জানতে হবে জাতীয় সঙ্গীতের প্রথম স্তবক। জানতে হবে উইলিয়াম শেক্সপিয়র। জানতে হবে বায়রন। জানতে হবে বিটল্স। জানতে হবে আরও অনেক কিছু। ব্রিটেনের স্থায়ী নাগরিকত্ব পেতে হলে অভিবাসীদের এমন অনেক জিনিস সম্পর্কে আদ্যোপান্ত জানতে হবে, যা হয়তো কোনও সাধারণ ব্রিটিশ নাগরিকও জানেন না।

অভিবাসন রুখতে এই নতুন পন্থাই নিয়েছে ডেভিড ক্যামেরনের সরকার। ব্রিটেনের ইতিহাস, রাজনীতি, সাহিত্য, ধর্ম ও সংস্কৃতির নানা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব এবং উল্লেখযোগ্য ঘটনার জ্ঞান থাকতে হবে অভিবাসীদের। কারণ ২০০৫ সালের লেবার সরকার অভিবাসীদের জন্য ৪৫ মিনিটের যে পরীক্ষা (‘লাইফ ইন দি ইউ কে টেস্ট’) চালু করেছিল, সেই পরীক্ষা পদ্ধতিকেই ঢেলে সাজছে কনজারভেটিভ সরকার। ওই পরীক্ষায় বসতে হলে ‘দ্য লাইফ ইন দি ইউ কে হ্যান্ডবুক’ ঝালিয়ে নিতে হত আবেদনকারীকে। সেই বইটিও আমূল পাল্টে ফেলা হচ্ছে। ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টেরেসা মে জানিয়েছেন, আগে যে সব বিষয়ে প্রশ্ন রাখা হত, সেগুলো আর প্রাসঙ্গিক নেই। ব্রিটেন যে সব আবিষ্কার এবং উদ্ভাবন করেছে, যিনি ব্রিটেনের নাগরিকত্ব পাবেন তাঁকে অবশ্যই সে সব সম্পর্কে জানতে হবে। পাশাপাশি জানতে হবে ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গল থেকে ডিউক অফ ওয়েলিংটন। ট্রাফালগার বা ওয়াটারলু যুদ্ধ এবং কিং জেমসের বাইবেল। সঙ্গে জেন অস্টেন, চার্লস ডিকেন্স, টমাস হার্ডি, রবার্ট ব্রাউনিং তো আছেই।

ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় এক বার্তায় বলেন আমাদের দেশ সবাইকে অভ্যর্থনা জানায়। কিন্তু সবাইকে এ দেশের আইন মেনে চলতে হবে এবং বুঝতে হবে, এমন অনেক কিছু আছে, যা অন্য দেশের আইনি ব্যবস্থায় গ্রহণীয় হলেও এ দেশে মানা হবে না। এ দেশের আইনকে যাঁরা সম্মান করবেন না, তাঁরা এ দেশের স্থায়ী নাগরিকত্ব পাওয়ার যোগ্য নন। ‘দ্য লাইফ ইন দ্য ইউ কে হ্যান্ডবুক’-এ অভিবাসীদের জানানো হচ্ছে, ব্রিটেন ঐতিহাসিক ভাবে ‘খ্রিস্টান দেশ।’ মুসলিম কট্টরপন্থীদের আক্রমণ করে বলা হচ্ছে, ব্রিটিশ সমাজে চরমপন্থা এবং অসহিষ্ণুতার জায়গা নেই। নিজের ধর্ম বেছে নেওয়ার অধিকার সকলের আছে। আবার সেই ধর্ম চর্চা করা বা না-করারও অধিকার আছে। নাগরিকত্ব পাওয়ার এই কড়াকড়িতে ব্রিটেনেরই একটি সংবাদপত্র সম্পাদকীয়তে লিখেছে: ‘‘এ বার দেখা যাবে, এ দেশের নাগরিকদের চেয়ে নতুন নাগরিকরাই ব্রিটেন সম্পর্কে বেশি জানে!”