনিক প্লেটগুলোর ফল্ট লাইনের ওপর অবস্থিত হওয়ায় এখানে মাঝে মধ্যেই শক্তিশালী ভূমিকম্প হয়৷ বিগত ১৯৯৯ সালে ইজমিত শহরে ৭.৬ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল৷ সেই সময় প্রাণ হারিয়েছিল ১৭ হাজার মানুষ৷