শারাপোভার হার
ফেভারিট কিভিতোভা

শারাপোভার হারে উইম্বলডন যেমন অনেকটাই সৌন্দর্য হারাল, তেমনই একটা জিনিসও স্পষ্ট হয়ে গেল। ফেভারিটদের বিরুদ্ধে অঘটন ঘটানোর জন্য তরুণ তুর্কিরা এ বার উইম্বলডনে একটা ‘কমন’ রাস্তা নিচ্ছে। বিগ সার্ভ। যত পারো প্রচণ্ড জোরে সার্ভিস করে পয়েন্ট কুড়োও। নাদালকে এই স্টাইলে খেলে রসোল হারিয়েছিল। মেয়েদের বিশ্বসেরা শারাপোভাকে ৬-৪, ৬-৩ ছিটকে দিল বছর তেইশের জার্মান সাবিন লিসিকি। ম্যাচ পয়েন্টটাও পেল দ্বিতীয় সার্ভে ‘এস’ মেরে। ভাবা যায়! আসলে হার্ডকোর্টে বিগ সার্ভ পড়ে উঁচুতে ওঠে। ক্লে-তে স্লো হয়ে যায়। দুটো সারফেসেই রিটার্ন করা তাই অপেক্ষাকৃত সহজ। কিন্তু ঘাসের কোর্টে বল পড়ে ‘স্কিড’ করে বলে বিগ সার্ভ ঠিক মতো রিটার্ন করা প্রচণ্ড কঠিন। বিশেষ করে উইম্বলডনে দ্বিতীয় সপ্তাহে ঘাসের কোর্ট আরও জমাট বাঁধায় বল আরও ‘স্কিড’ করে।

শারাপোভার মতোই নিক বলিতিয়েরি অ্যাকাডেমিতে খেলে লিসিকি। প্রতিদ্বন্দ্বীর নাড়িনক্ষত্র জানে। যদিও আগের তিনটে সাক্ষাতেই হেরেছে। এখানেই গত বার দু’জনের সেমিফাইনালের স্কোরলাইন হুবহু এক ছিল। শুধু শারাপোভা জিতেছিল। কিন্তু আজ এ বারের উইম্বলডনে মেয়েদের বিভাগের দ্রুততম সার্ভিসের (ঘণ্টায় ১২০ মাইল) কোনও জবাব শীর্ষ বাছাইয়ের কাছে ছিল না।

মজার ব্যাপার, আবার সেই ফেভারিটদের কবর বলে কুখ্যাত উইম্বলডনের দু’নম্বর কোর্টে শারাপোভা হারল। আমাদের সময় এক নম্বর কোর্টকে ফেভারিটদের কবর বলা হত। আসলে ফেভারিট তারকারা ঐতিহ্যশালী সেন্টার কোর্টের পরিবেশ এত পছন্দ করে যে, সাইড স্টেডিয়ামে নামলে হয়ত মানসিক ভাবে সুস্থির থাকে না। শারাপোভার বিদায়ে গত বারের চ্যাম্পিয়ন কিভিতোভা আমার মতে ফের ফেভারিট। একে ঘাসে দুর্দান্ত খেলে, তার ওপর বাঁ-হাতি। তবে এ দিন শিয়াভোনেকে বেশ কষ্ট করে হারিয়ে কিভিতোভা কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে। যদিও ওর পরের প্রতিদ্বন্দ্বী সেরেনাও কোনওক্রমে জিতেছে স্বেদোভার বিরুদ্ধে।

মাশা, মানে মারিয়া শারাপোভার বিদায়ের সময়ই সেন্টার কোর্টে প্রায় বিদায় ঘটে যাচ্ছিল ফেডেরারের। ফেডেরারের চেয়েও এক বছরের বড় জেভিয়ার মালিসে। তার বিরুদ্ধে ২-০ সেটে এগিয়ে গেলেও দুটো সেটের মাঝে বেশ কিছু সময় লকাররুমে গিয়ে কাটিয়ে আসে ফেডেরার। তার পরেই তৃতীয় সেটটা হারে আর এমন ক্লান্ত দেখাতে শুরু করেছিল ফেডেরারকে, মনে হচ্ছিল আজই গেল! চতুর্থ সেটেও একটা ব্রেকে পিছিয়ে পড়েছিল। কিন্তু তার পরে মালিসের কিছু জঘন্য ‘আনফোর্সড এরর’-এর সৌজন্যে ফেডেরার ১-২ থেকে ৫-২ এগিয়ে শেষ পর্যন্ত ৭-৬ (৭-১), ৬-১, ৪-৬, ৬-৩ ম্যাচ বের করে নেয়। টানা ৩৩টা গ্র্যান্ড স্লাম কোয়ার্টার ফাইনালে উঠল ফেডেরার। যে রেকর্ড ভাঙা যেমন দুষ্কর, তেমনই কিন্তু ফেডেরারের এ বার চ্যাম্পিয়ন হওয়া প্রায় অসাধ্য। জকোভিচ বনাম সঙ্গা ফাইনাল আমার ভবিষ্যদ্বাণী থাকল।