চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে আগের বছরের তুলনায় অনেক কম ব্যাংক ঋণ নিয়েছে সরকার। পাশাপাশি এ সময়ে আগের নেওয়া ঋণের ১ হাজার ২৮২ কোটি ৬১ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যানে এ তথ্য দেওয়া হয়েছে।  
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০১২-১৩ অর্থবছরের প্রথম মাস তথা জুলাইয়ে সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে নেওয়া ঋণের ১ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। অন্যদিকে আলোচ্য সময়ে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ১০৫ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছে। গত অর্থবছরের এ সময়ে সরকার ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নিয়েছিল ১ হাজার ১২২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। অর্থাত্ এক বছর পরে এসে সরকারের ব্যাংক ঋণের প্রবণতা ঋণাত্মক হয়েছে। 
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক পদস্থ কর্মকর্তা বলেন, গত অর্থবছরের শুরুতে আর্থিক খাতে চাপ থাকায় সরকার প্রথম মাস থেকে ব্যাংক ঋণ নেওয়া শুরু করে। কয়েক মাস এ চাপ অব্যাহত থাকায় ঋণ গ্রহণের পরিমাণ বাড়তে থাকে। কিন্তু অর্থবছরের শেষ সময়ে এসে ঋণের প্রবণতা আবার কমতে থাকে। চলতি অর্থবছরের শুরুর দিকে চাপ না থাকলেও নভেম্বর-ডিসেম্বর নাগাদ ব্যাংক ঋণ বাড়বে বলে তিনি মনে করেন। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এবার বৈদেশিক ঋণের ছাড় হয়েছে অর্থবছরের শেষ সময়ে এসে। এ কারণে সরকারের ওপর চাপ কম রয়েছে। সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে কম ঋণ নেয় সরকার।  অর্থবছর শেষে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের নিট ঋণ দাঁড়ায় ২১ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা। ২০১১-১২ অর্থবছরের বাজেটে ১৮ হাজার ৯৫৭ কোটি টাকা ঋণ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। অর্থবছরের মাঝামাঝি সময় থেকে সরকারের ঋণের চাহিদা বেশ বেড়ে যাওয়ায় সংশোধিত বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ২৭ হাজার ৯০০ কোটি টাকা করা হয়। তবে শেষ পর্যন্ত ওই পরিমাণ ঋণ আর নিতে হয়নি। তবে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় সরকারের ঋণ কম হলেও তা আগের যে কোনো বছরের তুলনায় ছিল বেশি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, এর আগে ২০১০-১১ অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকার ১৫ হাজার ৬৮০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। তবে শেষ সময়ে ঋণ চাহিদা বাড়তে থাকায় সংশোধিত বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ১৮ হাজার ৩৭৯ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু বাস্তবে ওই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে অর্থবছর শেষে সরকারের নিট ঋণ দাঁড়ায় ২০ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। গেল অর্থবছর বিদেশি ঋণ প্রাপ্তিতে অনিশ্চয়তা দেখা দেওয়ায় এবারও সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ঋণ নিতে হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছিল। তবে সরকারের কিছু অনুন্নয়ন ব্যয় কমে আসায় আর তা করতে হয়নি।
ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের নেওয়া এসব ঋণের ১৫ হাজার ৯৬১ কোটি টাকা সরবরাহ করতে হয়েছে বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক দিয়েছে ৬ হাজার ২৩ কোটি টাকা। অথচ আগের অর্থবছর কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৯ হাজার ৬৪১ কোটি টাকা দিয়েছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সরাসরি নতুন টাকা ছাপিয়ে ঋণ সরবরাহ করতে হয়, যা মূল্যস্ফীতির ওপর সরাসরি প্রভাব পড়ে। যে কারণে গত বছরের ঋণ সরবরাহের বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থনীতিবিদসহ নানা মহলের সমালোচনার মুখে পড়ে। এবারে কিছুটা কম ঋণ সরবরাহ করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, অর্থবছরের প্রথম মাস শেষে সরকারের ব্যাংক ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৯১ হাজার ৩৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। আগের অর্থবছর শেষে মোট ঋণের স্থিতি ছিল ৭২ হাজার ২১২ কোটি টাকা। এ হিসেবে এক বছরে সরকারের ঋণ বেড়েছে ২১ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা। বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার প্রতি বাজেটেই ঋণ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে থাকে। গত দুটি অর্থবছর অন্যান্য উত্স থেকে তুলনামূলক কম ঋণ পাওয়ায় ব্যাংকিং খাতের ওপর একটু বেশি নির্ভর করতে হচ্ছে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণকাজ শুরু হলে সামনের কয়েকটি বছর এ প্রবণতা আরও বাড়তে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।