অনেকেই ভাবেন হূদরোগীদের জন্য আবার কিসের ব্যায়াম। যেখানে চলাফেরায় এত নিষেধাজ্ঞা সেখানে ব্যায়াম করব কীভাবে! আসলে এই ধারণা পুরোপুরি সত্য নয়। হূদরোগীদের অনেক বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তার জন্য ব্যায়ামেরও দরকার আছে। ১৯৯৩ সালের এলাইড ডানবার ন্যাশনাল ফিটনেসের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে শতকরা ৭০ ভাগ পুরুষ ও ৮০ ভাগ নারী তাদের বয়সভিত্তিক কর্মক্ষমতার নিচে অবস্থান করেছেন এবং এ কারণে এদের মধ্যে করোনারি হূদরোগে মৃত্যুর হারও বেশি। শুধু মাঝারি মাত্রায় এক মাইল হাঁটলে শতকরা ৫০ ভাগ পুরুষ ও মহিলা বয়সভিত্তিক কর্মক্ষমতার পর্যায়ে চলে আসতে পারেন এবং এতে কমে যায় করোনারি হূদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও।
হাঁটুন
হূদরোগীদের জন্য হাঁটা সবচেয়ে ভালো ও আদর্শ ব্যায়াম। দৈহিক দিক থেকে বিবেচনা করলে দ্রুত হাঁটার মাধ্যমে শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ব্যায়াম হয় এবং এতে আহত হওয়ার আশঙ্কা থাকে না। এমনকি অসুস্থ ব্যক্তিও স্বল্প সময়ের জন্য মুক্ত বাতাসে হেঁটে উপকৃত হতে পারেন। আপনার ইচ্ছানুযায়ী যখন-তখন হাঁটতে পারেন। তবে ভোরবেলায় হাঁটার সুবিধা আছে। এ সময়ের মুক্ত বাতাস শরীর এবং হূিপণ্ডের জন্য খুব ভালো।
কতক্ষণ, কীভাবে হাঁটবেন?
হাঁটাকে শরীরের উপকারে লাগাতে হলে দুটি বিষয় বিবেচনায় আনতে হবে-গতি এবং দূরত্ব। যখন আপনি সত্যিকার অর্থে হাঁটা শুরু করবেন, তখন ধীরেসুস্থে অলসভাবে বা পা টেনে হাঁটবেন না। এমনভাবে হাঁটবেন যেন আপনার নাড়ির গতি বেড়ে যায় এবং ফুসফুসকে বেশি কাজ করতে হয়। হাঁটার সময় মাথা ও পিঠ সোজা এবং পেট চেপে হাঁটুন। এমনভাবে হাঁটবেন যেন গোড়ালি আগে মাটি স্পর্শ করে এবং হাত দুটো যেন দু’পাশে দুলতে থাকে। লম্বা পা ফেলে হাঁটুন, তবে হাঁটা যেন কিছুতেই বেশি পীড়াদায়ক না হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। একজন হূদরোগী কমপক্ষে ২০ মিনিট এবং সর্বোচ্চ ৬০ মিনিটের বেশি হাঁটবেন না। যদি হাঁটা বেশি পীড়াদায়ক হয়, সময় কমিয়ে দিন আর একদম ক্লান্ত না লাগলে সময় বাড়িয়ে দিন। সপ্তাহে কমপক্ষে ৩ দিন হাঁটুন, তবে ৪, ৫ বা ৬ দিন হাঁঁটতে পারলে আরও ভালো। হাঁটার মাত্রা বেড়ে গেলে ধীরে ধীরে গতি ও দূরত্ব বাড়িয়ে দিন। অ্যারোবিকস ব্যায়ামের সময় কষ্ট করে শ্বাস নিতে হয় এবং হূদস্পন্দন বেড়ে যায়। হূদরোগীদের জন্য বেশি পরিশ্রান্ত হওয়া বা হূদস্পন্দন বেড়ে যাওয়াও খারাপ। যদি বেশি বুক ধড়ফড় করে, ঘুম ঘুম বা অচেতন হওয়া বোধ হয় বা খুব বেশি ঘাম হয় তাহলে ব্যায়াম বন্ধ করে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। যদি বেশি অবসাদগ্রস্ত লাগে বা ব্যায়ামের অনেকক্ষণ পরও মাংসপেশি ব্যথা করে তখন বুঝতে হবে, বেশি ব্যায়াম করা হয়েছে।
হূদরোগ বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ব্যায়াম করলে যদি বুকব্যথা করে, শ্বাস নিতে কষ্ট হয় বা অবসন্নতা দীর্ঘক্ষণ ধরে থাকে, তবে বুঝতে হবে বেশি করে ব্যায়াম করা হয়ে গেছে এবং এর মাত্রা কমাতে হবে। ব্যায়াম করার আগের চেয়ে ব্যায়াম শেষ হওয়ার ৫ মিনিট পর শরীর ভালো লাগা উচিত। হূদরোগীদের মধ্যে যারা নিয়মিত ব্যায়াম না করে সপ্তাহে দুয়েক দিন করে করেন তাদের জন্য বিষয়টি ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। যাদের হূিপণ্ডের অবস্থা ভালো নয় বা রক্তবাহী ধমনিগুলো যথেষ্ট প্রশস্ত নয়, তাদের জন্য জগিং করা নিরাপদ নয় এবং জগিং করার প্রয়োজনও নেই। নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস করেই তারা হূদযন্ত্রের উন্নতি করতে পারেন। হাঁটা বা জগিং সম্ভব না হলে সাঁতার বা সাইকেল চালানো যেতে পারে। কারণ এগুলো হাঁটার মতোই উপকারী। তবে সাঁতারে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। কারণ সাঁতার কাটতে গিয়ে হঠাত্ বুকে ব্যথা উঠলে সাঁতার বন্ধ করে ফিরে আসা যায় না। তাই যারা স্বল্পমাত্রার হূদরোগে ভুগছেন তাদের জন্য সাঁতার ভালো।