দেশের ৬৪ জেলার জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) সঙ্গে মতবিনিময় করে সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দিতে ঢাকায় শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী সম্মেলন।

মঙ্গলবার সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ সম্মেলন শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার জনপ্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা এবং বিভাগীয় কমিশনাররা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

উদ্বোধনী পর্ব শেষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের করবী হলে শেখ হাসিনা ডিসিদের সঙ্গে মতবিনিময় ও মুক্ত আলোচনা করেন। মধ্যাহ্নভোজ শেষে ডিসিরা চলে যাবেন সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে। সেখানে শুরু হবে মন্ত্রণালয় ও বিভাগভিত্তিক কার্যঅধিবেশন।

সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন বুধবার দুপুরে জেলা প্রশাসকরা রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের সঙ্গে দেখা করতে বঙ্গভবনে যাবেন। এ সময় তিনিও ডিসিদের প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দেবেন। পরে ডিসিরা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেবেন।

এছাড়া তিন দিনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপদেষ্টারা আরো ১৯টি অধিবেশনে জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে মতবিনিময় করে প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দেবেন।

প্রতিদিনই বিকেল সোয়া ৫টা এবং রাতে সব অধিবেশন শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তারা সম্মেলনের অগ্রগতি সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে গণমাধ্যম কর্মীদের অবহিত করবেন।

এর আগে রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা গত বছরের ডিসি সম্মেলনের সুপারিশ বাস্তবায়নের অগ্রগতিসহ এবারের সম্মেলনের প্রস্তুতি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন।

তিনি আরও বলেন, এবারের সম্মেলনে ৩৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার জন্য ৪৬৬টি প্রস্তাবনা ডিসিদের পক্ষ থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে জমা দেওয়া হয়েছে।

যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে- ভূমি ব্যবস্থাপনা, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী করা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম, স্থানীয় পর্যায়ে কর্ম-সৃজন, দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার, প্রবাসী পরিবারের সদস্যদের সেবা, ক্ষুদ্র শিল্প উন্নয়ন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ব্যবস্থাপনা, সার ও কৃষি উপকরণ বিতরণ ও স্বাস্থ্য সেবা খাত।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, গত বছর ডিসি সম্মেলনে যেসব সিদ্ধান্ত হয়েছিল, তার প্রায় ৮১ শতাংশই বাস্তবায়িত হয়েছে। গত সম্মেলনে নেওয়া ৫২৩টি সিদ্ধান্তের মধ্যে ৪২৭টিই ইতোমধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে। এতে স্বল্পমেয়াদী ১৫১টি সিদ্ধান্তের মধ্যে বাস্তবায়ন হয়েছে ১৪৯টি। এই অগ্রগতি অত্যন্ত ‘সন্তোষজনক’ বলে তিনি দাবি করেন।

“তবে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার পদবি পরিবর্তন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্গম এলাকায় দায়িত্ব পালন ভাতা, ভূমি নিবন্ধনের ক্ষেত্রে প্রত্যেকের জন্য পৃথক হিসাব খোলাসহ বেশকিছু সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের প্রয়োজন না থাকায় তা করা হয়নি।”

সচিব মোহাম্মদ মোশাররফ হোসাইন বলেন, স্বল্পমেয়াদী সিদ্ধান্তের মধ্যে প্রত্যেক উপজেলায় অন্তত একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে পাইলট আকারে ‘স্কুল ফিডিং’ কার্যক্রম শুরু, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এমএলএসএস (পিয়ন) বা নৈশপ্রহরি (নাইট গার্ড) নিয়োগ, উপজেলা পর্যায়ে তথ্য-প্রযুক্তি কেন্দ্র স্থাপন, ভারত থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে গরু আমদানি, চা শ্রমিকদের রেশনিং এবং সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির জন্য তথ্য-ভা-ার গড়ে তোলা- ইত্যাদি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে।

সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে জনপ্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে দ্বন্দ্ব থাকার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, দ্বন্দ্ব থাকাটা স্বাভাবিক। কারণ তিনটি পর্যায়ের দায়িত্বশীলদের মধ্যে ভিন্নমত থাকতে পারে। দ্বন্দ্ব নিরসন করে সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করাই মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের চ্যালেঞ্জ।

যুগ্ম-সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ডিসি পদে বহাল রেখে কাজ করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা সাময়িক ব্যবস্থা। পদ পাওয়া গেলেই তাদের সরিয়ে উপসচিবদের ওই পদে বসানো হবে।

এ প্রসঙ্গে ভারতের উদাহরণ দিয়ে সচিব বলেন, ভারতে বিভিন্ন প্রকল্পে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পরও আগের পদে বহাল রাখা হয়। কারণ তাদের সরিয়ে দেওয়া হলে প্রকল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাংলাদেশেও এ ধরনের পদ্ধতি চালু করা যায় কিনা চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে।