রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে আবারো সংঘর্ষ হয়েছে। এতে গুরুতর আহত হয়েছেন ২ শিক্ষার্থী।

মতিহার থানার ওসি আনিছুর রহমান জানান, সোমবার রাত তিনটার দিকে সেহেরির সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ জিয়াউর রহমান হলে এ ঘটনা ঘটে।

সংঘর্ষের পর ভোর সাড়ে পাঁচ টার দিকে হলে তল্লাশি চালিয়ে হাসুয়া, হাতুরি, রডসহ কয়েকটি দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ। সংঘর্ষে আহত গ্রন্থাগার বিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র মেহিদী হাসান ও ফলিত রসায়ন দ্বিতীয় বর্ষের তুষার কুমারকে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে ভর্তি করা হলেও পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

শিক্ষার্থীদের বরাত দিয়ে ওসি জানান, কয়েক দিন আগে টেলিভিশন দেখা নিয়ে কথা কাটাকাটি থেকে তুষারের সঙ্গে সমাজকর্ম চতুর্থ বর্ষের ছাত্র হারুন-অর-রশিদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। সে সময় হারুন কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মীকে সঙ্গে নিয়ে তুষারকে মারধর করে।

ওই ঘটনার জের ধরে সোমবার সেহরির সময় ৫/৬ জন ছাত্রলীগ কর্মীকে সঙ্গে নিয়ে তুষার হলের ২২৮ থেকে ২৩৬ পর্যন্ত কক্ষের দড়জা বাইরে থেকে আটকে দিয়ে হারুনের খোঁজে ২৩৪ নম্বর কক্ষে হামলা চালায়। কিন্তু হারুনের বদলে মেহেদী হাসান বেরিয়ে আসলে তাকেই রামদা দিয়ে কোপাতে শুরু করে তুষার। পরে মেহিদী মাটিতে লুটিয়ে পরলে সে পালিয়ে যায়।

পরে হারুনের নেতৃত্বে ১০/১২ জন ছাত্রলীগ কর্মী তুষারকে খুঁজে বের করে লাঠি দিয়ে ব্যপক মারধর করে এবং চাপাতি দিয়ে কোপায়। খবর পেয়ে পুলিশ আহত দুই শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যায়। সেখানে অবস্থার অবনতি ঘটলে ভোরে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

ওসি আনিছুর রহমান বলেন, “ভোরে তল্লাশির পর হলের পরিস্থিতি এখন শান্ত। পুলিশ সতর্ক রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে মামলা করার প্রস্তুতি চলছে।” বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর চৌধুরী মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, “গভীর রাতে অন্য শিক্ষার্থীদের কক্ষে আটকে দিয়ে মারামারি করবে এটা মেনে নেওয়া যায় না। আমরা ২৩৪ ও ২৩৫ নম্বর কক্ষ সিলগালা করে দিয়েছি।”

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আহমেদ আলী বলেন, “এটি একটি অপ্রত্যাশিত ঘটনা। ব্যক্তিগত বিরোধের জের ধরে ওই ঘটনা ঘটেছে। ছাত্রলীগের সঙ্গে এর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।”

এর আগে গত ১৫ জুলাই মধ্যরাতে পদ্মা সেতুর জন্য চাঁদা তোলাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি হলে ছাত্রলীগ কর্মীদের সংঘর্ষে সোহেল রানা নামের এ ছাত্র গুলিবিদ্ধ হন। পরদিন ঢাকায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের সংঘর্ষ ও অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ২৬ শিক্ষার্থীসহ ২৯ জন নিহত হয়েছেন।