আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক বিশিষ্ট নারীনেত্রী ও রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের সহধর্মিণী বেগম আইভি রহমানের অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকী আজ শুক্রবার। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ আয়োজিত সন্ত্রাসবিরোধী মিছিলপূর্ব এক শান্তি সমাবেশে বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত হন তিনি। সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ৪ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে ২৪ আগস্ট এই মহীয়সী নারীনেত্রী শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
এই হামলায় আইভি রহমানসহ ২৪ জন নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অসংখ্য আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী, সমর্থক ও সাধারণ মানুষ। তারা অনেকেই গ্রেনেডের স্পিস্নন্টারের দুর্বিষহ যন্ত্রণা নিয়ে আজো বেঁচে আছেন। হাত-পা-চোখসহ বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ হারিয়ে বহু নেতাকর্মী পঙ্গুত্ব বরণ করে দুঃসহ জীবন কাটাচ্ছেন।
প্রতিবারের মতো এবারো শহীদ আইভি রহমানের মৃত্যুবাষির্কী উপলক্ষে আজ সকাল সাড়ে ১০টায় বনানী কবরস্থানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা সাধারণ জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তার কবর জিয়ারত, শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন, মিলাদ ও মোনাজাতের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এ ছাড়াও রাষ্ট্রপতি আয়োজিত বঙ্গভবনে মিলাদ মাহফিলে আওয়ামী লীগের নেতারা অংশগ্রহণ করবেন। রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুুর রহমান সকাল সাড়ে ১০টায় বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টে নিহত শহীদ জাতীয় নেতা ও আইভি রহমানের কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বনানী কবরস্থানে আওয়ামী লীগ আয়োজিত কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকার জন্য কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সকল স্তরের নেতাকর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে ভৈরব প্রতিনিধি জানিয়েছেন, আইভি রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ভৈরব উপজেলা আওয়ামী লীগ ও তার পরিবারের সদস্যরা নানা কর্মসূচি নিয়েছেন। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকালে দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিত করা এবং কালো পতাকা উত্তোলন, কালো ব্যাজ ধারণ, সকাল ৮টায় নেত্রীর প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, সকাল ১০টায় শোক র্যালি। র্যালি শেষে মিলাদ মাহফিল। বাদ জোহর মসজিদে মসজিদে বিশেষ মোনাজাত। বিকালে শোকসভা এবং তার নিজ বাড়ি আইভি ভবনে দিনব্যাপী কোরআন খানি ও বাদ আসর মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
আইভি রহমান ১৯৪৪ সালের ৭ জুলাই ভৈরবের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫৮ সালে নবম শ্রেণীতে অধ্যয়নকালে রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তার বাবা জালাল উদ্দিন আহমেদ ছিলেন ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ। মা হাসিনা বেগম একজন গৃহিণী। ৮ বোন, ৪ ভাইয়ের মধ্যে আইভি ছিলেন ৫ম। তিনি এক ছেলে পাপন, দুই মেয়ে তানিয়া ও ময়নার মা।
তিনি ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত মহিলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে ভারত গিয়ে ট্রেনিং নেন। ১৯৭৮ সালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদে মহিলাবিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৮০ সালে কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন।
রাজনীতি ছাড়াও তিনি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকা-ে নিজেকে জড়িত রেখেছিলেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি মহিলা সমিতির সভানেত্রী ও জাতীয় অন্ধ কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত মহিলা সংস্থা এবং জাতীয় মহিলা সমিতির চেয়ারম্যান ছিলেন।