নতুন আবিষ্কৃত কুমিল্লার শ্রীকাইল গ্যাসক্ষেত্র থেকে চলতি বছরই গ্যাস উত্তোলনের পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ করপোরেশন-পেট্রোবাংলা। এ লক্ষ্যে তৃতীয় একটি কূপ খনন করা হবে। এ ছাড়া শিগগিরই ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপ শুরু হবে। এরই মধ্যে এর প্রাথমিক কাজে হাত দিয়েছে জরিপকারী দল।
পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা যায়, ১ হাজার ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে বাপেক্সের বিভিন্ন গ্যাসক্ষেত্রে পাঁচটি কূপ খনন করবে রাশিয়ান কোম্পানি গ্যাজপ্রম। গ্যাস উন্নয়ন তহবিল থেকে কূপ খনন প্রকল্পগুলোয় অর্থের জোগান দেয়া হবে। প্রাথমিকভাবে শ্রীকাইলে কূপ খননের কাজ গ্যাজপ্রমকে দেয়ার কথা থাকলেও তা থেকে সরে আসতে চায় পেট্রোবাংলা। এ নিয়ে গ্যাজপ্রমের সঙ্গে আলোচনা করবে প্রতিষ্ঠানটি। এখানে ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপ, কূপ খনন ও গ্যাস উত্তোলনের কাজ করবে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স)।
জানা যায়, বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলনযোগ্য প্রমাণিত হলে একটি কূপ থেকে দৈনিক ৩ থেকে সাড়ে ৩ কোটি ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা সম্ভব হবে। এ হিসাবে দুটি কূপ থেকে উত্তোলন করা হবে ৬ থেকে ৭ কোটি ঘনফুট গ্যাস। এখানে ২৫০ থেকে সাড়ে ৩০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মজুদ আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নতুন এ কূপ থেকে বাণিজ্যিক উত্তোলন শুরু হলে দেশে চালু কূপের সংখ্যা দাঁড়াবে ৮২টি।
পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান হোসেন মনসুর জানান, চলতি বছর গ্যাস উত্তোলনের প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে তৃতীয় কূপ খননের কাজ শুরু করবে বাপেক্স। এ ছাড়া ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপের মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলনের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হবে।
১৩ জুলাই কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার শ্রীকাইলে দেশের ২৫তম গ্যাসক্ষেত্রের সন্ধান পায় রাষ্ট্রীয় সংস্থা বাপেক্স। ওই দিন সকালে ড্রিল স্টেম টেস্টে (ডিএসটি) গ্যাসের চাপ পরীক্ষার প্রাথমিক ফলাফলে গ্যাস পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়।
হোসেন মনসুর জানান, কূপ এলাকার দুটি জোনে (ডি লোয়ার এবং ডি আপার) গ্যাস রয়েছে। বর্তমানে ডি লোয়ার জোন থেকে পরীক্ষামূলকভাবে গ্যাস তোলা হচ্ছে। কয়েক দিন পরে ডি আপার জোন থেকে উত্তোলন শুরু হবে। শ্রীকাইলের কূপ থেকে প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে ১ হাজার ৯০০ পাউন্ড (পিএসআই) চাপে গ্যাস উঠছে। এ চাপ ভালো মজুদের আভাস দিচ্ছে। সাধারণভাবে পাইপলাইনে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য ১ হাজার পিএসআই চাপই যথেষ্ট বলে তিনি উল্লেখ করেন।
চলতি বছরের ৫ মে থেকে ড্রিলিংয়ের মাধ্যমে এ গ্যাস ক্ষেত্রের অনুসন্ধান শুরু করে বাপেক্স। ড্রিলিং শেষ হয় ১০ জুলাই। এর আগে ২০০৪ সালে খনন করা প্রথম কূপটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়।
বাপেক্সের এক কর্মকর্তা জানান, এখানে গ্যাসের চাপ বেশ ভালো। এ থেকে ভালো মজুদ আশা করা হচ্ছে। ৩ হাজার ২১৪ মিটার গভীর কূপ থেকে প্রথম গ্যাস তোলা হয়। এর ওপর আরও একটি স্তরে গ্যাস রয়েছে।
পেট্রোবাংলার সহযোগী প্রতিষ্ঠান বাপেক্স এর আগে তিনটি ক্ষেত্রে গ্যাস পেয়েছে। ১৯৯৫ সালে ভোলার শাহবাজপুরে প্রথম, ১৯৯৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সালদায় দ্বিতীয় ও গত বছরের ২৮ আগস্ট সুন্দলপুরে তৃতীয় ক্ষেত্রে গ্যাসের সন্ধান পায় প্রতিষ্ঠানটি।