পাইকারি (বাল্ক) বিদ্যুতের দাম ইউনিটপ্রতি ৮৮ পয়সা বাড়ানোর সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) গঠিত মূল্যায়ন কমিটি। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ইউনিট প্রতি ২ টাকা দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের ওপর ভিত্তি করে এই সুপারিশ করা হয়। সোমবার কমিশন কার্যালয়ে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে উভয়পক্ষ নিজস্ব মতামতের যৌক্তিকতা তুলে ধরেন। কমিশন জানিয়েছে, শিগগিরই খুচরা বিদ্যুতের শুনানি আয়োজনের পর একটি সমন্বিত মূল্যবৃদ্ধির রায় ঘোষণা করা হবে। আর এ নিয়ে চলতি বছর তৃতীয় দফায় বাড়ানো হচ্ছে বিদ্যুতের দাম। শুনানিতে মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব তুলে ধরেন পিডিবির পরিচালক (সিস্টেম প্ল্যানিং) মিজানুর রহমান। প্রস্তাবে বলা হয়, পাইকারি মূল্য বাড়ানো না হলে ইউনিট প্রতি গড় সরবরাহ ব্যয় ও ট্যারিফ ব্যবধান হবে ২ টাকা ৮৫ পয়সা। এতে করে চলতি অর্থবছরে ঘাটতির পরিমাণ হবে সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা। আর জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে এই ঘাটতির পরিমাণও আনুপাতিক হারে বাড়বে। এছাড়া জ্বালানি ব্যয় বাড়লে তাৎক্ষণিকভাবে পাইকারি মূল্য সমন্বয়ের জন্য ব্যবস্থা রাখতে হবে। তবে কমিশনের মূল্যায়ন কমিটির হিসাবে পিডিবির গড় সরবরাহ ব্যয় হবে ৪ টাকা ৯০ পয়সা- যা বর্তমান মূল্যের চেয়ে ২১ দশমিক ৮৯ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরে জ্বালানি তেলে কমিশন কর্তৃক অনুমোদিত বরাদ্দের চেয়ে ২৪৪ কোটি ২৬ লাখ ৭ হাজার টাকা কম ব্যয়ের বিষয়টি বিবেচনা করেছে বিইআরসি। বিইআরসির মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকার কর্তৃক পিডিবিকে ৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকা ভর্তুকি প্রদানের বিষয়টি বিবেচনা করে বিদ্যমান পাইকারি মূল্য ২১ দশমিক ৮৯ শতাংশ বাড়ানো যেতে পারে। এতে প্রতি ইউনিটে বাড়বে ৮৮ পয়সা। তাতে ইউনিট প্রতি বিদ্যুতের দাম হবে ৪ টাকা ৯০ পয়সা। যদিও পিডিবির প্রস্তাবে ২ টাকা ১ পয়সা বৃদ্ধি করে ৬ টাকা ৩ পয়সা নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে। পিডিবি চেয়ারম্যান এএসএম আলমগীর কবির এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, বিদ্যুতের সাশ্রয়ী মূল্য নির্ধারণ করতে হলে ৫০ শতাংশ কয়লা বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হবে। আর এই কয়লা বিদ্যুতের ৬০ শতাংশ হতে হবে স্থানীয় কয়লা থেকে। এছাড়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদনও যোগ হতে হবে বলে মনে করেন তিনি। মূল্যবৃদ্ধির সমালোচনা করে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম বলেন, নিরীক্ষিত ও পরীক্ষিত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে রেভিনিউ রিকোয়ারমেন্ট নির্ধারণ না করে মূল্য ঠিক করার কোনো আইনি মানদ- নেই। তাই মূল্যবৃদ্ধির আবেদনটির ওপর অনুষ্ঠিত শুনানি স্থগিত করে একটি বিশেষ কমিটি গঠনের অনুরোধ করেন তিনি। জানা যায়, গত ৬ জুন বিইআরসির কাছে দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করে পিডিবি। এই প্রস্তাবনায় পাইকারি পর্যায়ে ইউনিট প্রতি (কিলোওয়াট ঘণ্টা) ৪ দশমিক ২ টাকা থেকে ৬ দশমিক শূন্য ২ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। জুলাই মাসের ১ তারিখ থেকে নতুন দাম কার্যকর করার কথা বলা হয়েছে প্রস্তাবে। পাইকারির সঙ্গে সমন্বয় করে খুচরা বিদ্যুতের দাম ৫৩ থেকে ৫৮ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে বিতরণ কোম্পানিগুলো। প্রস্তাবে বলা হয়, ২০১২-১৩ অর্থবছরে লোডশেডিং সহনীয় পর্যায়ে রাখতে তরল জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ৮০ শতাংশ প্ল্যান্ট ফ্যাক্টরে চালানোর প্রয়োজন হবে। তাতে করে জ্বালানির বর্তমান মূল্য বহাল থাকলেও প্রতি ইউনিটে উৎপাদন ব্যয় হবে ৬ দশমিক ৮৭ টাকা। প্ল্যান্ট ফ্যাক্টরের ব্যাপারে মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়, গত মার্চে ৬০ শতাংশ ও ৩০ শতাংশ প্ল্যান্ট ফ্যাক্টর ধরে মূল্যবৃদ্ধি করা হয়। কিন্তু পিডিবি এর চেয়ে অনেক কম ফ্যাক্টরে বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে। তাই আগের বছরের প্রকৃত গড়ের সঙ্গে ১৫ শতাংশ যোগ করে হিসাব করেছে মূল্যায়ন কমিটি। প্রসঙ্গত, পাইকারি পর্যায়ে গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ৫ দফা বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে বিইআরসি। ২ টাকা ৩৭ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৪ টাকা ২ পয়সা করা হয়েছে। একইভাবে গড়ে সাড়ে ২৭ শতাংশ বেড়ে ৪ টাকা থেকে ৫ টাকা ২ পয়সা হয়েছে খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম। সর্বশেষ গত ২৯ মার্চ পাইকারি ও খুচরা দাম যথাক্রমে- প্রতি ইউনিট গড়ে ২৮ পয়সা এবং ৩০ পয়সা বাড়ানো হয়- যা ১ মার্চ থেকে কার্যকর করা হয়। পিডিবি একক ক্রেতা হিসেবে ইনডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার (আইপিপি), ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, ইলেক্ট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড (ইজিসিবি) ও আশুগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কেনে। এই বিদ্যুৎ পাইকারি গ্রাহক ডিপিডিসি, ডেসকো, ওজোপাডিকো ও আরইবির কাছে এবং নিজস্ব বিতরণ অঞ্চলে খুচরা গ্রাহকের কাছে বিক্রি করে।