রাজনৈতিক বিবেচনায় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে গ্রামীণ জনপদের নতুন বিদ্যুৎ বিতরণ লাইন। এমপিদের পছন্দে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) প্রক্রিয়াধীন বেশিরভাগ নতুন বিতরণ লাইন বণ্টন হয়েছে। অভিযোগ পাওয়া গেছে, নিজ সংসদীয় এলাকার কোথায় বিদ্যুৎ যাবে আর কোথায় যাবে না, তাও ঠিক করে দিয়েছেন এমপিরা। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) অধীনে সরকার ১৮ লাখ নতুন গ্রাহককে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনতে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলা বাদে গোটা দেশে সাড়ে ৪৭ হাজার কিলোমিটার নতুন বিতরণ লাইন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। এ প্রকল্পে ব্যয় হবে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা। অভিযোগ পাওয়া গেছে, বিতরণ লাইন নির্মাণে দুই-তৃতীয়াংশের অবস্থান ঠিক হয়েছে এমপিদের ইচ্ছা অনুযায়ী। পবিস এবং আরইবির নিয়মনীতি ভেঙে অনেক এলাকায় জনপ্রতিনিধিদের ইচ্ছাকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এতে লোকসানি পবিসগুলো আরও লোকসানের মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
অভিযোগের জবাবে আরইবির শীর্ষ কর্মকর্তারা বলেছেন, নিয়মের মধ্যে থেকে বিশেষ বিবেচনায় সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পর্যন্ত জনপ্রতিনিধিদের অনুরোধ রাখার সুযোগ রয়েছে। বাকি এলাকার ক্ষেত্রে জনসংখ্যার ঘনত্ব, রাজস্ব আয় এবং ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনায় নিয়ে অগ্রাধিকার ঠিক করা হয়েছে। পবিসগুলোর নিজস্ব মাস্টারপ্ল্যানের (মহাপরিকল্পনা) ভিত্তিতে চূড়ান্ত হয়েছে প্রকল্প এলাকা।
কয়েকজন এমপি বলেছেন, এলাকায় বিদ্যুৎ দেওয়া তাদের নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল। সেই অঙ্গীকার পূরণে তারা সচেষ্ট থাকবেন, এটাই স্বাভাবিক। এতে দোষের কিছু নেই বলে তারা মনে করেন।
এদিকে  নতুন বিতরণ লাইনকে কেন্দ্র করে কোনো কোনো এলাকায় জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে দ্বন্দ্বেরও সৃষ্টি হয়েছে। এ সুযোগে অনেক সমিতিতে নতুন বিদ্যুৎ বিতরণ নেটওয়ার্ক ঘিরে এখন রীতিমতো বাণিজ্য চলছে। অভিযোগ, উৎকোচের বিনিময়েও ওইসব পবিসের শীর্ষ কর্মকর্তারা প্রকল্প এলাকা বাছাই করেছেন। আবার এমপিদের ঘনিষ্ঠ একশ্রেণীর রাজনৈতিক নেতাও নতুন এলাকা বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনার কথা বলে মোটা অঙ্কের বাণিজ্য করেছেন। বিদ্যুৎ নেটওয়ার্কের
আওতায় আসবে_ এ আশায় অনেক জনপদের মানুষ নিজেরাও টাকা তুলে তাদের দিয়েছেন বলে সূত্র জানিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে রাজনৈতিক বিবেচনায় বিদ্যুৎ এলাকা সম্প্রসারণ করা হলে তাতে প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে। এতে পবিসগুলোর লোকসানের বোঝা আরও বেড়ে যাবে। বর্তমানে ৭০টি সমিতির ৬৫টিই লোকসানে চলছে। বিগত চারদলীয় জোট সরকার আমলেও একইভাবে রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রত্যেক এমপির এলাকায় নতুন বিতরণ লাইন টানা হয়।