দিনাজপুরের পার্বতীপুরে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি এলাকায় ক্ষতিপূরণের দাবিতে আন্দোলনকারীদের ওপর গতকাল সোমবার পুলিশ লাঠিপেটা করে। পরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে পুলিশসহ অন্তত ১৬ জন আহত হয়েছেন।

এ ঘটনার পর স্থানীয় সাংসদ ও ভূমি প্রতিমন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ক্ষতিপূরণের অর্থ পরিশোধের আশ্বাস দিলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা ২২ জুলাই পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত করেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, বড়পুকুরিয়া জীবন ও সম্পদ রক্ষা কমিটির ব্যানারে আন্দোলনকারীরা গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল শেষে কয়লাখনির পশ্চিম ফটকের সামনে অবস্থান নেন। এ সময় বিক্ষোভকারী নারীরা খনির দক্ষিণ ফটকের সামনে অবস্থান নেন। এতে করে কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকেরা খনির ভেতরে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। খনির আশপাশে এ সময় বিপুলসংখ্যক পুলিশের পাশাপাশি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও র‌্যাব মোতায়েন ছিল।

আন্দোলনকারীরা দুপুর ১২টার দিকে খনির পশ্চিম ফটকের সামনে সমাবেশ শুরু করেন। সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবেই চলছিল। কিন্তু দেড়টার দিকে পুলিশ অতর্কিতে ওই সমাবেশে অংশ নেওয়া লোকজনের ওপর লাঠিপেটা শুরু করে। এ সময় পুলিশ আনুমানিক ২০০টি কাঁদানে গ্যাসের শেল ও শটগানের বিপুলসংখ্যক গুলি ছোড়ে। তবে পার্বতীপুর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শম্ভু দাসগুপ্ত দাবি করেন, মোট ২৮টি কাঁদানে গ্যাসের শেল ও শটগানের ১৫টি গুলি ছোড়া হয়েছে।

পুলিশের লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাস ও শটগানের গুলির মুখে আন্দোলনকারীরা পিছু হটেন। তবে একটু পরেই তাঁরা সংগঠিত হয়ে পুলিশকে ধাওয়া করেন। তাঁরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। একপর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া শুরু হয়। বেলা দুইটার দিকে পুলিশ সেখান থেকে চলে গেলে আন্দোলনকারীরা আবার খনির পশ্চিম ফটকের সামনে অবস্থান নেন। এ সময় ক্ষুব্ধ জনতা পুলিশের দুটি মোটরসাইকেল ও পাঁচটি বাইসাইকেল পুড়িয়ে দেয় এবং খনির ফটকের সামনে বসানো সিসি (ক্লোজড সার্কিট) ক্যামেরা ভাঙচুর করে।

খনিতে উপস্থিত দিনাজপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) হামিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা প্রথমে আন্দোলনকারীদের হটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। তবে আলোচনার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য পরে পুলিশ পিছু হটে।’ তিনি জানান, সংঘর্ষ চলাকালে ইটপাটকেলের আঘাতে পার্বতীপুর মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নাজমুলসহ পাঁচ পুলিশ সদস্য এবং র‌্যাবের এক সদস্য আহত হন। তবে তাৎক্ষণিকভাবে তিনি আহত অন্যদের নাম জানাতে পারেননি।

আন্দোলনকারীরা জানান, সংঘর্ষের সময় খনির পার্শ্ববর্তী পাতরাপাড়া গ্রামের হাসানুজ্জামান (৩১), মোরসালিন (৩০), কয়লাখনি বাজারের মুরগি ব্যবসায়ী আবদুর রহমানসহ (৫৫) ১০ জন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া সংঘর্ষের ছবি তুলতে গিয়ে নূর ইসলাম (৪০) নামের এক আলোকচিত্রী আহত হন।

বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান জানান, খনির পশ্চিম ফটক অবরুদ্ধ থাকায় দুপুর ১২টার পালার প্রায় দুই শত খনিশ্রমিকের এক-তৃতীয়াংশই ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি। ফলে কয়লা উৎপাদন গতকাল ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়।

বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি এলাকায় সংঘর্ষের খবর পেয়ে স্থানীয় সাংসদ ও ভূমি প্রতিমন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান গতকাল বিকেলে মুঠোফোনে বড়পুকুরিয়া জীবন ও সম্পদ রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক ইব্রাহীম খলিলের সঙ্গে কথা বলেন। মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার পর ইব্রাহীম খলিল ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের আন্দোলন কর্মসূচি ২২ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করার ঘোষণা দেন।

ইব্রাহীম খলিল বিকেল পাঁচটার দিকে খনির পশ্চিম ফটকের সামনে অবস্থান নেওয়া লোকজনের উদ্দেশে মাইকে বলেন, ‘মন্ত্রী মহোদয় আশ্বাস দিয়েছেন, ২২ জুলাইয়ের মধ্যেই বড়পুকুরিয়া খনির আশপাশের ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের ক্ষতিপূরণের সব পাওনা পরিশোধ করে দেওয়া হবে। তাই চলমান অবস্থান কর্মসূচি ওই তারিখ পর্যন্ত স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো।’