শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বুয়েটের উপাচার্য এস এম নজরুল ইসলাম বলেছেন, রাষ্ট্রপতি চাইলে কেবল তিনি পদত্যাগ করবেন।
পাঁচ অনুষদের ডিন, তিন ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও ১৬ বিভাগের প্রধানের পদত্যাগের পরও বুধবার রাতে তিনি বলেছেন, “আমার পদত্যাগ করার এখতিয়ার নেই। রাষ্ট্রপতি আমাকে নিয়োগ দিয়েছেন। তিনি চাইলে আমি পদত্যাগ করব।”
এদিন রাতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিন্ডিকেট সভায় উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের বিচার বিভাগীয় তদন্ত করার জন্য সরকারের কাছে সুপারিশের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
তবে সিন্ডিকেটের ওই সিদ্ধান্তেও অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হবে না বলে জানিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষকরা। উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
এদিন বিকালে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে একযোগে পদত্যাগ করেন বুয়েটের বিভিন্ন অনুষদের ডিন ও বিভাগের চেয়ারম্যান মিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ২৪ জন শীর্ষ কর্মকর্তা।
এই ২৪ জনের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ১৭টি বিভাগের মধ্যে ১৬টি বিভাগের চেয়ারম্যান, তিনটি ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও পাঁচটি অনুষদের ডিন রয়েছেন।
এর আগে সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির বৈঠকে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে অবস্থান ধর্মঘট পালনের সিদ্ধান্ত হয়।
এরপর সকাল ১১টা ৫০ মিনিটে পুরকৌশল বিভাগের সামনে থেকে একটি মৌন মিছিল বের করেন শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা। মিছিল শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ে কাউন্সিল ভবনের সামনে সমাবেশ করে লাগাতার অবস্থান ধর্মঘট ঘোষণা করেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. মুজিবুর রহমান।
সমাবেশ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ারও দাবি জানানো হয়। আন্দোলনের মধ্যে মঙ্গলবার আকস্মিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঈদের ছুটি ঘোষণা করেন উপাচার্য এস এম নজরুল ইসলাম।
অবস্থান ধর্মঘটে অংশ নেওয়া যন্ত্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী মেহরাব আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা অতো কিছু বুঝি না। আমরা চাই, একটি সুষ্ঠু ব্যবস্থা চালু থাকুক, যাতে আমাদের সেশনজটে পড়তে না হয়।”
উপাচার্য নজরুল ইসলাম ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক এম হাবিবুর রহমানের পদত্যাগ দাবিতে শিক্ষকদের লাগাতার আন্দোলনের মুখে বুয়েট কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার রাতে রোজা ও ঈদের আগাম ছুটি ঘোষণা করে।
এই দাবিতে আগামী ১৪ জুলাই থেকে পূর্ণ কর্মবিরতিতে যাওয়ার ঘোষণা ছিল শিক্ষক সমিতির। তার আগেই এ ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, ১১ অগাস্ট এই ছুটি শুরুর কথা থাকলেও মঙ্গলবার জানানো হয়, ১১ জুলাই থেকে ২৪ অগাস্ট পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজা ও ঈদের ছুটি চলবে।
ছুটি ঘোষণার পর রাতেই ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে বুয়েটের শিক্ষক সমিতি গত ৭ এপ্রিল থেকে ৫ মে পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করে।
এরপর প্রধানমন্ত্রী শিক্ষকদের দাবি বিবেচনা করবেন বলে আশ্বাস দিলে শিক্ষক সমিতি তাদের আন্দোলন এক মাসের জন্য স্থগিত করে।
তবে দাবি পূরণ না হওয়ায় গত ৭ জুলাই থেকে প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১২টা কর্মবিরতি পালন করছিলেন শিক্ষকরা।