যুক্তরাষ্ট্রের অলিম্পিক ট্রায়ালে একাধিক ইভেন্টে রায়ান লচটের কাছে হার। লন্ডনের পুলে নেমেই হারলেন নিজের প্রিয় ৪০০ মিটার ব্যক্তিগত মিডলেতেও। এর পর তো মাইকেল ফেলপসের শেষই দেখতে পেয়েছেন কেউ কেউ। যারা ফেলপসের সামর্থ্য নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন, তারা নিশ্চয়ই এখন লজ্জায় মুখ ঢাকছেন। পরশু রাতেই যে আমেরিকান সাঁতারু পৌঁছে গেলেন অনন্য এক উচ্চতায়।
আধুনিক অলিম্পিকের ১১৬ বছরের ইতিহাসে ১৯টি পদক জিতে তিনিই এখন সবার ওপর। পরশু ২০০ মিটার বাটারফ্লাইয়ে রৌপ্য ও ৪ গুণিতক ২০০ মিটার ফ্রিস্টাইল রিলেতে স্বর্ণ জিতে ফেলপস ভেঙে দেন কিংবদন্তি সোভিয়েত জিমন্যাস্ট লারিসা লাতিনিনার দীর্ঘ ৪৮ বছরের রেকর্ড।
১৭টি পদক নিয়ে লাতিনিনার ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছিলেন ফেলপস। পরশু রাতেই অবসান হলো সব অপেক্ষার। এক রাতেই দুটি পদক জিতে লাতিনিনাকে টপকে ফেলপসই এখন সবার ওপর। ফিনল্যান্ডের অ্যাথলিট পাভো নুরমি (১২ পদক), যুক্তরাষ্ট্রের সাঁতারু মার্ক স্পিত্জ (১১ পদক) ও একই দেশের অ্যাথলিট কার্ল লুইসকে (১০ পদক) আগেই টপকেছেন ফেলপস। এবার লন্ডনে তিনি লাতিনিনাকেও টপকে গেলেন। রচনা করলেন অলিম্পিকের নতুন ইতিহাস।
অলিম্পিকে রেকর্ড ১৫টি স্বর্ণের গর্বিত মালিক ফেলপস। এক অলিম্পিকে সর্বাধিক আট স্বর্ণ, অলিম্পিকে সর্বাধিক স্বর্ণ— ক্যারিয়ারে এমন অনেক রেকর্ড ফেলপসের। কাল গড়লেন সর্বাধিক পদকের রেকর্ডও। এমন মহান রেকর্ডে অভিভূত এ আমেরিকান মহাতারকা, ‘এটা অবিস্মরণীয় এক অর্জন। আমি সব সময়ই বলেছি, যেকোনো কিছুই সম্ভব। আমি সব সময়ই এমন কিছু করতে চেয়েছি, যা অন্য কেউ পারেনি। আজ এটা করতে পেরে আমি অনেক অনেক খুশি।’
১৪টি স্বর্ণসহ মোট ১৬টি পদক নিয়ে লন্ডন অলিম্পিক মিশনে আসেন ২৭ বছর বয়সী ফেলপস। ৪০০ মিটার মিডলেতে স্বদেশী লচটের কাছে হার দিয়ে শুরু। এরপর ৪ গুনিতক ১০০ মিটার রিলেতে জিততে জিততে শেষ মুহূর্তে ফ্রান্সের কাছে হেরে যায় যুক্তরাষ্ট্র। পদক জিতলেও কিংবদন্তি ফেলপসের স্বর্ণের ক্ষুধাটা মিটল না। এর পর পরশু ২০০ মিটার বাটারফ্লাইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার চ্যাড লা ক্লোসের কাছে হেরে যান ০.০৫ সেকেন্ডের ব্যবধানে। তবে এ হারেও মুষড়ে পড়েননি ফেলপস। পেশাদারির কাছে হার মানল আবেগ। ঘণ্টা খানেক পরই পুলে নামলেন রিলে দলের হয়ে। জিতলেন দাপটেই। তাতেই রচিত হলো অলিম্পিক ইতিহাস।
১০০ মিটার ফ্রিস্টাইলের শেষ লেগে রায়ান লচটের হারেই স্বর্ণ জেতা হয়নি ফেলপসের। নিজে ভালো করেও তাকে রৌপ্য নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়। ৪ গুনিতক ২০০ মিটারে তাই পরশু নিজেই নিলেন শেষ লেগের ভার। তাতেই বাজিমাত। ফেলপসরা মোট সময় নেন ৬ মিনিট ৫৯.৭০ সেকেন্ড। ফেলপস ও লচটে ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র রিলে দলের বাকি দুই সদস্য কনোর ডাইয়ার্স ও রিকি বেরেন্স। রেকর্ড পদক জয়ের পর সবার আগে সতীর্থদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ফেলপস, ‘এ বিশেষ মুহূর্তটি যাদের সহযোগিতায় আসল, তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। আমি তাদের বলেছি, বড় একটি ধাপে এগিয়ে থাকতে চাই আমরা। ওরা সেটা দারুণভাবে করেছে। আমি কেবল সেটা ধরে রেখেছি।’ এরপর সতীর্থদের সঙ্গে কী মজা করেছেন, সেই স্মৃতিচারণা করলেন ফেলপস, ‘পদকমঞ্চে যাওয়ার আগে আমি সতীর্থদের বলেছি, তোমাদের সঙ্গে আমি আজ গান গাইব না। কেননা আমি অনেক আবেগাপ্লুত।’
ফেলপসের পদক শিকার এখানেই শেষ হয়ে যায়নি। লন্ডনে আরও তিনটি ইভেন্টে পদক জয়ের সুযোগ রয়েছে তার। এথেন্স অলিম্পিকে ছয়টি স্বর্ণ ও দুটি ব্রোঞ্জ, বেইজিংয়ে আটটি স্বর্ণ এবং লন্ডনে পরশু পর্যন্ত একটি স্বর্ণ ও দুটি রৌপ্য জয় করেন ফেলপস।
এএফপি/বিসিবি