জাতীয় শহীদ মিনারে নন্দিত কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাচ্ছে সর্বস্তরের মানুষ।

সকালে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে এই লেখকের মরদেহ দেশে পৌঁছানোর পর ১০টা ২২ মিনিটে তার কফিনবাহী অ্যাম্বুলেন্স শহদি মিনারে পৌঁছায়। প্রিয় লেখককে শেষবারের মতো দেখতে সেখানে সকাল ৮টা থেকেই মানুষের ভিড়।

শহীদ মিনার চত্বরের উত্তর পাশে নির্মিত শোক মঞ্চে রাখার পর হুমায়ূনের কফিন রাখার পর পেছনে দাঁড়ান তার প্রথম স্ত্রীর তিন সন্তান নোভা, শীলা ও নুহাশ, লেখকের দুই ভাই আহসান হাবীব ও জাফর ইকবাল, তাদের দুই বোন, জাফর ইকবালের স্ত্রী ইয়াসমীন হক।

কিছুক্ষণ পর হুমায়ূনের মা আয়েশা ফয়েজও উপস্থিত হন শোক মঞ্চে। এ সময় তরুণ নুহাশকে কফিন জড়িয়ে ধরে অঝোর ধারায় কাঁদতে দেখা যায়, যার পরনে ছিল বাবার সৃষ্ট চরিত্র হিমুর সেই হলুদ পাঞ্জাবি।

হুমায়ূনের দীর্ঘদিনের বন্ধু প্রবীণ সাংবাদিক সালেহ চৌধুরী ও সাহিত্যিক সৈয়দ শামসুল হকও কফিনের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন বিষণ্ণ মুখে।

শুরুতেই রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে লেখকের কফিনে ফুল দেন তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল ফখরুদ্দিন আহমেদ। এরপর প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ফুল দেন তার বিশেষ সহকারী (মিডিয়া) মাহবুবুল হক শাকিল এবং প্রধানমন্ত্রীর এপিএস সাইফুজ্জামান শিখর।

আওয়ামী লীগের পক্ষে জাতীয় সংসদের উপনেতা ও দলের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুল আলম হানিফ ও জাহাঙ্গীর কবির নানক ফুল দিয়ে হুমায়ূনের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের পক্ষে সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও নারীনেত্রী শিরিন আক্তার ফুল দেন।

তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, পররাষ্ট্র মন্ত্রী দীপু মনি, খাদ্য মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, পূর্ত প্রতিমন্ত্রী আব্দুল মান্নান খান, নারী ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী শিরিন শারমিন, পুলিশের অতিরিক্ত আইজি শহীদুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার বেনজির আহমেদ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান এরপর।

ক্যান্সারে আক্রান্ত হুমায়ুন ৬৪ বছর বয়সে গত ১৯ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের বেলভ্যু হাসপাতালে মারা যান। নিউ ইয়র্কে পরদিন জানাজার পর রোববার হুমায়ুনের কফিন নিয়ে দেশের পথে রওনা হন পরিবারের সদস্যরা।

সোমবার সকাল ৮টা ৫৬ মিনিটে তার কফিনবাহী বিমানটি শাহজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছায়। সুসজ্জিত একদল পুলিশ সদস্য কাঁধে করে বিমান থেকে তার কফিন নামিয়ে নিয়ে যান ফুলে সাজানো একটি অ্যাম্বুলেন্সে।

হুমায়ূনের মরদেহ নিয়ে একই বিমানে দেশে পৌঁছান তার স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন, তাদের দুই ছেলে নিষাদ ও নিনিত, শাওনের মা তহুরা আলী, বোন সেঁজুতি এম আফরোজ এবং পারিবারিক বন্ধু প্রকাশক মাজহারুল ইসলাম।

বিমানবন্দরে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে লেখকের মরদেহ গ্রহণ করেন স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবীর নানক। এ সময় সঙ্গে ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুল আলম হানিফ, হুমায়ূনের দুই ভাই মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও আহসান হাবীব এবং প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী (মিডিয়া) মাহবুবুল হক শাকিল।

হুমায়ূনের ছোট ভাই আহসান হাবীব জানান, হুমায়ূন আহমেদের দাফন সোমবারই হতে পারে। তবে কোথায় তাকে সমাহিত করা হবে সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি।

লেখকের স্ত্রী শাওন অশ্রুভেজা কণ্ঠে বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের বলেন, “উনার শেষ ইচ্ছা ছিল নুহাশ পল্লী। উনাকে আর কষ্ট দিয়েন না। নুহাশ পল্লীতেই ব্যবস্থা করেন।”

তবে এর আগে আহসান হাবীব সাংবাদিকদের বলেন, “কোনো সমস্যা না থাকলে আমরা আজই উনাকে দাফন করতে চাই। আমাদের মায়ের ইচ্ছা, মিরপুর বা বনানীতে এটা হোক।” হুমায়ূনের আরেক ভাই মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, আলোচনা করেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

শহীদ মিনারে বেলা ২টা পর্যন্ত লেখকের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাবে সর্বস্তরের মানুষ। এরপর বেলা আড়াইটায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে জানাজা হবে।