রাজধানীতে জমির দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। সেই সঙ্গে বেড়েছে ফ্ল্যাটের দামও। ফ্ল্যাট ভাড়াও গগনচুম্বী। জীবনযাপনের ব্যয় কমাতে এখন অনেকেই শহরের বাইরে তাদের বাসস্থান খুঁজে নিচ্ছেন। রাজধানীর বাইরে মূল শহরের চেয়ে প্রায় অর্ধেক দামে মিলছে ফ্ল্যাট। নিজের একটি ফ্ল্যাটের খোঁজে ক্রেতারা এখন ছুটছেন রাজধানীর বাইরে বিভিন্ন আবাসন প্রকল্পে।
অ্যাডভান্সড টেকনোলজিস লিমিটেড সাভারে ২ হাজার অ্যাপার্টমেন্টের ১০০টি বিল্ডিং তৈরি করছে। প্রতিষ্ঠানটির সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর চেয়ে অর্ধেক দামে এসব বিল্ডিংয়ে অ্যাপার্টমেন্ট পাওয়া যাবে। মধ্যম আয়ের জনগণের জন্যই তারা এ প্রকল্প হাতে নিয়েছে। কনকর্ড গ্রুপও মধ্যম আয়ের জনগণের কথা মাথায় রেখে রাজধানীর বাইরে প্রকল্প করছে। এ তালিকায় আরও আছে হামিদ রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন লিমিটেড, ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেড প্রভৃতি প্রথম শ্রেণীর আবাসন প্রতিষ্ঠান।
রাজধানীর ভেতরে যেকোনো আবাসন প্রকল্পে ফ্ল্যাটের দাম এত বেশি বেড়ে গেছে যে, এসব প্রকল্পের জন্য আর ক্রেতা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বিনিয়োগের নিশ্চয়তার জন্যই ব্যবসায়ীরা শহরের বাইরের বিভিন্ন প্রকল্প শুরু করছেন। সেসব প্রকল্পে ক্রেতাদের আগ্রহ তাদের টেনে নিয়ে যাচ্ছে। ঢাকার বাইরে জীবনযাপনের ব্যয় অনেক কম। এ তালিকায় আছে টঙ্গী, গাজীপুর, সাভার, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ প্রভৃতি শহরে বাড়ি ভাড়া তুলনামূলক কম, পাশাপাশি জীবনযাত্রার ব্যয়ও ঢাকার মতো নয়। সীমিত আয়ের মানুষ ব্যয় হ্রাসের জন্য ছুটছেন এসব শহরে। আবাসন ব্যবসায়ীদের জন্যও এসব এলাকা পয়মন্ত হয়ে দেখা দিয়েছে। রাজধানীর কাছাকাছি অবস্থান হওয়ার কারণে নিজের ফ্ল্যাটের খোঁজে ক্রেতারা ছুটছেন এসব শহরে।
রূপায়ণ হাউজিং এস্টেট লিমিটেড ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের ভুঁইগড় এলাকায় একটি স্যাটেলাইট শহরের প্রকল্প করছে। প্রতিষ্ঠানটির দাবি মতে, স্যাটেলাইট শহরের ৭৮৪টি ফ্ল্যাটের অধিকাংশই বিক্রি হয়ে গেছে। ক্রেতাদের আগ্রহ দেখে প্রতিষ্ঠানটি ঢাকার আশপাশে এ জাতীয় আরও প্রকল্প করবে বলে জানান রূপায়ণ হাউজিংয়ের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা এহসানুর রহমান।
এহসানুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, এ স্যাটেলাইট শহরে ফ্ল্যাটের প্রতি বর্গফুটের দাম পড়েছে ৩ হাজার ১০০ টাকা। মূল ঢাকার খুবই কাছে অবস্থিত। রাজধানীর প্রায় সব সুযোগ-সুবিধায় এখানে আছে। আবার চাইলে খুব কম সময়ে ঢাকায় আসা যাবে। মূলত দামে কম এবং এসব সুযোগ-সুবিধার জন্যই ক্রেতারা রাজধানীর বাইরের প্রকল্পগুলোয় বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
রূপায়ণের এ প্রকল্পে সফলতা দেখে অন্য আরও বড় দুটি প্রতিষ্ঠান রাজধানীর বাইরে এ জাতীয় প্রকল্প করছে বলে তিনি জানান।
লতিফ রিয়েল এস্টেটের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আকতার বিশ্বাস জানান, মূল ঢাকা শহরে আবাসন প্রকল্প করার জন্য খালি জায়গা নেই। যেগুলো পাওয়া যায় তা উচ্চমূল্যর কারণে সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। কয়েক বছর ধরেই ব্যবসায়ীরা ঢাকার বাইরে প্রকল্প করার জন্য মনোযোগী হয়েছেন। এখন এ হার আরও বেড়েছে। আশা করা যায়, ছোট শহরে ভালো আবাসনব্যবস্থা করতে পারলে আরও অনেকেই সেখানে বসবাসের জন্য আগ্রহী হবেন। সেই সঙ্গে ছোট শহরেও নতুন নতুন ব্যবসার সুযোগ সৃষ্টি হবে। তবে তিনি এ ব্যাপারে সরকারের সহযোগিতা কামনা করে বলেন, সরকার এগিয়ে এলে বেসরকারি আবাসন ব্যবসায়ীরা আরও সুলভ মূল্যে সবার জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করতে পারতেন।
মেগা বিল্ডার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুরাদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, রাজধানীর বাইরের আবাসন প্রকল্পগুলোর জন্য ক্রেতাদের বেশ আগ্রহ লক্ষ করা যাচ্ছে। এটি অবশ্য আবাসন ব্যবসায়ীদের জন্য সুখবর। এমনিতে এ খাতের ব্যবসা যে নাজুক পরিস্থিতি আছে, তা থেকে উত্তরণের জন্য ঢাকার বাইরের প্রকল্পগুলো সাহায্য করবে।
রিহ্যাবের সাবেক সভাপতি ও স্ট্রাকচারার ইঞ্জিনিয়ারস লিমিটেডের (এসইএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. আবদুল আউয়াল জানান, কয়েক বছর ধরেই আবাসন ব্যবসা ঢাকার বাইরে সম্প্রসারিত হচ্ছে। সাধারণত বড় ব্যবসায়ীরা ঢাকার বাইরে যেতে চান না। তবে এখন অনেকেই ঢাকার বাইরে যাচ্ছেন। এটি আবাসন খাতের ব্যবসার জন্য খুবই ইতিবাচক। এসইএল তাদের কুমিল্লার প্রকল্পে কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কুমিল্লার প্রকল্পে আমরা বেশ ভালো সাড়া পেয়েছি।’ এখন তারা বগুড়া, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ ও সিলেটে নতুন প্রকল্পের জন্য কাজ শুরু করেছেন। নতুন ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ঢাকার বাইরেও প্রচলিত হলে এ খাতের ব্যবসা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে বলে তিনি মনে করেন।