তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের ভাতা বাড়ানোর পক্ষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ মনে করে শিল্পের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এনে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বিচ্ছিন্নভাবে এ ধরনের সুপারিশ শিল্পের জন্য সুখকর হবে না। বিজিএমই সভাপতি মনে করেন সার্বিক বিবেচনায় শিল্প পরিস্থিতি ভালো নয়। আন্তর্জাতিক বাজারে তৈরি পোশাকের মূল্য কমেছে, বেড়েছে ট্যাক্স। তবে শ্রমিক সংগঠনগুলো ৩০ শতাংশ মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছে।
সূত্র জানায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তৈরি পোশাক শিল্প শ্রমিকদের ভাতা বাড়ানোর সুপারিশ করা চিঠি সম্প্রতি শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে পাঠানো হয়েছে। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং ঘরভাড়া বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনা করে শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি করা সম্ভব না হলেও আপাতত বিভিন্ন ভাতা বিশেষ করে হাজিরা বোনাস, বাড়িভাড়াসহ কিছু ভাতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। জানা গেছে ২৫ জুলাই ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্টের ত্রি-পক্ষীয় কমিটির বৈঠক রয়েছে। সেখানে বিষয়টি আলোচনা হতে পারে। ভাতা বাড়ানোর বিষয়টি সরকার থেকে আদেশ দিয়ে কার্যকর করা সম্ভব নয়। এ বিষয়ে মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। শ্রমিকদের ভাতা বাড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের বৃহৎ সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, আমরা এ ধরনের কোন প্রতিবেদন পাইনি। সরকারের অন্য কোন প্রতিষ্ঠান আমাদের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে কোন কিছু জানায়নি। তিনি মনে করেন, শিল্পের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এনে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। এ জন্য স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠক করে এসব বিষয় বিবেচনায় আনতে হবে।
সূত্র জানায়, রমজান মাসে যাতে তৈরি পোশাক শিল্পে শ্রম অসন্তোষ তৈরি না হয় এ জন্য বিজিএমইএ মনিটরিং সেল তৈরি করেছে। নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। সংগঠনের সভাপতি জানান, বিষয়টি আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। এ সংক্রান্ত কমিটিগুলো সক্রিয় করা হয়েছে। তবে এ শিল্পে এখন গুমোট পরিবেশ বিরাজ করছে বলে মনে করছে গার্মেন্টস শ্রমিক শিল্পরক্ষা জাতীয় মঞ্চ। মঞ্চের নেতা টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন সভাপতি আবুল হোসাইন জানান, ঈদের আগেই পূর্ণ বোনাসসহ বকেয়া বেতন বাড়ানোর দাবি রয়েছে। এ নিয়ে আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। তিনি মনে করেন, ভাতা বৃদ্ধির সঙ্গে মজুরিও বাড়াতে হবে।
২০১০ সালের ২৮ জুলাই তৈরি পোশাক শিল্প শ্রমিকদের জন্য নতুন মজুরি কাঠামো ঘোষণা করে সরকার। এরপর দুই বছর কেটে গেল। এ সময়ে শ্রমিকদের যাতায়াত খরচ, খাওয়া খরচ, বাসাভাড়াসহ সব ধরনের ব্যয় বেড়েছে। আর ওই কাঠামো অনুযায়ীই শ্রমিকরা এখন মজুরি পাচ্ছেন। এ মজুরি কাঠামোতে শিক্ষানবিস শ্রমিকদের সাকুল্য মজুরি ২ হাজার ৫০০ টাকা। এর বাইরে শিক্ষানবিস শ্রমিকদের আর কোন ভাতা নেই। ছয় মাস কাজ করার পর শিক্ষানবিস শ্রমিক সপ্তম গ্রেডে মজুরি পান। এ গ্রেডে শ্রমিকদের মূল বেতনের সঙ্গে বাড়িভাড়া বাবদ ৮০০ টাকা ও চিকিৎসা ভাতা বাবদ ২০০ টাকা পান। মূল বেতনের ৪০ শতাংশ বাড়িভাড়া হলেও পোশাক শিল্পের প্রথম শ্রেণীর (গ্রেড) একজন শ্রমিক বাড়িভাড়া বাবদ ভাতা পান সর্বোচ্চ ২ হাজার ৬০০ টাকা। আর সব গ্রেডের শ্রমিকের ক্ষেত্রেই চিকিৎসা ভাতা ২০০ টাকা।