শ্রদ্ধা, ভালোবাসা আর অশ্রুতে নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদকে স্মরণ করেছেন শাহ্জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। গতকাল বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগে এই স্মরণসভায় যোগ দেন হুমায়ূন আহমেদের মা আয়েশা ফয়েজ, প্রথম স্ত্রী গুলতেকিন খান, মেয়ে শিলা আহমেদ, বিপাশা আহমেদ, হুমায়ূন আহমেদের তিন বোন, হুমায়ূন আহমেদের খালাসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা। লেখকের ছোট ভাই অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, হুমায়ূন আহমেদ তার সৃষ্টিকর্মের মাধ্যমে কয়েকটি প্রজন্মকে আলোড়িত করেছেন। জাদুকরি লেখনীর শক্তিতে পাঠকদের তিনি মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছিলেন। তিনি ছিলেন স্বপ্নের কারিগর।
অনুষ্ঠানে শাবি উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. সালেহউদ্দিন বলেন, ‘হুমায়ূন আহমেদ চিরদিন মানুষের মধ্যে বেঁচে থাকবেন। বাংলাদেশে এমন কোনো পরিবার নেই, যেখানে হুমায়ূন আহমেদের বই খুঁজে পাওয়া যাবে না।
লেখকের মেয়ে শিলা আহমেদ বলেন, মৃত্যুর পর বাবার প্রতি অসংখ্য মানুষের ভালোবাসা দেখে আমি তার মেয়ে হিসেবে গর্বিত। কথাসহিত্যিক আনিসুল হক বলেন, হুমায়ূন আহমেদ মানুষের স্বপ্ন তার কলমে সাজিয়ে তুলেছেন। পাঠকের জন্য সহজ ভাষায় জীবনের গভীর অনুভূতি তিনি তুলে এনেছেন। তার সৃষ্টিকর্ম মানুষকে স্বপ্ন দেখিয়েছে, হাসিয়েছে, কাঁদিয়েছে। মাত্র ২৪ বছর বয়সে ‘নন্দিত নরকে’ উপন্যাস থেকে শুরু করে তিন যুগ পর্যন্ত তিনি জনপ্রিয়তার চূড়ায় অবস্থান করেছেন, যা বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে বিরল।
প্রিয় ‘দাদা ভাই’ প্রসঙ্গে প্রফেসর ইয়াসমিন হক বলেন, আমেরিকায় পড়াশোনা করতে গিয়ে হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে আমার পরিচয়। তারপর পারিবারিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তিনি স্মৃতিচারণ করে বলেন, ১৯ জুলাই মৃত্যুর সময় আমি তার পাশেই ছিলাম। যখন গুলতেকিন খানকে ফোন করে দাদার ক্রমাবনতির কথা বলেছি, তখন গুলতেকিন কান্নাজড়িত কণ্ঠে আমাকে বলেছে, তুমিই আমেরিকায় হুমায়ূনকে বরণ করেছ, তুমিই তাকে বিদায় দিচ্ছ। এ সময় দর্শক সারিতে বসা গুলতেকিন খান কান্নায় ভেঙে পড়েন। তার সঙ্গে চোখের পানি ফেলেন দুই মেয়ে শিলা এবং বিপাশা আহমেদও। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভৌতবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. ইউনুছের সভাপতিত্বে স্মরণসভায় আরও বক্তব্য রাখেন শাবির কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. ইলিয়াস উদ্দিন বিশ্বাস, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. সুশান্ত কুমার দাস প্রমুখ। স্মরণসভার ফাঁকে ফাঁকে হুমায়ূন আহমেদের লেখা ও পছন্দের গানগুলো পরিবেশন করা হয়। এছাড়া অনুষ্ঠানের মধ্যভাগে সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের স্বাক্ষরিত একটি শোকবই হুমায়ূন আহমেদের মায়ের হাতে তুলে দেওয়া হয়।