নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সেনা মোতায়েন হচ্ছে না। এ নিয়ে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এটিএম শামসুল হুদা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সিদ্ধান্ত নেয়ার পরও এনসিসি নির্বাচনে সেনা মোতায়েন না করে সরকার আইন লঙ্ঘন করেছে। তারা চিঠির কোন জবাব দেয়নি। কোন সহযোগিতা করেনি।

তিনি বলেন, এ পরিস্থিতিতে কমিশন ইচ্ছে করলে নির্বাচন বন্ধ করে দিতে পারত। তবে ২ নভেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে বলেই তারা পিছু হটেননি। গতকাল নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে এ সংক্রান্ত এক জরুরি বৈঠক শেষে সিইসি সাংবাদিকদের জানান, সেনা মোতায়েনের পরিবর্তে অতিরিক্ত র‌্যাব ও পুলিশ মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

সেনা মোতায়েন না করার প্রসঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করে ডা. সেলিনা হায়াত আইভি বলেন, সেনা মোতায়েন না করলেও আমি নির্বাচনের মাঠ ছাড়ব না। লক্ষ জনতাই আমার সেনাবাহিনী। একজন মেয়র প্রার্থী চায়নি বলে এ নির্বাচনে সেনা মোতায়েন হয়নি।

ডা. সেলিনা হায়াত আইভি বলেন, সারা জাতির সামনেই প্রধান নির্বাচন কমিশনার ঘোষণা করেছিলেন শুক্রবার থেকে সেনা মোতায়েন করবে। আমরা আশাও করেছিলাম যথাসময়ে সেনা মোতায়েন হবে। কিন্তু তা হয়নি। তাই অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করছি। সেনা মোতায়েন না হলে নির্বাচনে যাবেন কি-না এবং নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি নির্বাচনের মাঠ ছাড়ব না। সেনা মোতায়েনের দাবি ছিল সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য। এটা আমার ব্যক্তিগত দাবি নয়, জনগণের দাবি। একই সঙ্গে আইভি বলেন, আমি নির্বাচনের মাঠে আছি। হাজার হাজার জনতা আমার পাশে আছে। এসব জনতাই আমার সেনাবাহিনী । তারা ভোট কেন্দ্র পাহারা দেবে। তিনি বলেন, আমি নির্বাচনের মাঠে আছি, খাকব, থাকব, থাকব।

আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী শামীম ওসমান সেনা মোতায়েন হওয়া, না হওয়া নিয়ে তার কোন মাথাব্যথা নেই। তিনি অভিযোগ করেছেন, নির্বাচনে বিশেষ কাউকে খুশি করতে চেষ্টা করছে নির্বাচন কমিশন। তিনি বলেন, সেনাবাহিনী কেন মোতায়েন হয়নি আমি জানি না। তবে তারা না আসলেও আমার কোন ক্ষতি নেই।

সেনা প্রসঙ্গে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন এখন জাতীয় ইস্যু, তাই তা জাতীয়ভাবেই সিদ্ধান্ত হবে। নির্বাচন কমিশন সেনা মোতায়েন নিয়ে লুকোচুরি খেলা চলেছিল। আমরা এ খেলার অবসান চাই। তিনি বলেন, সেনা মোতায়েন না করার ফলে যদি ভোট কারচুপি কিংবা চুরি হয় তাহলে এর দায়-দায়িত্ব সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে নিতে হবে। এবং এখান থেকে সারাদেশে সরকার পতনের আন্দোলন শুরু হবে।

 

এ দিকে আজ সকালের মধ্যেই নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়েছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পদত্যাগ দাবি করেছে দলটি। সরকার এ নির্বাচনের ফলাফল পক্ষে নিতে চাইলে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে বিএনপি। গতকাল সন্ধ্যায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান এসব দাবি তুলে ধরেন। নোমান বলেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নিজেদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ব্যর্থ হওয়ায় স্বপ্রণোদিত হয়ে নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ করা উচিত বলে মনে করে বিএনপি। একই সঙ্গে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অবিলম্বে নারায়ণগঞ্জে সেনাবাহিনী মোতায়েনেরও দাবি করছি।