জ্বালানি উপদেষ্টার চাপে কমিশন ঘন ঘন বিদ্যুতের দাম বাড়াতে বাধ্য হচ্ছে। তিনি যা মনে করেন, তাই করে থাকেন। তিনি মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব করেন না। তিনি সরাসরি বলেন, দাম বাড়ানো উচিত। এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন তৈরি করা হয়েছে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের সুবিধা দেওয়ার জন্য। এক অর্থে কমিশন অসহায়। একদিন দেশের মাটিতেই জ্বালানি অপরাধীদের বিচার হবে। বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির ওপর সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ কথা বলেন কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) প্রতিনিধি ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. শামসুল আলম।
তিনি বলেন, গতবছর কমিশনের সুপারিশ মতে বিদ্যুৎখাতে ৫ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি প্রদানের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্র“তি ছিল। সেই প্রতিশ্র“তি বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে পিডিবি এ বছর বিদ্যুতের মূল্য ২ দশমিক ১ টাকা বৃদ্ধির পাশাপাশি ৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকার ভর্তুকির প্রস্তাব করেছে। এ ভর্তুকি না পেলে বিদ্যুতের মূল্য আরও ৮৪ পয়সা বৃদ্ধি করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর ৫ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকির প্রতিশ্র“তি বাস্তবায়ন না করে নতুনভাবে ভর্তুকি প্রস্তাব যুক্তিসঙ্গত নয়।
ড. আলম বলেন, ভাড়া বৃদ্ধিতে চুক্তি মেয়াদ শেষে নবায়ন না করা এবং মেয়াদ না বাড়ানোর সুপারিশও ক্যাবের পক্ষ থেকে কমিশনের কাছে দেওয়া হয়েছে।
গতকাল শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে ক্যাব আয়োজিত মতবিনিময় সভায় লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন ক্যাব সভাপতি কাজী ফারুক।
ড. আলম বলেন, দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কারণে নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস ওঠবে। এ অবস্থায় ১ জুলাই বিদ্যুতের গড় পাইকারি মূল্যহার ৪ দশমিক ২ টাকা থেকে ৬ দশমিক ৮৭ টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাব করে পিডিবি। এ প্রেক্ষিতে ১৬ জুলাই গণশুনানিও করে কমিশন। পিডিবির মূল্যবৃদ্ধির ব্যাপারে বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠনের প্রতিনিধিরা মূল্যবৃদ্ধি না করার বিভিন্ন তথ্য ও যুক্তি কমিশনের কাছে পেশ করেন। ড. শামসুল আলম বলেন, গণশুনানিতে যেসব তথ্য-উপাত্ত ও যুক্তি মিলেছে আমরা তার প্রেক্ষিতেই কথা বলছি।
ড. শামসুল আলম বলেন, তেলের মূল্যবৃদ্ধির সমন্বয়ের কারণে গত ১ মার্চ থেকে বিদ্যুতের মূল্য ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ বৃদ্ধির কারণে কোনো কোনো ভোক্তার মাসিক বিদ্যুৎ বিল ৩ থেকে ৪ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু এর বিপরীতে কী পরিমাণ আয় বেড়েছে, তার বিবরণ পাওয়া যায়নি। তাই আর্থিক ঘাটতি নিরুপণ ত্র“টিমুক্ত হয়নি।
বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর অন্যতম যুক্তি ছিল, তেলনির্ভর কেন্দ্রগুলো গ্রিষ্মে ৬০ শতাংশ প্ল্যান্ট ফ্যাক্টরে চালানো হবে। সেজন্য চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত জ্বালানি চাহিদা ধরা হয়েছির ৯ দশমিক ৬ লাখ টন। বিপরীতে বিপিসি বরাদ্দ দেয় ৪ দশমিক ৬৮ লাখ টন। এ সময় বিদ্যুতের সরবরাহ ব্যয় নিয়ন্ত্রণে রাখতে তেলের স্বল্প ব্যয় ব্যবহার করা হয়। এ কারণে ৬০ শতাংশ প্ল্যান্ট ফ্যাক্টরে তেলনির্ভর বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো চলেনি। ফলে লক্ষ্যমাত্রানুযায়ী বিদ্যুতের উৎপাদন না হওয়ায় লোডশেডিং মোকাবিলা করাও সম্ভব হয়নি।
তিনি বলেন, বিদ্যুৎ খাতের এই দুর্গতির অন্যতম কারণ হচ্ছে সঠিক পরিকল্পনার অভাব। স্পর্শকাতর এই খাত নিয়ে সেই ২০০০ সাল থেকে লণ্ডভণ্ড কাণ্ড চলছে। যদি তখন থেকেই এ খাতের উন্নয়নে নজর দেওয়া হতো তা হলে এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হতো না।