ঘরে বসে ডলার আয়ের নামে প্রতারণা চালিয়ে যাওয়া অনলাইন ভিত্তিক ৫৩টি প্রতিষ্ঠানের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি চালানো হচ্ছে। কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে একের পর এক প্রতিষ্ঠান উধাও হয়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে এসব প্রতিষ্ঠানের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি করা হচ্ছে। এছাড়া ইন্টারনেট ব্যবহার করে ঘরে বসে আয়ের প্রলোভনে সাড়া না দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। অনলাইনে ডলার আয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসা সবচেয়ে বড় দু’টি প্রতিষ্ঠান ডোলেন্সার ও স্কাই ল্যান্সারের কর্মকর্তারা গত মাসে তাদের ব্যবসা গুটিয়ে পালিয়ে গেছে। অভিযোগ করা হয়েছে, তারা অন্তত ৫ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। গত মঙ্গলবার আরেক প্রতিষ্ঠান বিডিএস ক্লিক ডট কমের কর্মকর্তারা প্রায় ৩০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা।
‘আপনি বেকার। লেখাপড়া কম জানেন। ঘরে কম্পিউটার আর ইন্টারনেট থাকলেই হবে। আয় করতে পারবেন ডলার। ১০০টি বিজ্ঞাপনে ক্লিক করলেই প্রতিদিন এক ডলার। মাসে ৩০ ডলার। যা বাংলাদেশী টাকায় আড়াই হাজার টাকারও বেশি। অথচ বিনিয়োগ করতে হবে এককালীন মাত্র সাড়ে সাত হাজার টাকা।’
এ ধরনের লোভনীয় আয়ের কথা বলে মানুষকে প্রতারিত করছে অনলাইন ভিত্তিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। ডোল্যান্সার ও স্কাই ল্যান্সার নামের দু’টি প্রতিষ্ঠান ১ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে কয়েক হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে। ডোল্যান্সারের প্রতারিত গ্রাহকরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে খোলা চিঠি লিখেছেন। লাখ লাখ গ্রাহককে পথে বসিয়ে ডোল্যান্সারের মালিক রোকন ইউ আহম্মেদ গত মাসে পালিয়ে যান। প্রতারিতরা তার শ্বশুরবাড়ি ঘেরাও করে। কিন্তু এখনও তাদের টাকা ফেরতের কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। কলাবাগান এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে অস্থায়ী কার্যালয় স্থাপন করে প্রতারণার ব্যবসা খুলে বসে ডোল্যান্সারের মলিক রোকন আহম্মেদ। ডোল্যান্সারের গ্রাহক ছিল অন্তত ৪ লাখ। ইন্টারনেটে বিজ্ঞাপন দেখে ক্লিক করে ডলার আয়ের জন্য হিসাব খোলার কথা বলে প্রত্যেক গ্রাহকের কাছ থেকে সাড়ে ৭ হাজার টাকা করে নেয়া হয়। এর আগে আরেক প্রতিষ্ঠান স্কাই ল্যান্সার রাতারাতি অফিস বন্ধ করে দেয়। পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন কর্মকর্তারা। ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা প্রতিষ্ঠানের চেয়াম্যান নিলকে চৌধুরী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুলকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। তারা কিছুদিন জেল খেটে সমপ্রতি জামিনে বেরিয়ে গেছেন। গত মঙ্গলবার ধানমন্ডির বিডিএস ক্লিক ডট কমের অফিসে ভাঙচুর করে ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা। প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা হলেও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ধানমন্ডি থানার এসআই জাকির হোসেন জানিয়েছেন, প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ইফতেখার চৌধুরী ওরফে সাহেদ, এমডি ফারুক, সহকারী পরিচালক জিল্লুর রহমানসহ কর্মকর্তারা পলাতক। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, বিডিএস ক্লিক নামের এ প্রতিষ্ঠান ৩০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। মামলার বাদী সাহিন আলম বলেন, আমি বিডিএস ক্লিকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছি। লাভ পাব প্রায় ৪ লাখ টাকা। তিনি বলেন, আমার মাধ্যমে অন্তত ৩০০ লোক এই প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেছে। গত সোমবার মাসিক টাকা দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই কর্মকর্তারা লাপাত্তা। এ অবস্থায় অনলাইনে ডলার আয়ের ব্যবসা খুলে বসা প্রতিষ্ঠানগুলোর নজরদারি শুরু করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। যে ৫৩টি প্রতিষ্ঠানের ওপর নজরদারি করা হচ্ছে সেগুলো হলো: ডোল্যান্সার ডট কম, বিডি ফ্রি ল্যান্সিং ডট কম, স্কায় ল্যান্সার ডট কম, ল্যান্সটেক ডটকম, এডসসোর্সিং ডট কম, নিউ শেরাটন ডটকম, ভিশন এ্যাড ওয়ার্ল্ড ডট কম, মেক গেম ডট কম, গুগল এ্যাড ক্লিক ডট কম, নিউ সের এশিয়ান ডট কম, ডিগনিটি ডট কম, কুইক আর্নস ডট কম, ওয়ার্ক ফর ডলার ডট কম, এ্যাড রিভিউ ডট কম, এয়ার এপেল ডট কম, ক্লিকস নেটওয়ার্ক ডট কম, মিড্স ওআরজি, এ্যাডস লিংক বিডি ডট কম, আই ল্যান্সার ডট কম, এলার্ট পে ক্লিক ডট কম, মাইক্রোবিজ ডট কম, এ্যাডজ জোন ডট কম, ইউনিক ল্যান্সার ডট কম, পিটিসি ব্যাংক ডট নেট, বেস্ট লেন্স ডট কম, ল্যান্সিং ফোর্স ডট কম, ফ্রি ডেস্ক ল্যান্সার ডট কম, ইনডেট ফাউন্ডেশন ডট কম, প্যারাডাইজ ইউসিংক ডট কম, আরনিংশিপ ডট কম, স্কাই ওয়ার্কার লিমিটেড ডট কম, ইউনিক সট ডট কম, মাইক্রো ক্লিকার ডট কম, ওয়ানলাইন এ্যাড ক্লিক ডট কম, ওয়ান লাইন নেট টু ওয়ার্ক ডট কম,
ই সোর্স ডট কম ডট বিডি, বিডিএস ক্লিক সেন্টার ডট কম, স্কিম এ্যাডভাইজার ডট কম, ইসেলসেন্স ডট কম, ফক্স ক্লিকস ডট কম, অল আইসিটি সলিউশন ডট কম, ওয়ার্ল্ড ফর আর্ন ডট কম, ড্রিমকিট ডট কম, মেগা টাইপারস ডট কম, মিনিট ল্যান্সার ডট কম, থ্রি জি ক্লিক ডট কম, অ্যাফেয়ার ট্র্যাক ডট কম, ক্লিকস ওয়ার্ল্ড ডট কম, মাইক্রো ল্যান্সার ডট কম, ওরকিট নেট ডট কম, ফ্রিল্যান্সার আইটি ডট নেট, ক্লাসিক এ্যাডস ক্লিক ডট নেট।
মহানগর পুলিশের মুখপাত্র উপপুলিশ কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, অনলাইনে যেসব প্রতিষ্ঠান প্রতারণামূলক ব্যবসা খুলে বসেছে, তাদের ওপর নজর রাখা হচ্ছে। এ ছাড়া ইতিমধ্যে যেসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা টাকা হাতিয়ে পালিয়ে গেছেন, তাদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।