রোববার সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষ হওয়ার পর পয়েন্ট অব অর্ডারে সরকারের মন্ত্রী এবং উপদেষ্টাদের তুলোধুনা করলেন আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতারা। যুক্তরাজ্যে চিকিত্সাধীন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য প্রবীণ রাজনীতিক আবদুর রাজ্জাককে কোনো মন্ত্রী এবং দূতাবাসের লোকজন দেখতে না যাওয়া, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাদের বিভিন্ন বিষয়ে খবরদারি করা এবং সংসদে অধিকাংশ মন্ত্রীর উপস্থিত না থাকায় সংসদে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন তারা।পয়েন্ট অব অর্ডারে নানা বিষয় নিয়ে আরও কথা বলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, শেখ সেলিম ও স্বতন্ত্র সদস্য ফজলুল আজিম।

তোফায়েল আহমেদ বলেন, “উপদেষ্টাসহ ৫০ জনের বেশি ক্যাবিনেটে রয়েছেন। উপদেষ্টারা ক্যাবিনেটের বৈঠকে অংশ নেন। আমি বঙ্গবন্ধুর সেক্রেটারি ছিলাম, কিন্তু কখনও ক্যাবিনেট বৈঠকে অংশ নিতে পারিনি। অর্থ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কে চালান উপদেষ্টা নাকি মন্ত্রীরা- আমরা নিজেরাও অবাক হয়ে যাই। আজকে মাত্র ছয় জন মন্ত্রী সংসদে উপস্থিত রয়েছেন।”

তিনি বুধবার লন্ডন থেকে ফিরেছেন উল্লেখ করে বলেন, “সেখানে প্রবীণ নেতা আবদুর রাজ্জাক মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। বৃটেনস্থ বাংলাদেশের হাইকমিশনার তার খোঁজ নেয়নি। দূতাবাসগুলোর কাজ কী আমি ভেবে পাই না। আমি হাইকমিশনারকে ফোন করলাম। জানতে চাইলাম আবদুর রাজ্জাককে দেখতে এসেছিলেন কি না। তার সহজ উত্তর ‘না’। আমার কথার পর অবশ্য হাইকমিশনার সে দিনই আবদুর রাজ্জাককে দেখতে যান।”

শেখ ফজলুল করিম সেলিম উপদেষ্টাদের খবরদারির সমালোচনা করে বলেন, “আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থেকে চলে গেলে উপদেষ্টাদের চেহারাও দেখা যাবে না।”

তিনি আরো বলেন, “আবদুর রাজ্জাককে লন্ডনের হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলাম। দূতবাসের পিয়ন পর্যন্ত তাকে দেখতে যায়নি। এটা দুঃখজনক। এমনকি অনেক মন্ত্রী লন্ডন ঘুরে এসেছেন, কিন্তু তাকে দেখতে যাননি। এই যদি পরিণতি হয় তাহলে রাজনীতির প্রতি রাজনীতিবিদ ও দেশের মানুষের আগ্রহ থাকবে না। রাজ্জাক সাহেব আমাকে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী তাকে ফোন করে খোঁজখবর নিয়েছেন।”

সংসদে আইটেম থাকুক আর না থাকুক মন্ত্রীদের সংসদে উপস্থিত থাকতে হবে জানিয়ে সংসদে উপস্থিত ছয় জন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, আজ কোথায় মন্ত্রিসভা। এই যদি সংসদের অবস্থা হয় জনগণের কাছে আমরা কী বলব।

শেয়ারবাজার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “অর্থমন্ত্রী বিনিয়োগকারীদের ফটকাবাজ বললে কি শেয়ারবাজার থাকে? উপদেষ্টারাও উল্টাপাল্টা কথা বলেন। আওয়ামী লীগ সরকার চলে গেলে এই উপদেষ্টাদের চেহারাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাদের জবাবদিহিতা নেই। তারা দেশের জনগণের জন্য কী করবেন? তারা প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা। প্রধানমন্ত্রীকে পরামর্শ দিতে পারেন। কিন্তু উল্টাপাল্টা কথা বলে তারা সরকারকে বাজে অবস্থায় ফেলে দেন।”

তিনি অর্থমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বলেন, “প্রতিদিন সূচক কমছে। শেয়ারবাজারকে স্থিতিশীল করতেই হবে। শেয়ারবাজারে যারা বিনিয়োগ করছেন তারা দেশের নাগরিক। তাদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে কথা বলতে পারেন না।”

সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, “সংসদে না এসে অন্য কোনো স্থানে হাজিরা দিয়ে মন্ত্রীরা চাকরি পাকাপোক্ত করেন। এই অবস্থার পরিবর্তন হওয়া দরকার। শেয়ারবাজার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, শেয়ারবাজার নিয়ে অহেতুক কথা বলে বিরাগভাজন হবেন না। ব্যাংকগুলো শেয়ারবাজারে ১০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের ঘোষণা দিলো। কিন্তু এখনো এক ভাগ টাকাও বিনিয়োগ হল না। এটা অনাকাঙ্ক্ষিত।

লন্ডনে নিযুক্ত হাইকমিশনারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “রাজ্জাকের মতো জাতীয় নেতার পাশে হাইকমিশনাররা দাঁড়াবেন- এটাই জনগণ প্রত্যাশা করে।”

ফজলুল আজিম বলেন, “একেকজন অনির্বাচিত উপদেষ্টা যাদের জ্ঞানের গরিমার তুলনা নেই, নির্বাচনে দাঁড়িয়ে করে জনগণের কাছে ভোট চাইতে গেলে তাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হবে। তারা রুলস অব বিজনেজ ভঙ্গ করে মন্ত্রিসভার বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী এসেছেন। তাদের সঙ্গে যেসব চুক্তি হয়েছে তা ব্যাক ডোরে বসে কারা ঠিক করেছেন? উপদেষ্টারা কী করেছেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরা এ বিষয়ে কিছুই জানতেন না। আমরা এটা জানতে চাই।

সংসদ সদস্যদের এসব বক্তব্যের পর অধিবেশনের সভাপতি সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু বলেন, “মন্ত্রীরা সংসদে উপস্থিত থাকবেন না, এটা ভালো দৃষ্টান্ত নয়। ইচ্ছা করলে আসবেন আর ইচ্ছা না করলে আসবেন না- এটা হতে পারে না।” তিনি বলেন, “আবদুর রাজ্জাক কেবল সংসদ সদস্যই নন। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। লন্ডনস্থ হাইকমিশনারের রাজ্জাককে দেখতে না যাওয়া হূদয়বিদারক। সরকারদলীয় চিফ হুইপকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, “পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলবেন হাইকমিশনাররা এ রকম ধৃষ্টতা পান কোথা থেকে।”