মুক্তিযুদ্ধে শহীদ স্বামী ফয়েজুর রহমানের কবরের মাটি ছেলে হুমায়ূন আহমেদের কবরে ছড়িয়ে দিলেন মা আয়েশা ফয়েজ। গতকাল দুপুরে নুহাশ পল্লীতে গিয়ে পরম মমতায় তিনি মাটিগুলো জননন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের সমাধিতে ছড়িয়ে দেন। এর আগে তিনি ছেলের কবর জিয়ারত করেন ও সৃষ্টিকর্তার কাছে
প্রার্থনা করে বলেন-‘আল্লাহ?, হুমায়ূনকে দুনিয়াতে যেমন সম্মান দিয়েছ, আখেরাতেও সে ধরনের সম্মান দিও।’ গত ২৪ জুলাই হুমায়ূন আহমেদকে গাজীপুর সদর উপজেলার পিরুজালী গ্রামে অবস্থিত নুহাশ পল্লীতে কবর দেওয়া হয়। এরপর এটিই ছিল তার মায়ের প্রথম কবর জিয়ারত। কবর জিয়ারতের সময় মা আয়েশা ফয়েজের সঙ্গে ছিলেন তার কনিষ্ঠ ছেলে ‘উন্মাদ’-এর সম্পাদক ও কার্টুনিস্ট আহসান হাবীব, মেয়ে সুফিয়া হায়দার শেফু ও তার স্বামী অপেল হায়দার, মেয়ে রোকসানা আহমেদ মনি, বোন রিজিয়া খানম প্রমুখ। জিয়ারত শেষে পরিবারের সদস্যরা আয়েশা ফয়েজের তত্ত্বাবধানে নুহাশ পল্লীতে দুটি তালি পামগাছের চারা রোপণ করেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুরে আয়েশা ফয়েজ ও তার সঙ্গীরা সমাধিস্থলের সামনে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। সবার চোখেমুখে ছিল শোকের ছাপ। রত্নগর্ভা মা আয়েশা ফয়েজ গিয়েই কেঁদে ফেলেন এবং বারবার কবরের মাটিতে হাত বুলিয়ে দেন। এরপর তিনি মুক্তিযুদ্ধে শহীদ স্বামীর কবরের মাটি সদ্য প্রয়াত সন্তানের কবরে ছড়িয়ে দেন। এ সময় তিনি বিলাপের সুরে বলতে থাকেন-‘আল্লাহ?, হুমায়ূনকে দুনিয়াতে যেমন সম্মান দিয়েছ, আখেরাতেও সে ধরনের সম্মান দিও।’ সবশেষে তিনি প্রয়াত সন্তানের শান্তি কামনায় সমাধিস্থলে কোরান তেলাওয়াত করেন। এ সময় অন্যরা হুমায়ূন আহমেদের কবরে তার বাবার কবরের মাটি ছড়িয়ে দেন। এই মাটি পিরোজপুর থেকে নিয়ে আসা হয়। একাত্তরে পিরোজপুরে পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন হুমায়ূন আহমেদের বাবা ফয়েজুর রহমান। মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করায় স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় বর্বর পাকিস্তানি সৈন্যরা তাকে হত্যা করে।
কবর জিয়ারত শেষে হুমায়ূন আহমেদের মা ও তার পরিবারের সদস্যরা হুমায়ূন আহমেদের সমাধি এবং নুহাশ পল্লীর ‘মা-শিশু’ ভাস্কর্যের পশ্চিমে দুটি তালি পামগাছের চারা রোপণ করেন। পরে বিকেলে তারা ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন।