পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে টানাপোড়েনের মধ্যে মন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফা দেওয়ায় সৈয়দ আবুল হোসেনের প্রশংসা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিশ্ব ব্যাংক সাবেক এই যোগাযোগমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোনো তথ্য-প্রমাণ দিতে পারেনি বলেও শেখ হাসিনা উল্লেখ করেছেন।
বুধবার লন্ডনের হোটেল সেন্ট প্যানক্রসে ইফতারের পর স্থানীয় বাংলা প্রচার মাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক মতবিনিময়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তারা (বিশ্ব ব্যাংক) এক মন্ত্রীর দিকে হাত তুলেছে। সে পত্র-পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে আমার কাছে রিজাইন লেটার দিয়ে গেল।”
“তার গাটস্ আছে বলেই রিজাইন দিতে পেরেছে। দেশপ্রেম আছে বলেই রিজাইন দিয়েছে”, যোগ করেন শেখ হাসিনা।
পদ্মা সেতুতে পরামর্শক নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ তুলে গত বছর ১২০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি স্থগিত করে বিশ্বব্যাংক। তাদের অভিযোগ ছিল সরকারের উচ্চ পর্যায়ের লোকজনও এ দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত।
অর্থায়ন চালিয়ে যাওয়ার জন্য বিশ্ব ব্যাংক যে চারটি শর্ত দিয়েছিল তার মধ্যে চতুর্থটি ছিল- যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই সব সরকারি ব্যক্তি অর্থাৎ আমলা ও রাজনৈতিকভাবে নিয়োগপ্রাপ্তদের তদন্ত চলাকালে সরকারি দায়িত্ব পালন থেকে ছুটি দিতে হবে।
এ নিয়ে টানাপোড়েনের পর গত ২৯ জুন ঋণ চুক্তি বাতিল করে বিশ্ব ব্যাংক। এরপর গত সোমবার মন্ত্রিত্ব ছাড়েন ওই সময় যোগাযোগমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা সৈয়দ আবুল হোসেন। মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াও ছুটিতে যান, যিনি ওই সময় সেতু বিভাগের সচিব ছিলেন।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত পরদিন আশা প্রকাশ করেন, বিশ্ব ব্যাংকের ‘সব শর্ত’ পূরণ হওয়ায় তারা হয়তো চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবে।
আবুল হোসেনের পদত্যাগ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা লন্ডনে সাংবাদিকদের বলেন, “সেও চায় পদ্মা সেতু হোক। আপনারা অ্যাপ্রিশিয়েট করেন। আওয়ামী লীগ বলেই পারে।”
এ সরকারের মেয়াদেই পদ্মা সেতু নির্মাণ শুরুর ব্যাপারে দৃঢ় অবস্থানের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা পিছু হটছি না। আমরা ভিক্ষা নিই না। আমরা সুদসহ ঋণ নেই।”
“বিশ্ব ব্যাংক আসুক আর না আসুক। আমরা পদ্মা সেতু করব। আমাদের নিজেদের প্রস্তুতি আছে। বিশ্ব ব্যাংক কী করে- এটা তাদের এখতিয়ার”, যোগ করেন শেখ হাসিনা।
ইফতারের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে এ অনুষ্ঠানের শুরুতেই বিগত বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে ‘হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, রাজনৈতিক সহিংসতা এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের’ ওপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
পরে স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে নৈশভোজে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী।
অন্যদের মধ্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, পররাষ্ট্র মন্ত্রী দীপু মনি, যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. এম সাইদুর রহমান খান, অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ এম জিয়াউদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
অলিম্পিক গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বুধবার লন্ডনে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি ২৭ জুলাই লন্ডনে অলিম্পিক গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে থাকবেন। এর আগে, সেদিন বিকালেই বাকিংহাম প্যালেসে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের দেওয়া রাজকীয় সংবর্ধনায় যোগ দেবেন।
এছাড়া বৃটিশ পার্লামেন্টের বিরোধীদলীয় নেতা লেবার পার্টির এড মিলিব্যান্ডের সঙ্গেও প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের কথা রয়েছে।
লন্ডন থেকে রোববার বিকালে দেশের উদ্দেশে রওনা হবেন প্রধানমন্ত্রী। সোমবার সকাল সাড়ে ৮টায় তার দেশে পৌঁছাবেন।