বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) দিনের পর দিন ৫০ ভাগ শয্যা খালি পড়ে থাকে। অন্যদিকে ১ কিলোমিটারের কম দূরত্বে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিন শয্যাসংখ্যার ৩ গুণ বেশি রোগী সেবা নেন।

বিএসএমএমইউয়ের উপাচার্য প্রাণ গোপাল দত্ত তাঁর প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। গতকাল বুধবার তিনি বলেন, ‘স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি বিভাগের সব অধ্যাপককে ডেকে পাঠিয়েছি এবং অনতিবিলম্বে জরুরি প্রসূতিসেবা কার্যক্রমের আওতায় রোগী ভর্তির কাজ শুরু করার নির্দেশ দিয়েছি।’ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক শহীদুল হক মল্লিক বলেছেন, রোগীর অত্যধিক চাপ সামলাতে গিয়ে অনেক সময় মানসম্মত সেবা দেওয়া সম্ভব হয় না। ২৮ ডিসেম্বর দুপুর ১২টায় বিএসএমএমইউয়ের প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিভাগের ৮১৬ নম্বর কক্ষে ১৬ শয্যার মধ্যে ৯টিতে কোনো রোগী ছিলেন না। ৮০৩ নম্বর কক্ষে ১৩টি শয্যার মধ্যে ৮টি, ৮১১ নম্বরে ১৩টির মধ্যে ৬টি, ৮১৫ নম্বরে ৬টির মধ্যে ৩টি, ৮৩৩ নম্বরে ১১টির মধ্যে ৬টি, ৮২৮ নম্বর কক্ষে ১৬টির মধ্যে ৭টি শয্যা ফাঁকা দেখা যায়। একটি শয্যায় কোট-প্যান্ট পরা ১ ব্যক্তিকে ঘুমিয়ে থাকতে দেখা গেছে। পাশেই দেখা গেছে নবজাতককে নিয়ে শুয়ে থাকা এক মাকে। অন্য শয্যায় বেশ আয়োজন করে ৬-৭ জন মধ্যাহ্নভোজ সারছিলেন। স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি বিভাগে চিকিৎসকের সংখ্যা প্রায় ২০০। এই বিভাগে ৬টি ইউনিটের ৯৫টি শয্যা ৬ জন অধ্যাপকের নিয়ন্ত্রণাধীন। ১ জন অধ্যাপক সপ্তাহে ১ দিন রোগী ভর্তি করেন। নিজের নির্দিষ্ট দিনে অধ্যাপক সুলতানা রাজিয়া বেগম ১৭টি, এম আনোয়ার হোসেন ২২টি, সালেহা বেগম চৌধুরী ১৭টি, পারভীন ফাতেমা ১২টি, ফিরোজা বেগম ১৭টি ও সাবেরা খাতুন ১০টি আসন ভর্তির জন্য বরাদ্দ দিতে পারেন। সাধারণভাবে ভর্তির তিন দিন পর রোগী হাসপাতাল ছেড়ে যান। বাকি চার দিন শয্যা থাকে ফাঁকা। অন্য কোনো অধ্যাপকের চিকিৎসাধীন রোগী ওই শয্যায় উঠতে পারেন না। বাধ্য হয়ে রোগী বেসরকারি ক্লিনিকে যান। বিভাগের চেয়ারম্যান এম আনোয়ার হোসেন অবশ্য জানিয়েছেন, অধ্যাপকেরা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে রোগী ভর্তি করেন। ২৭ ডিসেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে ৩ ফুট প্রস্থ আর ৭ ফুট দৈর্ঘ্যের শয্যায় ১ মা ও তাঁর নবজাতককে অপর ১ জন মা ও তাঁর নবজাতকের মুখের দিকে পা দিয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়। শয্যায় এই ৪ জনের বাইরে ছিলেন এক নানি। এই ওয়ার্ডে ৪৬টি শয্যার প্রতিটিতেই দুজন করে রোগী থাকেন। ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা সেবিকা নাজমা আক্তার জানান, চিকিৎসকেরা ব্যবস্থাপত্রে লিখে রেখে যান ‘রোগী দুপুর দুইটায় ইনজেকশন বা ওষুধ পাবেন।’ কিন্তু তাঁকে শুরু করতে হয় বেলা ১২টায়। তাহলে মোটামুটি আড়াইটা-তিনটায় ওষুধ দেওয়া শেষ হয়। পরে শুরু করলে অনেক রোগী দুপুরের ওষুধ পাবেন বিকেলে। চিকিৎসক ও নার্সরা বলেছেন, ২ ধরনের রোগীকে এক শয্যায় থাকতে হচ্ছে। এতে করে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে সব সময়। ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের পর্যবেক্ষণ কক্ষে কথা হয় সায়মা বেগমের সঙ্গে। সায়মার বোনের বাচ্চার বয়স ১ দিন, বোনের প্রসব-পরবর্তী রক্তক্ষরণ হচ্ছে। তাঁর সঙ্গে একই শয্যায় আছেন লাভলী আক্তার। তাঁর গর্ভস্থ সন্তান মারা গেছে। ২ জনের কেউই কথা বলতে পারছেন না। কক্ষের ঠিক উল্টো দিকে লেবার রুম থেকে একজন নারী প্রসবযন্ত্রণায় চিৎকার করছেন। বাইরে মায়া রানী দাস তাঁর কয়েক ঘণ্টা বয়সী ভাগ্নেকে কোলে করে করিডরে বসে আছেন। জানেন না, নবজাতকের ঠিকানা কোথায় কখন কীভাবে হবে। ওয়ার্ডের রেজিস্ট্রার হালিমা আক্তার জানান, শয্যাসংখ্যা ১৭টি। প্রতিদিন কমপক্ষে তিন গুণ রোগী আসেন। শহীদুল হক মল্লিক জানান, ঢাকা মেডিকেলে সহজে রোগী ভর্তি করানো যায়। আর ভর্তির ব্যাপারে কাউকে না বলা হয় না। তাই এখানে এত ভিড়।